শনিবার   ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ২৮ ১৪৩২   ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

সর্বশেষ:
যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরে ভারতীয় শিক্ষার্থীর হাত-পা বাঁধার ভিডিও অস্ট্রিয়ায় স্কুলে সন্ত্রাসী হামলায় ৭ শিক্ষার্থীসহ নিহত ৯ যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরে ভারতীয় শিক্ষার্থীর হাত-পা বাঁধার ভিডিও রুশ-যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় দফা আলোচনা শীঘ্রই যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল গার্ড কী, কখন মোতায়েন করা হয়? যুক্তরাষ্ট্রের টিকা কমিটির সবাইকে বরখাস্ত করলেন কেনেডি ফ্রান্সগামী উড়োজাহাজে চড়ে ইসরাইল ছাড়লেন গ্রেটা থুনবার্গ না ফেরার দেশে চিত্রনায়িকা তানিন সুবাহ সিঙ্গাপুরের ঘাম ঝরিয়েও হার বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ মার্কিন যুদ্ধবিমানের ওপর উপসাগরীয় দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে মার্কিন কংগ্রেসে বিল উত্থাপন ইরান-ইয়েমেনের কাছাকাছি পারমাণবিক বোমারু বিমান মোতায়েন কফিতে মশগুল ব্রিটেনে পলাতক সাবেক মন্ত্রীরা! নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধে বাংলাদেশের ভুল চিত্র তুলে ধরেছে ভূমিকম্পে ১৭০ প্রিয়জন হারালেন এক ইমাম ইসরায়েলি হামলায় আরও ৪২ ফিলিস্তিনি নিহত ট্রাম্প কি আসলেই তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন লিবিয়ায় অপহৃত ২৩ বাংলাদেশি উদ্ধার দুদিনে নিহত ১৩, চট্টগ্রামের জাঙ্গালিয়া যেভাবে মরণফাঁদ হয়ে উঠলো বাংলাদেশের অর্থপাচার তদন্তে ব্রিটিশ এমপিদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা ভেনিজুয়েলার তেল-গ্যাস কিনলেই শুল্কারোপের হুমকি ট্রাম্পের সাভারে চলন্ত বাসে আবার ডাকাতি, চালক ও সহকারী আটক ছুটিতে এটিএম সেবা সবসময় চালু রাখার নির্দেশ উসকানিতে প্রভাবিত না হতে বললেন সেনাপ্রধান রেড ফ্ল্যাগ সতর্কতার আওতায় ২৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ এনসিপি নেতা হান্নানের পথসভায় হামলা, আহত ‘অর্ধশতাধিক’ নির্বাচনী ট্রেনে বাংলাদেশ বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্র্রঙ্কসের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত সাবওয়ে ট্রেনে সন্তান প্রসব নিউইয়র্কে আইস পুলিশের বিশাল অফিস উদ্বোধন মেয়রের মামলা প্রত্যাহারে প্রসিকিউটরের পদত্যাগ হাসিনা নিজেই হত্যার নির্দেশদাতা জন্ম নাগরিকত্ব বাতিল আদেশ আটকে দিল আদালতে নিউইয়র্কে ডিমের ডজন ১২ ডলার নিউইয়র্কে ভালোবাসা দিবস উৎযাপন আমেরিকান বাংলাদেশী টেক কোয়ালিশন’র আত্মপ্রকাশ জামালপুর সমিতির সভাপতি সিদ্দিক ও সম্পাদক জাস্টিস শেখ হাসিনার আমলে বছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বাংলাদেশিদের অস্ত্রোপচার বাতিলে কলকাতাজুড়ে হাসপাতালে হাহাকার দি‌ল্লি যাওয়া ছাড়াই পাওয়া যাবে মে‌ক্সি‌কান ভিসা বাজার থেকে উধাও বোতলজাত সয়াবিন কেউ আপনার স্ত্রীকে ‘হট’ বললে সেটা কি ভালো লাগে, প্রশ্ন সানার পাচারের ১৭ লাখ কোটি ফেরাবে কে এবাদুলের মিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হংকং-দুবাইয়ে পাচারকারীরা বেপরোয়া ছিল শেখ পরিবারের প্রশ্রয়ে সোনার দাম দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য কতটুকু সত্য? দিনে মাত্র একবেলা খাচ্ছে গাজার অনেক মানুষ পছন্দের লোক নিয়োগ দিতে বদলে দেয়া হয় মেট্রোরেলের নিয়োগবিধি যানজটের কারণে নষ্ট হচ্ছে দৈনিক ১৩৯ কোটি টাকা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নজর চার খাতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে বড় পতন হাথুরুসিংহের অপকর্ম ধামাচাপা দেন পাপন ‘ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ আমেরিকার জন্য বিশাল হুমকি হবে’ নীরবে সরবে চাঁদাবাজি পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ ইন্টারনেট ছাড়াই গুগল ম্যাপ ব্যবহারের উপায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ বাইডেনের ভাড়া