বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪   বৈশাখ ২৫ ১৪৩১   ০১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা দিনের বেলায় মরুভূমির চেয়েও উত্তপ্ত চাঁদ ডেঙ্গুতে একদিনে ১১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৩২৭ ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠির সত্যতা চ্যালেঞ্জ করে ২৬৭ প্রবাসী বাংলাদেশি অক্টোবরের মধ্যেই ‘আন্দোলনের ফসল’ ঘরে তুলতে চায় বিএনপি শর্তসাপেক্ষে নিউইয়র্কে মসজিদে আজানের অনুমতি বাংলাদেশ থেকে বিনা খরচে মালয়েশিয়া গেলেন ৩১ কর্মী খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর নির্দেশ জার্মানে পাঁচ বছর বাস করলেই পাওয়া যাবে নাগরিকত্ব বিএনপি-জাপা বৈঠক সিঙ্গাপুরে বাইডেন প্রশাসনকে হাসিনার কড়া বার্তা এবার হাসিনার পাশে রাশিয়া বঙ্গ সম্মেলনের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক ঘটনা স্টুডেন্ট লোন মওকুফ প্রস্তাব বাতিল বাংলাদেশিদের ওপর উপর্যুপরি হামলা যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আগে নিজ দেশে মানবাধিকার রক্ষা করা: শেখ হাসিনা তামিমের অবসর অভিযোগের তীর পাপনের দিকে নিউইয়র্কে এখন চোরের উপদ্রুব যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৭তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে হাতিরঝিলের ক্ষতি হবেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধবিরতি, পাঁচ দিনে নিহত ৩৫ যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটছে বাখমুত থেকে পিছু হটেছে সেনারা, স্বীকার করল রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণ ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সুপার সাইক্লোন হবে না, দাবি আবহাওয়া অধিদপ্তরের সুদানে যুদ্ধে সাড়ে ৪ লাখ শিশু বাস্তুচ্যুত : জাতিসংঘ পারস্য উপসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় খেলাপি ঋণে দ্বিতীয় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে সারা দেশে ভোগান্তি রুশ হামলা সামলে ফের বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে যাচ্ছে ইউক্রেন রিজার্ভ সংকট, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারের দুর্বল নীতিও দায়ী পূজার ‘জিন’ একা দেখতে পারলেই মিলবে লাখ টাকা! সিরিয়ায় আর্টিলারি হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল বাইডেন না দাঁড়ালে প্রার্থী হবেন কে নাইজেরিয়ায় ৭৪ জনকে গুলি করে হত্যা ভারতে বাড়ছে করোনা, বিধিনিষেধ জারি তিন রাজ্যে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন লুলা যে কোনো দিন খুলবে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল দেশে করোনার নতুন ধরন, সতর্কতা বিএনপির সব পদ থেকে বহিষ্কার আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করবো: মাহিয়া মাহি মর্মান্তিক, মেয়েটিকে ১২ কিলোমিটার টেনে নিয়ে গেল ঘাতক গাড়ি! স্ট্যামফোর্ড-আশাসহ ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বর্ষবরণে বায়ু-শব্দদূষণ জনস্বাস্থ্যে ধাক্কা কোনো ভুল মানুষকে পাশে রাখতে চাই না বাসস্থানের চরম সংকটে নিউইয়র্কবাসী ট্রাকসেল লাইনে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত একাকার! ছুটি ৬ মাসের বেশি হলে কুয়েতের ভিসা বাতিল ১০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত চুক্তিতে বিয়ে করে ইউরোপে পাড়ি আইফোন ১৪ প্রোর ক্যামেরায় নতুন দুই সমস্যা পায়ের কিছু অংশ কাটা হলো গায়ক আকবরের ১৫ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১০০ কোটি ডলার নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে আবার বাড়লো স্বর্ণের দাম
৪৪৮

