শনিবার   ০৩ মে ২০২৫   বৈশাখ ২০ ১৪৩২   ০৫ জ্বিলকদ ১৪৪৬

সর্বশেষ:
মার্কিন যুদ্ধবিমানের ওপর উপসাগরীয় দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে মার্কিন কংগ্রেসে বিল উত্থাপন ইরান-ইয়েমেনের কাছাকাছি পারমাণবিক বোমারু বিমান মোতায়েন কফিতে মশগুল ব্রিটেনে পলাতক সাবেক মন্ত্রীরা! নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধে বাংলাদেশের ভুল চিত্র তুলে ধরেছে ভূমিকম্পে ১৭০ প্রিয়জন হারালেন এক ইমাম ইসরায়েলি হামলায় আরও ৪২ ফিলিস্তিনি নিহত ট্রাম্প কি আসলেই তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন লিবিয়ায় অপহৃত ২৩ বাংলাদেশি উদ্ধার দুদিনে নিহত ১৩, চট্টগ্রামের জাঙ্গালিয়া যেভাবে মরণফাঁদ হয়ে উঠলো বাংলাদেশের অর্থপাচার তদন্তে ব্রিটিশ এমপিদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা ভেনিজুয়েলার তেল-গ্যাস কিনলেই শুল্কারোপের হুমকি ট্রাম্পের সাভারে চলন্ত বাসে আবার ডাকাতি, চালক ও সহকারী আটক ছুটিতে এটিএম সেবা সবসময় চালু রাখার নির্দেশ উসকানিতে প্রভাবিত না হতে বললেন সেনাপ্রধান রেড ফ্ল্যাগ সতর্কতার আওতায় ২৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ এনসিপি নেতা হান্নানের পথসভায় হামলা, আহত ‘অর্ধশতাধিক’ নির্বাচনী ট্রেনে বাংলাদেশ বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্র্রঙ্কসের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত সাবওয়ে ট্রেনে সন্তান প্রসব নিউইয়র্কে আইস পুলিশের বিশাল অফিস উদ্বোধন মেয়রের মামলা প্রত্যাহারে প্রসিকিউটরের পদত্যাগ হাসিনা নিজেই হত্যার নির্দেশদাতা জন্ম নাগরিকত্ব বাতিল আদেশ আটকে দিল আদালতে নিউইয়র্কে ডিমের ডজন ১২ ডলার নিউইয়র্কে ভালোবাসা দিবস উৎযাপন আমেরিকান বাংলাদেশী টেক কোয়ালিশন’র আত্মপ্রকাশ জামালপুর সমিতির সভাপতি সিদ্দিক ও সম্পাদক জাস্টিস শেখ হাসিনার আমলে বছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বাংলাদেশিদের অস্ত্রোপচার বাতিলে কলকাতাজুড়ে হাসপাতালে হাহাকার দি‌ল্লি যাওয়া ছাড়াই পাওয়া যাবে মে‌ক্সি‌কান ভিসা বাজার থেকে উধাও বোতলজাত সয়াবিন কেউ আপনার স্ত্রীকে ‘হট’ বললে সেটা কি ভালো লাগে, প্রশ্ন সানার পাচারের ১৭ লাখ কোটি ফেরাবে কে এবাদুলের মিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হংকং-দুবাইয়ে পাচারকারীরা বেপরোয়া ছিল শেখ পরিবারের প্রশ্রয়ে সোনার দাম দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য কতটুকু সত্য? দিনে মাত্র একবেলা খাচ্ছে গাজার অনেক মানুষ পছন্দের লোক নিয়োগ দিতে বদলে দেয়া হয় মেট্রোরেলের নিয়োগবিধি যানজটের কারণে নষ্ট হচ্ছে দৈনিক ১৩৯ কোটি টাকা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নজর চার খাতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে বড় পতন হাথুরুসিংহের অপকর্ম ধামাচাপা দেন পাপন ‘ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ আমেরিকার জন্য বিশাল হুমকি হবে’ নীরবে সরবে চাঁদাবাজি পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ ইন্টারনেট ছাড়াই গুগল ম্যাপ ব্যবহারের উপায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ বাইডেনের ভাড়া ফাঁকিবাজদের ধরতে চলছে সাঁড়াশি অভিযান সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরীকে গুলি করে মরদেহ নিয়ে গেল বিএসএফ ভিসা ফি ছাড়াই এবার পাকিস্তান যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাফি আটক সাবেক আইজিপি বেনজীরের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ব্যয়বহুল সফরে ২৬ ব্যাংক এমডি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ সাবেক সেনাপ্রধান ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা দিনের বেলায় মরুভূমির চেয়েও উত্তপ্ত চাঁদ ডেঙ্গুতে একদিনে ১১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৩২৭ ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠির সত্যতা চ্যালেঞ্জ করে ২৬৭ প্রবাসী বাংলাদেশি অক্টোবরের মধ্যেই ‘আন্দোলনের ফসল’ ঘরে তুলতে চায় বিএনপি শর্তসাপেক্ষে নিউইয়র্কে মসজিদে আজানের অনুমতি বাংলাদেশ থেকে বিনা খরচে মালয়েশিয়া গেলেন ৩১ কর্মী খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর নির্দেশ জার্মানে পাঁচ বছর বাস করলেই পাওয়া যাবে নাগরিকত্ব বিএনপি-জাপা বৈঠক সিঙ্গাপুরে বাইডেন প্রশাসনকে হাসিনার কড়া বার্তা এবার হাসিনার পাশে রাশিয়া বঙ্গ সম্মেলনের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক ঘটনা স্টুডেন্ট লোন মওকুফ প্রস্তাব বাতিল বাংলাদেশিদের ওপর উপর্যুপরি হামলা যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আগে নিজ দেশে মানবাধিকার রক্ষা করা: শেখ হাসিনা তামিমের অবসর অভিযোগের তীর পাপনের দিকে নিউইয়র্কে এখন চোরের উপদ্রুব যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৭তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে হাতিরঝিলের ক্ষতি হবেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধবিরতি, পাঁচ দিনে নিহত ৩৫ যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটছে বাখমুত থেকে পিছু হটেছে সেনারা, স্বীকার করল রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণ ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সুপার সাইক্লোন হবে না, দাবি আবহাওয়া অধিদপ্তরের সুদানে যুদ্ধে সাড়ে ৪ লাখ শিশু বাস্তুচ্যুত : জাতিসংঘ পারস্য উপসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় খেলাপি ঋণে দ্বিতীয় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে সারা দেশে ভোগান্তি রুশ হামলা সামলে ফের বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে যাচ্ছে ইউক্রেন রিজার্ভ সংকট, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারের দুর্বল নীতিও দায়ী পূজার ‘জিন’ একা দেখতে পারলেই মিলবে লাখ টাকা! সিরিয়ায় আর্টিলারি হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল বাইডেন না দাঁড়ালে প্রার্থী হবেন কে নাইজেরিয়ায় ৭৪ জনকে গুলি করে হত্যা ভারতে বাড়ছে করোনা, বিধিনিষেধ জারি তিন রাজ্যে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন লুলা যে কোনো দিন খুলবে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল দেশে করোনার নতুন ধরন, সতর্কতা বিএনপির সব পদ থেকে বহিষ্কার আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করবো: মাহিয়া মাহি মর্মান্তিক, মেয়েটিকে ১২ কিলোমিটার টেনে নিয়ে গেল ঘাতক গাড়ি! স্ট্যামফোর্ড-আশাসহ ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বর্ষবরণে বায়ু-শব্দদূষণ জনস্বাস্থ্যে ধাক্কা কোনো ভুল মানুষকে পাশে রাখতে চাই না বাসস্থানের চরম সংকটে নিউইয়র্কবাসী ট্রাকসেল লাইনে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত একাকার! ছুটি ৬ মাসের বেশি হলে কুয়েতের ভিসা বাতিল ১০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত চুক্তিতে বিয়ে করে ইউরোপে পাড়ি আইফোন ১৪ প্রোর ক্যামেরায় নতুন দুই সমস্যা পায়ের কিছু অংশ কাটা হলো গায়ক আকবরের ১৫ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১০০ কোটি ডলার নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে আবার বাড়লো স্বর্ণের দাম
১১