ফাঁকিবাজদের ধরতে চলছে সাঁড়াশি অভিযান সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরীকে গুলি করে মরদেহ নিয়ে গেল বিএসএফ ভিসা ফি ছাড়াই এবার পাকিস্তান যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাফি আটক সাবেক আইজিপি বেনজীরের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ব্যয়বহুল সফরে ২৬ ব্যাংক এমডি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ সাবেক সেনাপ্রধান ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা দিনের বেলায় মরুভূমির চেয়েও উত্তপ্ত চাঁদ ডেঙ্গুতে একদিনে ১১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৩২৭ ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠির সত্যতা চ্যালেঞ্জ করে ২৬৭ প্রবাসী বাংলাদেশি অক্টোবরের মধ্যেই ‘আন্দোলনের ফসল’ ঘরে তুলতে চায় বিএনপি শর্তসাপেক্ষে নিউইয়র্কে মসজিদে আজানের অনুমতি বাংলাদেশ থেকে বিনা খরচে মালয়েশিয়া গেলেন ৩১ কর্মী খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর নির্দেশ জার্মানে পাঁচ বছর বাস করলেই পাওয়া যাবে নাগরিকত্ব বিএনপি-জাপা বৈঠক সিঙ্গাপুরে বাইডেন প্রশাসনকে হাসিনার কড়া বার্তা এবার হাসিনার পাশে রাশিয়া বঙ্গ সম্মেলনের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক ঘটনা স্টুডেন্ট লোন মওকুফ প্রস্তাব বাতিল বাংলাদেশিদের ওপর উপর্যুপরি হামলা যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আগে নিজ দেশে মানবাধিকার রক্ষা করা: শেখ হাসিনা তামিমের অবসর অভিযোগের তীর পাপনের দিকে নিউইয়র্কে এখন চোরের উপদ্রুব যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৭তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে হাতিরঝিলের ক্ষতি হবেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধবিরতি, পাঁচ দিনে নিহত ৩৫ যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটছে বাখমুত থেকে পিছু হটেছে সেনারা, স্বীকার করল রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণ ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সুপার সাইক্লোন হবে না, দাবি আবহাওয়া অধিদপ্তরের সুদানে যুদ্ধে সাড়ে ৪ লাখ শিশু বাস্তুচ্যুত : জাতিসংঘ পারস্য উপসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় খেলাপি ঋণে দ্বিতীয় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে সারা দেশে ভোগান্তি রুশ হামলা সামলে ফের বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে যাচ্ছে ইউক্রেন রিজার্ভ সংকট, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারের দুর্বল নীতিও দায়ী পূজার ‘জিন’ একা দেখতে পারলেই মিলবে লাখ টাকা! সিরিয়ায় আর্টিলারি হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল বাইডেন না দাঁড়ালে প্রার্থী হবেন কে নাইজেরিয়ায় ৭৪ জনকে গুলি করে হত্যা ভারতে বাড়ছে করোনা, বিধিনিষেধ জারি তিন রাজ্যে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন লুলা যে কোনো দিন খুলবে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল দেশে করোনার নতুন ধরন, সতর্কতা বিএনপির সব পদ থেকে বহিষ্কার আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করবো: মাহিয়া মাহি মর্মান্তিক, মেয়েটিকে ১২ কিলোমিটার টেনে নিয়ে গেল ঘাতক গাড়ি! স্ট্যামফোর্ড-আশাসহ ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বর্ষবরণে বায়ু-শব্দদূষণ জনস্বাস্থ্যে ধাক্কা কোনো ভুল মানুষকে পাশে রাখতে চাই না বাসস্থানের চরম সংকটে নিউইয়র্কবাসী ট্রাকসেল লাইনে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত একাকার! ছুটি ৬ মাসের বেশি হলে কুয়েতের ভিসা বাতিল ১০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত চুক্তিতে বিয়ে করে ইউরোপে পাড়ি আইফোন ১৪ প্রোর ক্যামেরায় নতুন দুই সমস্যা পায়ের কিছু অংশ কাটা হলো গায়ক আকবরের ১৫ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১০০ কোটি ডলার নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে আবার বাড়লো স্বর্ণের দাম
১২