নোয়াম চমস্কি

চ্যাটজিপিটির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি

প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২৩  

হোর্হে লুইস বোর্হেস একবার লিখেছিলেন, একটি বড় বিপদের সময়ে বেঁচে থাকার অর্থ হলো ট্র্যাজেডি ও কমেডি উভয় অভিজ্ঞতা অর্জনে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে আবিষ্কারের নৈকট্য নিয়ে নিজেদের এবং পুরো জগতকে অনুভব করা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) তথাকথিত বৈপ্লবিক সাফল্য উদ্বেগ এবং আশাবাদ উভয়ই সৃষ্টি করছে। আশাবাদ এই কারণে, আমরা বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সমস্যার সমাধান করি। ভীত হওয়ার কারণ হলো—এআইয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ফ্যাশনেবল সূত্র ‘মেশিন লার্নিং’ বিজ্ঞান চর্চার অবনমন ঘটাবে এবং ভাষা ও জ্ঞান নিয়ে প্রযুক্তিতে ত্রুটিযুক্ত ধারণার অবতারণা ঘটিয়ে নীতিকে অবমূল্যায়িত করবে।

ওপেন এআইয়ের চ্যাটজিপিটি, গুগলের বার্ড এবং মাইক্রোসফটের সিডনি—মেশিন লার্নিংয়ের বিস্ময়। মোটামুটিভাবে বলা যায়, প্রোগ্রামগুলো প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করে এবং তার মধ্যে নির্দিষ্ট ধারা বা প্যাটার্ন খোঁজ করে। পরিসংখ্যানের মাধ্যমে মানুষের ভাষা ও চিন্তার সঙ্গে মানানসই উত্তর খুঁজে বের করতে এসব এআই সক্ষম হয়ে ওঠে। সাধারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দিগন্তে প্রথম দিককার ঝলক হিসেবে এগুলোকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে সেই প্রতিক্ষীত সময় এলো যখন পরিমাণগত দিক থেকে যন্ত্র মানুষের স্মৃতিধারণ ও গতিকে প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতায় এগিয়ে গেল। অন্যদিকে গুণগত দিক দিয়ে মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক অন্তর্দৃষ্টি, শৈল্পিক সৃজনশীলতা এবং স্বতন্ত্রভাবে মৌলিক মানবিক দক্ষতায় যন্ত্রের চেয়ে পিছিয়ে পড়ল।

এমন দিন আসতে পারে সত্য, কিন্তু সেই ভোর এখনো আসেনি যার মাধ্যমে হাইপারবোলিক শিরোনামগুলো পড়া যায় এবং অন্যায্য বিনিয়োগের গণনা সম্পন্ন করা যায়। বোর্হেসীয় বোঝাপড়ার উদ্ঘাটন সম্ভব হতো না এবং হবে না, যদি না চ্যাটজিপিটির মতো মেশিন লার্নিং প্রোগ্রামগুলো এআইয়ের ক্ষেত্রে আধিপত্য বজায় রাখত। কিছু সংকীর্ণ পরিসরে এই প্রোগ্রামগুলোর কিছু উপযোগিতা থাকলেও (কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে এগুলো কাজে আসতে পারে এবং ছড়া লেখার কাজেও আসতে পারে) আমরা ভাষাবিজ্ঞান ও জ্ঞানের দর্শন থেকে জানি, এগুলো মানুষের কার্যকারণ এবং ভাষার ব্যবহার থেকে গভীরভাবে আলাদা। এই ধরনের বিভিন্নতা প্রোগ্রামগুলো যা কিছু করতে পারে সেখানে উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতার সৃষ্টি করে অমোচনীয় সব ভুল করে বসে।