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কি ঠিক পথে হাঁটছে?

কাজী জহিরুল ইসলাম

প্রকাশিত: ৩ মে ২০২৫  

মন্তব্য প্রতিবেদন
 


জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ওপর আমার পুরোপুরি আস্থা আছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের নেতৃত্বে এই কমিশন শেষ পর্যন্ত দেশপ্রেমকেই তাদের চালিকা নীতি স্থির রেখে রাষ্ট্র মেরামতের, যেটিকে আমরা সংস্কার বলছি, সেই কাজকে একটি সফল পরিণতির দিকে নিয়ে যাবেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি, দেশের চেয়ে তাদের দলের এবং তারও চেয়ে বেশি জিয়া পরিবারের স্বার্থকে বড়ো করে দেখছে। সেটিকে এই কমিশন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে কিন্তু প্রকৃত সত্য হয়ত তা নয়।


কিছুতেই একটি পরিবারের স্বার্থ রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কাজের প্রধান বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না। সেটি যত বড়ো শক্তির মুখ দিয়েই উচ্চারিত হোক না কেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মূল শক্তি দেশের মানুষের আকাঙ্খার সঙ্গে একাত্মতা। তারা যদি গণমানুষের আকাঙ্খা বুঝতে না পারেন তাহলে তাদের এই শক্তির প্রসাদ মুহূর্তেই এক মুঠো ছাই হয়ে শূন্যে মিলিয়ে যেতে পারে। বিএনপির সাম্প্রতিক কার্যক্রম এবং নেতাদের বক্তব্যে সেই ছাই হয়ে ঝরে পড়ার লক্ষণ বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।


আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো কোনো না কোনো একক ব্যক্তির কারিশমায় গড়ে ওঠে এবং ক্রমশ সেই ব্যক্তি এবং কালক্রমে তার পরিবার হয়ে ওঠে দলের পাওয়ার সেন্টার বা ক্ষমতার কেন্দ্র। পরবর্তীতে তারা আর মানুষের আকাঙ্খাকে মূল্য দেন না, পাওয়ার হাউসকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে থাকে দল, এভাবে চাটুকার শ্রেণি তৈরি হয়, ক্ষমতারোহণের পরে স্বৈরাচার তৈরি হয় এবং এক সময়ে পুরো দেশ একটা মাফিয়া রাজ্যে পরিণত হয়। দেশের মূল মালিক যারা, সেই জনগণ হয়ে যায় তাদের কৃপায় কোনোরকমে বেঁচে থাকা প্রজামাত্র।


দেশে যদি গণতন্ত্রের চর্চা অব্যাহত থাকে তাহলে আস্তে আস্তে এই অবস্থা থেকে, খুব ধীরে হলেও, উত্তরণ ঘটে। কিন্তু একক কোনো ব্যক্তি বা পরিবার কেন্দ্রিক রাজনীতি চলমান থাকলে গণতন্ত্র হোঁচট খাবেই, বাধাগ্রস্থ হবেই, ফ্যাসিবাদ তৈরি হবেই।


রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন চাইছে। সাদা চোখে দেখলে মনে হবে এটিই তো চাওয়ার কথা। নির্বাচন ছাড়া আর কি কোনো পথ আছে গণতন্ত্রে উত্তরণের? উত্তর হচ্ছে, না নেই, নির্বাচনই একমাত্র সমাধান, গণমানুষের শাসন প্রতিষ্ঠার উপায়। তাহলে দেশের মানুষ কেন ড. ইউনূসের শাসন দীর্ঘায়িত করার কথা বলছে? আমরা কি একটি অনির্বাচিত  সরকারকে দীর্ঘদিন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে রাখবো? না, রাখবো না। দেশের মানুষ দুটি কারণে ইউনূসের সরকারকে একটু বেশি সময় দিতে চায়।


জুলাই বিপ্লবের গণ-আকাঙ্খার মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, এই সরকারের ওপর মানুষের বিপুল আস্থা আছে এবং সেই আস্থা পুরণে তারা ইতোমধ্যেই অনেকখানি সফল হয়েছেন। যদিও তাদের মূল কাজ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইন শৃঙ্খলার উন্নতি, রাষ্ট্রের অর্থনীতি সুসংহত করা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা ইত্যাদি নয়, তবুও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকলে বাই ডিফল্ট এই কাজগুলো সফলতার সঙ্গে করতে হয়। কারণ এগুলোর সুফল কিংবা কুফল সরাসরি জনজীবনকে প্রভাবিত করে। এইসব রুটিন কাজের মতোই অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান এই সরকারের একটি বাই ডিফল্ট কাজ। একটা সময়ে সেটি তাদের করতেই হবে যদিও সেটি তাদের ম্যান্ডেট নয়, জুলাই বিপ্লবের মূল গণ-আকাঙ্খা নয়।