গ্রেফতারের আগে খালেদাকে নিয়ে শওকত মাহমুদ

প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫  


  

 
দেশনত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি। তার জন্য আমাদের বুকফাটা প্রার্থনা- ‘হে মহান আল্লাহ। আপনার রহমতপ্রাপ্ত এ মানুষটাকে বাংলাদেশের জন্য মজলুমদের জন্য আরও আয়ু দিন। সুস্থতা দিন।’ যিনি ৫৪ বছরের বাংলাদেশে ৪৩ বছর ধরে রাষ্ট্ররাজনীতির শীর্ষ ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রবাহমান। জীবনজুড়ে যন্ত্রণা আর বে-ইনসাফির শিকার।

হাসপাতালের বেডে কখনো তিনি জ্ঞানে ফিরছেন, কখনো না। এ মুহূর্তে যতখানি তার মনশ্চক্ষে ভাসে-কী ভাবছেন তিনি? স্বামী, সংসার, সন্তান, শহীদ মঈনুল রোড বা ফিরোজার স্মৃতিময় মুহূর্ত বা বিএনপি? যারা খালেদা জিয়াকে জানেন ও বুঝেন, যারা তার সংগ্রামী জীবনাদর্শকে ‘নিবিড় পাঠ’ করতে চান, তারা একবাক্যে বলবেন-এখনো তিনি আল্লাহকে বলছেন বাংলাদেশের মুক্তির কথা, জনগণের অধিকারের কথা।
মারাঠি কবি শরণ কুমার লিম্বালির কয়েকটি উচ্চারণ এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। চাই না আমি তোমাদের আকাশ থেকে সূর্য আর চাঁদ/ তোমাদের জমিজমা, ক্ষেতখামার/ তোমাদের প্রাসাদগুলি/ বা এমনকি যে ভালোবাসা তোমরা পাও/ মা বোন মেয়ের কাছ থেকে/ চাই না তা-ও/ আমি শুধু চাই মানুষের অধিকার।

ইতিহাসের চাল-চলন নিয়ত সত্যমুখী। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘কোনও ইতিহাস স্বত্বের ইতিহাস নহে, তাহা সত্যের ইতিহাস।’ যে মহান সত্য নানা আঘাত-সংঘাতের মধ্য দিয়া পরিপূর্ণ হইয়া উঠিতেছে, এক নেতার এক কন্যার মালিকানায় যে গড়াপেটার ইতিহাস, যে মিথ্যাটি তৈরি করতে চেয়েছিল দেহে-মনে ফ্যাসিবাদমাখা স্বৈরাচার, তাকে উড়িয়ে দিয়েছেন বেগম জিয়া। এটাই সত্য। পেয়েছেন মানুষের ভালোবাসা। আওয়ামী বজ্রপাতে মানুষের ভরসাস্থল ছিলেন তিনি। বজ্রপাতে জনমত বোঝা যায় না। আসল জনমত হচ্ছে ভোরের শিশিরের মতো, নীরবে-নিঃশব্দে প্রতিটি বর্গইঞ্চি তৃণমূলকে ছেয়ে ফেলে। সত্যের উপলব্ধি সেখানেই। এজন্য বেগম জিয়াকে বারবার জেলে যেতে হয়েছে। একদিকে স্লো-পয়জনিং অন্যদিকে চিকিৎসা না দিয়ে খুনি হাসিনা তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছে। পারেনি।

এ অবিচল সত্যকে কে অস্বীকার করবেন, ৪৩ বছর ধরে দেশনেত্রী বাংলাদেশের রাজনীতিতে সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা নিয়ে বিরাজমান। সবচেয়ে বেশি আসনে নির্বাচিত হওয়ার কৃতিত্ব তারই। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। রাস্তায় নামলেই লাখো মানুষের ঢল। হাসপাতালে গেলে চারদিকে মোনাজাতে মগ্ন হাজারো জনতা। বাংলাদেশের জনম যুদ্ধ থেকে শুরু করে তীক্ষèতর নৈতিকতায় গণতন্ত্রের সাধনা, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই, বারবার বন্দিত্ব, রাজনীতি ও সংসারের দ্বন্দ্বের মধ্যেও মানুষের অধিকারের জন্য এমন অবিচল থাকার দৃষ্টান্ত আর কোনো নেতানেত্রীর নেই।