বোর্হেস যেমনটা বলেছেন, এটা একই সঙ্গে হাস্যকর ও বিয়োগান্তক। মানুষের চিন্তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এত নগন্য ও সামান্য কিছু পাওয়ার জন্য বিপুল অর্থ ও মনোযোগ ব্যয়কে ভিল্‌হেল্ম ফন হাম্বোল্ট ভাষার আঘাতে নতুন ধারণা এবং তত্ত্বের মাধ্যমে ‘সীমাবদ্ধ অর্থের অসীম ব্যবহার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

মানুষের মন চ্যাটজিপিটির মতো নয়। চ্যাটজিপিটি এমন একটি পরিসংখ্যান যন্ত্র যা নমুনা মিলিয়ে শত শত টেরাবাইট তথ্য গিলে খায় এবং বেশিরভাগক্ষেত্রে আগে থেকে শেখা কথোপকথনের মতো করে উত্তর দেয় অথবা বৈজ্ঞানিক প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর দেয়। আরেকদিকে মানুষের মস্তিষ্ক আশ্চর্যজনকভাবে কর্মক্ষম ও এবং মার্জিত একটি ব্যবস্থা যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তথ্য নিয়ে কাজ করে; এটি প্রাপ্ত তথ্য থেকে অনুমাননির্ভর পারস্পরিক সম্পর্কের দিশা খোঁজে না, বরং এর ব্যাখা তৈরি করে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, একটি শিশু যখন নতুন ভাষা শিখছে তখন সে অবচেতনে, স্বয়ংক্রিয় এবং গতিশীলভাবে অণু পরিমাণ তথ্য থেকে ব্যাকরণ তৈরি করে, যা বিস্ময়কর পরিশীলিত উপায়ে যৌক্তিক নিয়ম-কানুনের অনুগামী। ব্যাকরণের এই সহজাত বোধকে জন্মগত ব্যাপার ধরে নেওয়া যায়। জিনগতভাবে ইন্সটল করা ‘অপারেটিং সিস্টেম’ মানুষকে জটিল বাক্য গঠন ও চিন্তার ধারা অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে। ভাষাতত্ত্ববিদরা যখন কোনো ভাষা যেভাবে তৈরি করছে সেটার কারণ অনুসন্ধানে একটি তত্ত্বের খোঁজ করেন (কেন এই বাক্যগুলোকে ব্যাকরণগত বলা হচ্ছে আর বাকিগুলোকে বলা হচ্ছে না?) তখন তারা মূলত সচেতন ও পরিশ্রমসাধ্য উপায়ে সেই শিশুটির অবচেতনে সহজাতভাবে সামান্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ব্যাকরণের অনুকরণ তৈরি করতে চান।

প্রকৃতপক্ষে, এই ধরনের প্রোগ্রাম প্রাক-মানব ও মানবহীন উভয় অবস্থার জ্ঞানভিত্তিক বিবর্তনের মধ্যে আটকে রয়েছে। তাদের বড় ত্রুটি হলো যে কোনো বুদ্ধিমত্তার জটিলতা ধারণের অনুপস্থিতি। অর্থাৎ শুধু ঘটনা কী, সেটা বলার জন্য নয়, বরং কী ঘটেছিল? ঘটনাটি কী হবে—সেটার বর্ণনা ও ভবিষ্যদ্বাণীও করায় সক্ষম হতে হবে। ঘটনাটি কী নয় এবং ঘটনাটি কী হতে পারত এবং কী ঘটতে পারত না, সেগুলোও জানা দরকার। এগুলো ব্যাখার প্রধান উপাদান, সত্যিকারের বুদ্ধিমত্তার স্মারক। কিন্তু এআই তা প্রদানে সক্ষম নয়।

একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ধরা যাক আপনি হাতে একটি আপেল ধরে আছেন। এখন আপনি আপেলটিকে ফেলে দিলেন। আপনি ফলাফল পর্যবেক্ষণ করে বললেন, ‘আপেলটি পড়ে গেছে।’ এটি একটি বর্ণনা। এটি পূর্ব ধারণা হলে বক্তব্যটি হতো এমন, ‘আমি হাত খুললে আপেলটি পড়ে যাবে।’ দুটি বক্তব্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং উভয়েই সঠিক হতে পারে। কিন্তু এর ব্যাখা আরও বেশি কিছু। ব্যাখায় শুধু বর্ণনা ও ধারণা থাকে না। এখানে বিপরীত অনুমানও করা যায় এভাবে, ‘এমন যে কোনো বস্তু পড়ে যাব’। এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে ‘অভিকর্ষ ত্বরণের কারণে’ অথবা ‘স্পেস-টাইমের বক্রতার কারণে’—এ জাতীয় খণ্ডবাক্য। একটা সাধারণ ব্যাখা এমন হতে পারে, ‘আপেলটি পড়ত না যদি না অভিকর্ষ ত্বরণ থাকত।’ এটাকে চিন্তা বলে।

মেশিং লার্নিংয়ের মূল বিষয়টি হলো—বর্ণনা ও ভবিষ্যদ্বাণী। এটি সাধারণ যান্ত্রিকতার প্রক্রিয়া বা প্রাকৃত বিধানকে সত্য বলে ধরে নেয় না। এটা সত্য, মানবিক যে কোনো ব্যাখ্যা সবসময় সঠিক নাও হতে পারে; কারণ আমরা ভ্রমপ্রবণ। সঠিক হওয়ার জন্য অবশ্যই ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বুদ্ধিমত্তা শুধু সৃজনশীল অনুমান নয় বরং সৃজনশীল সমালোচনাও। মানুষ সম্ভাব্য ব্যাখা এবং ভুল সংশোধনের মাধ্যমে তার চিন্তা পদ্ধতিকে এগিয়ে নেয়। এটি এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে যুক্তিসঙ্গতভাবে সম্ভাবনা আমলে নেওয়া হয়। যেমনটা শার্লক হোমস ডা. ওয়াটসনকে বলেছিলেন, ‘যখন আপনি অসম্ভবের সম্ভাবনা বাদ দিয়েছেন, এরপর যেটা থাকে সেটা যতই অবাস্তবই হোক না কেন, সত্য বলে বিবেচ্য হবে।

কিন্তু চ্যাটজিপিটি এবং সমগোত্রীয় প্রোগ্রামগুলো এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যেন তারা সীমাহীন তথ্য ‘শিখতে’ পারে (যেটাকে আসলে মুখস্থ করা বলা যায়); অথচ তারা সম্ভব থেকে অসম্ভবকে আলাদা করতে পারে না। এরা মানুষের মতো নয়। মানুষের ভেতরে সর্বজনীন ব্যাকরণের একটি ধারণা প্রোথিত থাকে যা ভাষাকে সীমিত করে একধরনের প্রায় গাণিতিক সৌন্দর্যের অবতারণা ঘটায়। অন্যদিকে এই প্রোগ্রামগুলো মানুষের অসম্ভব ও সম্ভবকে সমান সুবিধা নিয়ে শিখে নেয়। যেখানে মানুষ যৌক্তিকভাবে পাওয়া অনুমাননির্ভর ব্যাখার ভেতর সীমাবদ্ধ থাকে। পৃথিবী সমতল এবং পৃথিবী গোলাকার, মেশিন লার্নি এই দুটিই শিখতে পারে। এগুলো মূলত সম্ভাব্যতার ওপর নির্ভর করে চলে যেগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়।