যে আকাঙ্খা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ ১৪০০ প্রাণের বিনিময়ে, ৩০ হাজার আহত মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে, এই সরকার গঠন করেছে, মোটা দাগে তা মাত্র সুনির্দিষ্ট দুটি কাজ। সর্বপ্রধান কাজটি হচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে এমন একটি ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যাতে এই দেশে আর কোনোদিন গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত না হয়, আর কোনোদিন ফ্যাসিবাদ তৈরি না হয়। অন্য দায়িত্বটি বিপ্লবের বাই প্রোডাক্ট হিসেবে তাদের কাঁধে এসে পড়েছে। সেটি হচ্ছে গণহত্যার বিচার করা, এবং সেই বিচার এমন একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করবে যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এই পথে হাঁটার কথা চিন্তাও করতে না পারে। এই দুটি কাজ হয়ে গেলে তারা একটি নির্বাচন দেবেন এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নেবেন।


ড. ইউনূসের সরকারকে মানুষ বেশি সময় দিতে চাইছে যে দুটি কারণে তার একটি হচ্ছে, তারা শংকিত, যদি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে আবার দেশকে পুরনো জায়গায় নিয়ে যায়, যদি আবার সুশাসন ভূলুণ্ঠিত হয়। ড. ইউনূসের সরকার রুটিন কাজগুলো দক্ষতার ও  সততার সঙ্গে করে দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করে ফেলেছেন। মানুষ কিছুটা নিরাপদ বোধ করছেন, একটা কমফোর্ট জোন তৈরি হয়েছে, এখান থেকে তারা বের হতে ভয় পাচ্ছেন। দ্বিতীয় যে কারণে মানুষ এই সরকারকে একটু বেশি সময় দিতে চায় তা হচ্ছে, মানুষ মনে করে নতুন বন্দোবস্ত নিশ্চিত না করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদায় নিলে আবার গণতন্ত্র হাতছাড়া হয়ে যাবে, আবার দেশের জনগণ, যারা প্রকৃত মালিক, তারাই হয়ে যাবে কোনো না কোনো পরিবারের দাস, রাতের অন্ধকারে যে কাউকে তুলে নিয়ে যাবে রাজার কোতোয়াল।


নতুন বন্দোবস্ত নিশ্চিত করার জন্য গলদঘর্ম হয়ে কাজ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই কমিশন জানে কী করতে হবে। তাদের হাতে চূড়ান্ত লক্ষ্যের, অর্থাৎ স্বপ্নের বাড়িটার, স্থাপত্য নকশা আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাড়িটা তারা কীভাবে নির্মাণ করবেন, কে অনুমোদন দেবে, সেটা বুঝতে পারছেন না। তারা রাজনৈতিক দলগুলোকেই সেই বাড়ি নির্মাণের অনুমোদনকারী ভাবছেন, তাই দফায় দফায় তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন, দর কষাকষি করছেন অনুমোদন পাওয়ার জন্য।


তারা এও জানেন, রাজনৈতিক দলগুলো দেশের প্রকৃত মালিককে পুরোপুরি প্রতিনিধিত্ব করে না। কিন্তু মালিকের সংখ্যা এতো বেশি যে মূল মালিকের কাছে পৌঁছানোর রাস্তাও তারা খুঁজে পাচ্ছেন না, তাই মালিকের প্রতিনিধি ভেবে ভুল মানুষদের কাছেই বারবার যাচ্ছেন। ১৯৯০ সালে এই প্রতিনিধিদের বিশ্বাস করেই স্থায়ী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছিল। রোপণ করা হয়েছিল তত্বাবধায়ক সরকার নামক একটি বীজ। সেই বীজ থেকে অঙ্কুরিত চারা গাছটি পূর্ণাঙ্গ বৃক্ষ হয়ে ওঠার আগেই রাজনৈতিক দলের পাওয়ার হাউজগুলো, মানে পরিবারগুলো, সেটিকে সমূলে উৎপাটন করেছে। বিএনপি প্রথমে এর মূল কেটে দিয়েছে, পরে আবার জল ঢেলে বাঁচাতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে পুরো গাছটিকেই শেকড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলে দিয়েছে। তাই বাংলাদেশের মানুষ আর দুই পরিবার-কেন্দ্রিক এই দুটি দলকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তারা এর চেয়েও শক্ত, মজবুত কোনো ব্যবস্থা চায় যাতে আগেরবারের মত আবারও তাদের ঠকতে না হয়। আবারও ১৪০০ মানুষকে প্রাণ দিয়ে বিপ্লব ঘটাতে না হয়।