আমার সীমিত জ্ঞানে সমসাময়িক বিশ্ব ইতিহাসে এমন সংগ্রামী, কারা নির্যাতিত, রাষ্ট্র পরিচালনায় সফল রাজনীতিক কমই আছেন। আর ইন্দিরা গান্ধী, বন্দরনায়েক, চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গে, বেনজির ভুট্টো, কোরাজন আকিনো, অং সান সু চির মতো নারীনেত্রীদের প্রসঙ্গে আসুন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মতো বারবার লড়াইয়ে ফিরে আসা, আল্লাহর রহমত ও জনগণের ভালোবাসায় টিকে থাকা, নৈতিকতায় অভিনিবেশী এবং গণতন্ত্রমনা এ নেত্রী অন্যদের তুল্যদণ্ডে অনেক ওপরে।

কজন নেতার মুকুটে ওই মরকত মণি আছে, যিনি নব্বইয়ে একটি সফল গণঅভ্যুত্থান পরিচালনা করেছেন, চব্বিশের বিপ্লবে মূল প্রেরণাদায়ী ছিলেন। দেশকে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরিয়ে আনার কৃতিত্ব তারই। দুটি সামরিক শাসনকে হটানোর রেকর্ড আর কোনো নেতার আছে কি? স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের লড়াইয়ের প্রতিটি পর্বকেই তিনি সম্ভ্রম ও সমীহযোগ্য করে তুলেছেন। সে এক অনন্য অর্জন।

তার স্বামী স্বাধীনতার মহান ঘোষক এবং হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ করা মেজর জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী হিসেবে তাকে পাকিস্তানি ক্যান্টনমেন্টে জেল খাটতে হয়েছে। স্বামী যুদ্ধে গেছেন, পরিবারের সঙ্গে দেখা করে যাননি। কিন্তু তাতে কি, তিনি সন্তানদের নিয়ে নীরবে চলে গেছেন। তারপর ধরা পড়লেন। তিনি জানতেন- জিয়ার ওপর দেশ রক্ষা, স্বাধীন করার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পড়েছে। কবি নজরুলের ভাষায়, ‘অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া জানে না সন্তরণ কাণ্ডারী আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পণ।’ তার সেই বন্দিত্ব আমরা আবার দেখি ৭৫-এর ৩ থেকে ৭ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের ক্যুর পর। আন্তর্জাতিক চক্রান্তে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া নিহত হলে সংসার ও রাজনীতির দায়িত্ব নিয়েছেন চ্যালেঞ্জ হিসেবে।

খালেদা জিয়ার সবচেয়ে বড় গুণ তিনি মধ্যপন্থি রাজনীতিক। তিনি কোনো গিবত করেন না। প্রচণ্ড প্রতিপক্ষ শেখ হাসিনার নামই মুখে নেন না, বকাবাদ্য তো দূরের কথা। ২০০৮-এর নির্বাচনের সময় জাতির উদ্দেশে ভাষণের এক অংশে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘মানুষ হিসেবে আমি ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে ছিলাম না। ব্যর্থতার গ্লানিও আমাকে অনেক সময় স্পর্শ করেছে, কিন্তু যে সীমাহীন কুৎসা এবং অপপ্রচারের শিকার আমাকে হতে হচ্ছে, সেটা কি আমার প্রাপ্য? আপনারা দেখেছেন, অপপ্রচারে পথ ধরেই আমাকে আপনাদের কাছ থেকে মাইনাস করার, বিদেশে নির্বাসনে পাঠানোর অপচেষ্টা হয়েছে। এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে আমাকে বিনা অপরাধে ছয় মাস গৃহবন্দি ও এক বছর নির্জন কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে। আমি আমার মায়ের মৃত্যুর সময়ও তার পাশে থাকতে পারিনি। গুরুতর অসুস্থ সন্তানদেরও দেখতে দেওয়া হয়নি। তারপরও যতদিন বাঁচি, আপনাদের মাঝেই থাকব। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশই আমার একমাত্র ও শেষ ঠিকানা।’

পবিত্র কোরআনে সুরা নিসার ১৪৮ আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন, ‘প্রকাশ্যে কারও দোষ চর্চাকে আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে কারও প্রতি জুলুম হয়ে থাকলে আলাদা কথা। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু জানেন।’ অর্থাৎ, খালেদা জিয়ার অধিকার ছিল জালেমদের গালাগাল করার। কিন্তু তিনি শুনলেন সুরা মায়িদাতে আল্লাহর সুস্পষ্ট বাণী-প্রতিপক্ষের প্রতি শত্রুতা তোমাদের যেন সীমা লঙ্ঘন করতে প্ররোচিত না করে। সভ্যতার সীমারেখা মেনেই চলেছেন বেগম জিয়া।

প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী যে পদেই থাকুন বা না থাকুক, খালেদা জিয়া রাজনীতি কেন্দ্রবিন্দুতে সর্বদাই। তার গণতান্ত্রিক ঔদার্যকে উপহাস করা হোক, তাকে নিয়ে গিবত, কটুকাটব্য যতই বর্ষিত হোক, তাকে ঘরছাড়া করা হোক বা বাড়ি কিংবা অফিসে অন্তরীণ রাখা হোক, তার ওপর মরিচের গুঁড়া স্প্রে করা হোক, তার গাড়িতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা করুন, তার পথের দুপাশে উদ্বেলিত জনতাকে পুলিশ পেটাতে থাকুক, তার ফেরিতে গুলি করা হোক, লং মার্চে বাধা দেওয়া হোক, বেগম জিয়া অবিচল আছেন। মামলার তারিখ যত দ্রুত দেওয়া হোক, তিনি হাসিমুখে আদালতে গেছেন, জেলে গেছেন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা অনিবার্য প্রধানমন্ত্রী-এমন ধারণায় ইতিহাসকে যখন সাব্যস্ত করা হচ্ছিল, অলক্ষ্যেই সেই শিশিরভেজা সত্যটি দৃশ্যমান হলো। নাহ! আন্দোলনের সাচ্চা নেত্রী খালেদা জিয়াই প্রধানমন্ত্রী, তার হাতে গড়া নতুন বিএনপিই সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। বেগম জিয়ার গণতন্ত্রবোধ পরিমাপে একটি দৃষ্টান্ত অবশ্য উল্লেখ্য। ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন হওয়ার বিধান ছিল ওয়ার্ড কমিশনারদের ভোটে। এতে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী জেতে। কিন্তু তিনি মেয়র পদকে জনগণের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত হওয়ার বিধান করলেন আর সংবিধানের প্রতি আনুগত্য? তিন জোটের রূপরেখা অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টির তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার যুগপৎ আন্দোলন ছিল নব্বইয়ের দশকে একটি অসাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। সংসদ থেকে আগেই পদত্যাগ করে ওইসব দল বেগম জিয়াকে এই বিপদে ফেলতে চেয়েছিল যে, তিনি ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেন সংসদে এ-সংক্রান্ত বিল পাস করাতে না পারেন। তিনি যেন কোনো সংবিধানসম্মত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে না পারেন। পর্দার অন্তরালে ওই অশুভ আঁতাত সামরিক অভ্যুত্থানের প্ররোচনাই দিচ্ছিল। এটা হতো বেগম জিয়ার সারা জীবনের জন্য কলঙ্ক। কিন্তু তিনি শুধু সংবিধান সংশোধনের নিমিত্তে ১৯৯৬-তে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন দিলেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে এই চক্রান্ত নস্যাৎ করলেন। জেনারেল নাসিমের ক্যু হয়েও হতে পারল না। রাজনীতির নীতিনৈতিকতা খালেদা জিয়া জীবনজুড়ে মেনে চলেছেন। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে যাননি। ১৯৮৬, ১৯৮৮, ২০১৪ এবং ২০২৪-এর উদাহরণ। অর্থাৎ, ৪৩ বছরের রাজনীতিতে ১৯টি বছর তিনি ভোটে যাননি। কারণ, দেশের মানুষ স্বেচ্ছায় ভোট দেওয়ার অধিকারবঞ্চিত। কী বিবেকি সংকল্প? ২০১৮ সালে বিএনপি তাকে জিজ্ঞেস না করে ভোটে গিয়েছিল বলে তিনি আক্ষেপ করেছেন।