রাজনৈতিক দলগুলো হচ্ছে দেশের মালিকের দালাল। সেই দালালের কাছে না গিয়ে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া গণমানুষের সরকারকে, ঐকমত্য কমিশনকে, নতুন বন্দোবস্ত তৈরির অনুমোদনটা নিতে হবে সরাসরি মালিকের কাছ থেকেই। এজন্য তাদেরকে প্রচলিত নিয়মতান্ত্রিকতার চৌহদ্দি পেরিয়ে কিছুটা সৃজনশীল হতে হবে। যেভাবে তারা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাকে পাশ কাটিয়ে গণমানুষের আকাঙ্খা পূরণের জন্য একটি সৃজনশীল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন ঠিক সেইভাবে গণমানুষের মূল আকাঙ্খা পূরণের জন্য পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের কাজটিও সম্পন্ন করতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দলের চাওয়া-না চাওয়াকে গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে তারা যে জুলাই সনদ তৈরি করতে যাচ্ছেন সেটি বাস্তবায়ন করার জন্যও তো সাংবিধানিক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাতে হবে, অধ্যাদেশের মাধ্যমে তা কার্যকর করতে হবে। আংশিক বাস্তবায়ন যদি অধ্যাদেশের মাধ্যমে করা যায় তাহলে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন কেন করা যাবে না? তারা হয়ত ভেবে থাকবেন রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যই তাদের বৈধতা, তাহলে আমি বলবো, এর চেয়েও অনেক শক্তিশালী বৈধতা অর্জনের পথে আপনারা হাঁটুন, যদিও জুলাই বিপ্লবই আপনাদের সেই বৈধতা দিয়েছে তবুও আরো একবার আপনারা জনগণের কাছে যেতে পারেন।


সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শেষে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সংস্কারের তালিকা তৈরি হবে, সেটি এক হাতে নিন, অন্যহাতে নিন আপনাদের সুপারিশকৃত পূর্ণাঙ্গ তালিকা। এবার জনগণকে, যারা দেশের মালিক, তাদের জিজ্ঞেস করুন, আপনারা কোনটি চান?


কীভাবে জিজ্ঞেস করবেন? বলছি সে কথা। না, আমি প্রচলিত গণভোটের কথাও বলবো না। আপনারা একটি অনলাইন ভোটের আয়োজন করবেন। এর আগে ৯০ দিনের সময় নিয়ে সরকারি মেশিনারিজ, যেমন: জেলা, উপজেলা প্রশাসন, সকল সরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা নির্বাচন কমিশনারের অফিস ইত্যাদির মাধ্যমে যতটা সম্ভব গণসচেতনতা তৈরি করবেন। মানুষকে বোঝাবেন দুটি তালিকার পার্থক্য।


এরপর একটি অনলাইন ভোটের আয়োজন করবেন। অনলাইন জরিপের সবচেয়ে বড়ো অসুবিধা হলো, একজন মানুষ একাধিক ভোট দিতে পারে। এই অসুবিধা দূর করার জন্য এমন একটা সফটওয়্যার তৈরি  করবেন যাতে ভোটাররা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার ব্যবহার করে ভোট দেয়, তাহলে এক ব্যক্তির একাধিক ভোটদান রোধ করা যাবে। কোন বয়সের মানুষ সংস্কার জরিপে ভোট দিতে পারবে তাও জাতীয় পরিচয় পত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাবে।


এই ব্যবস্থায় দেশের ও প্রবাসের সকল বাংলাদেশিকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাবেন। শতভাগ মানুষ এতে যুক্ত না হলেও এমন একটা সংখ্যার প্রতিনিধিত্ব পাবেন, তা অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর মুখচেনা কিছু নেতার বাগাড়ম্বরের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর ও সন্তোষজনক হবে। আপনাদেরও তখন আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে।
৩০ এপ্রিল, ২০২৫

 

সাপ্তাহিক আজকাল
সাপ্তাহিক আজকাল
এই বিভাগের আরো খবর