শুধুই কি গণতন্ত্রের সংগ্রামের জন্য খালেদা জিয়া চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন? তার দেশ পরিচালনাকালে আইনের শাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সর্বত্র প্রশংসিত। ঢাকা থেকে সব মহাসড়ক দিয়ে এখন বাইরে গেলে দুই পাশে আজ যে শুধু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পস্থাপনার সম্ভার, তা তার আমলেই। ক্ষুদ্রঋণের ব্যাপকতার দরুন দশ গ্রাম মিলে সাপ্তাহিক হাটের বদলে প্রত্যেক গ্রামে আজ বাজার বসে, টাকা দিয়ে লেনদেন হয়। নারীরা ক্ষুদ্রঋণে স্বাবলম্বী-এটা তার সাফল্য। খাদ্যে, মাছে স্বয়ম্ভরতা, নারী শিক্ষার বিপ্লব, রপ্তানির সমৃদ্ধি, সবচেয়ে বড় কথা ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৭০ হাজার কোটি টাকার মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৬.৭-এ পৌঁছার অবিশ্বাস্য কাহিনির নির্মাতা খালেদা জিয়াই। আজকের স্বৈরাচারের মতো গণতন্ত্র হত্যা করে উন্নয়নের যজ্ঞে তিনি মাতেননি। এই উন্নয়ন হচ্ছে দুর্নীতি-তাড়িত। খালেদা জিয়া গণতন্ত্র অর্থাৎ, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে উন্নয়ন করেছেন। নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের ভাষায় যা (ভৎববফড়স ড়ৎরহঃবফ ফবাবষড়ঢ়সবহঃ) অধিকারভিত্তিক সমৃদ্ধি।

২০০৭ থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্ত তার কেটেছে বাংলাদেশ ও তার গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায়। সাধারণ মানুষ, দলের নেতাকর্মীর জন্য তার সহানুভূতি ফুরায় না। অপার তার নিজস্ব মনোবেদনা। পারিবারিকভাবে নিঃসঙ্গ ছিলেন। এক-এগারোর সময় জেলে ছিলেন, মৃত্যুশয্যায় মাকে দেখতে পারেননি। দুই ছেলেকে জেলে নির্যাতন করা হচ্ছে। তারেক রহমানকে মেরে ফেলতে চাইছিল এক-এগারোর বর্বরকুল। কী বিভীষিকার দিনগুলো ছিল তখন! রাজনীতি থেকে বিয়োগ করার জন্য কী চাপ, বিদেশে জোর করে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু খালেদা জিয়া খালেদা জিয়াই। দেশ ছেড়ে, দেশের জনগণকে ছেড়ে তিনি বিদেশে গেলেনই না। তারেক রহমান মুক্তি পেয়ে যেদিন পিজি হাসপাতালে, কী অঝোর কান্নায় জড়িয়ে ধরেছিলেন সন্তানকে! মানুষ দেশনেত্রীর সেই কান্নায় কেঁদেছিল। তারেক রহমানকে দুর্নীতির খলনায়ক বানানোর হাজারো অপচেষ্টা বিফলে গেছে। তিনি দেশে আসতে পারেন না। আরাফাত রহমান কোকো ফিরে এসেছিলেন, কিন্তু লাশ হয়ে। সরকারের নির্যাতনে কষ্টে কষ্টে ওই প্রাণবন্ত তরুণটি মরে গেল। জানাজায় লাখ লাখ মুসল্লি অশ্রুভেজা চোখে তাতে অংশ নিল।

অবাক করার বিষয় হচ্ছে, ক্রসফায়ারে নিহত ও গুমে নিখোঁজ স্বজনরা এবং নানা নির্যাতনে ক্লিষ্ট মানুষরা যখন বেগম জিয়ার সান্নিধ্যে যান, তখন তিনি এমনভাবে সান্ত্বনা দেন, যেন তার কোনো নিজস্ব বেদনা নেই। তারা আশ্চর্য হয়ে যান এই নারীর অসম্ভব মনের জোর দেখে। জীবনভর সংগ্রামই করে চলেছেন, তবু মাথা নোয়াবার নয়। রাষ্ট্রপ্রধান, সেনাপ্রধানের স্ত্রী হিসেবে সংসারে নিভৃতে ছিলেন। জিয়া যেমনিভাবে দরখাস্ত করে ক্ষমতার মঞ্চে আসেননি, তেমনি খালেদা জিয়াও বিএনপির চেয়ারপারসন স্বেচ্ছায় হননি। দল ও জনগণের অনুরোধে ওই দায়িত্ব নিয়ে কী সংগ্রামী জীবনকেই না বেছে নিয়েছেন। সর্বশক্তিমান আল্লাহর রহমত তার প্রতি আছে। নইলে এমন রাজনৈতিক নেতা কে আছেন, যার প্রতি নির্যাতনের কুঠারাঘাত প্রতিনিয়ত বর্ষিত হয়েছে। তার দৃঢ় নেতৃত্বে বিএনপি আজ দেশের বৃহত্তম দল। দেশের দায়িত্ব নেওয়ার অপেক্ষায়।

খালেদা জিয়ার মতো অসামান্য রাজনৈতিক নেত্রীর পক্ষেই মানুষকে এমন সভ্য স্বপ্ন দেখানো সম্ভব, যখন তিনি বলেন, ‘শরতের আকাশে সাতটি রঙের বিচিত্র প্রভাব নিয়ে রংধনু যেভাবে মনোরম সৌন্দরে‌্যর বিচ্ছুরণ ঘটায়, আমরা চাই সকল মত ও পথকে নিয়ে এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি লালন ও পরিপুষ্ট করতে, যে সংস্কৃতি বাংলাদেশকে একটি রংধনু জাতিতে (জধরহভড়ি ঘধঃরড়হ) পরিণত করবে। প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে ও ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। এজন্য নতুন এক সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছতে বিএনপি সচেষ্ট হবে (ভিশন-২০৩০)। এই ৩১ দফা সংস্কারের ভিত্তি।

আমি আগেই বলেছি, গণতন্ত্রের স্বার্থেই খালেদা জিয়া সম্পর্কে ‘নিবিড় পাঠ’ প্রয়োজন। নিবিড় পাঠ মানে ভূ-প্রোথিত কোনো বিরল প্রত্মসম্পদের উত্তোলন নয়। তার জীবনপ্রণালি, জীবনদর্শন, প্রজ্ঞা, মর্জি, দূরদর্শিতা, জীবনের প্রতি কৌতূহলের মাত্রা, আপন সমকালকে স্পর্শ করতে পারার ধীশক্তি-সেসবেরই ধ্যানমগ্ন পর্যালোচনা।

খালেদা জিয়া বেঁচে আছেন, থাকবেনও। তার সর্বশেষ অবদান, দেশের জন্য তিনি উত্তরাধিকার যৌক্তিকভাবেই সাব্যস্ত করেছেন। সন্তান তারেক রহমানকে তিনি রাষ্ট্ররাজনীতির পরিমণ্ডলে জুতসই করে উপস্থাপন করেছেন। নানা আঘাত-সংঘাতের মধ্য দিয়ে যে সত্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, আগামী বাংলাদেশের কাণ্ডারি তারেক রহমান। যিনি তার পিতা ও মায়ের সংগ্রামী জীবন এবং জীবনাদশের প্রত্যক্ষ সাক্ষী।

জিয়া পরিবার সম্পর্কে ভাবলে আমার পবিত্র কোরআনের সুরা কাহফের ৭৯ ও ৮২ নম্বর আয়াত নাড়া দেয়। হজরত মুসা (আ.) যখন খাদির (আ.) বিভিন্ন ঘটনা দিয়ে আল্লাহর জ্ঞান স্পষ্ট করছিলেন, তখন এক নগরের একটি হেলে পড়া দেয়ালকে হজরত খাদির (আ.) সোজা করে দিলেন। বললেন, দেয়ালটি ছিল দুই এতিম কিশোরের এবং এর নিচে আছে তাদের গুপ্তধন। তাদের পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। কাজেই আল্লাহ তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে চাইলেন, তারা বয়োপ্রাপ্ত হোক এবং ধনভান্ডার উদ্ধার করুক। প্রতীক্ষ অর্থে বলছি, শহীদ জিয়ার গুপ্তধন হচ্ছে তার প্রতি মানুষের অসম্ভব ভালোবাসা ও সমর্থন। বিএনপি নামক ভাঙা দেয়ালকে খালেদা জিয়া সোজা এবং সবল করেছেন। এখন আমরা অপেক্ষায় তারেক রহমান কীভাবে সেই সম্পদকে ব্যবহার করেন, জাতিকে কাক্সিক্ষত পথে এগিয়ে নিয়ে যান।
লেখক: জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি

 

সাপ্তাহিক আজকাল
সাপ্তাহিক আজকাল
এই বিভাগের আরো খবর