এ কারণে মেশিন লার্নিং সিস্টেমের ভবিষ্যদ্বাণী সবসময়েই ভাসা ভাসা এবং সন্দেহজনক। কারণ এই প্রোগ্রামগুলো ইংরেজি বাক্যরীতি জানে না। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক—‘জন এতই একগুয়ে যে তার সঙ্গে কথা বলা যায় না’ বাক্যটির ক্ষেত্রে প্রোগ্রামগুলো খুব ভালোভাবেই এই ভুল ধারণা করবে, এর অর্থ হবে, ‘জন এতটাই একগুয়ে, সে কারও সঙ্গে কথা বলবে না’ (বরঞ্চ সে যে একগুয়ে এই কারণটি এআই যুক্তির নিরিখে আনবে না)। কেন একটি মেশিং লার্নিং প্রোগ্রাম এমন অহেতুক কিছু গণনা করবে? কারণ, তারা অবশ্যই—‘জন একটি আপেল খেয়েছিল’ এবং ‘জন খেয়েছিল’ এই দুই ধরনের বাক্য থেকে অনুমান করা শুরু করবে। শেষোক্ত বাক্যটিতে জন কিছু না কিছু খেয়েছে এমন অর্থ প্রকাশ করে। প্রোগ্রামগুলোর এমন ধারণার কারণ, ‘জন বিলের সঙ্গে কথা বলার জন্য খুবই একগুয়ে’ বাক্যটি ‘জন একটি আপেল খেয়েছে’ বাক্যটির মতো। ভাষার সঠিক ব্যাখা জটিল এবং শুধু অনেক তথ্য ম্যারিনেট করে তা শেখা যায় না।

মেশিং লার্নিং নিয়ে উৎসাহীরা এক ধরনের বিকৃত গর্ব অনুভব করেন সেটি হলো—তাদের সৃষ্টি ‘বৈজ্ঞানিক’ প্রশ্নের (ধরা যাক, গতি সম্পর্কীয় পদার্থবিদ্যার কোনো বিষয়) কোনো ব্যাখা ছাড়া (ধরা যাক, নিউটনের গতিসূত্র এবং মহাকর্ষ) সঠিক উত্তর দিতে পারে। কিন্তু এই ধরনের গণনা সফল হলেও আদতে তা ছদ্মবিজ্ঞান। বিজ্ঞানীরা অভিজ্ঞতালব্ধ যুক্তিপ্রমাণের সাহায্য নিয়ে তত্ত্ব খুঁজে ফেরেন। যেমনটা বলেছিলেন দার্শনিক কার্ল পপার, ‘আমরা খুব করে সম্ভব, এমন তত্ত্ব খুঁজি না, বরং ব্যাখা খুঁজি; যা শক্তিশালী এবং অতিমাত্রায় অসম্ভব তত্ত্ব।

আপেলের মাটিতে পড়া নিয়ে যে তত্ত্ব আছে তা হয়ত এই কারণে, সেটাই তাদের প্রকৃত জায়গা (অ্যারিস্টটলের দৃষ্টিভঙ্গি) তবে এটা শুধুই আরও প্রশ্ন তৈরি করে। (কেন মাটি পতনের জন্য প্রাকৃতিক জায়গা হবে?) ভর যখন স্থান ও কালকে দমিত করে তখন একটি আপেল মাটিতে পড়বে (আইনস্টাইনের দৃষ্টিভঙ্গি) তখন যা অতিমাত্রায় অসম্ভব, কিন্তু আপেলের পতনের কারণটি ঠিকই আপনাকে জানায়। সত্যিকারের বুদ্ধিমত্তা চিন্তা করার ক্ষমতার মাধ্যমে প্রকাশ পায় এবং অসম্ভব অথচ অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন বিষয়কে প্রকাশ করে।

সত্যিকারের বুদ্ধিমত্তা নৈতিকভাবে চিন্তা করতে পারে। এটার অর্থ আমাদের মস্তিষ্ক অন্যান্য সীমাহীন সৃজনশীলতার সম্ভাবনাকে সীমাবদ্ধ করে নৈতিক মূল্যবোধ দ্বারা তাড়িত হয়ে কোনটি উচিত এবং কোনটি উচিত না সেটা ঠিক করে (অবশ্যই এসব মূল্যবোধকে সৃজনশীল সমালোচনার আওতায় আনা হয়)। চ্যাটজিপিটিকে আরও কার্যকর করতে, এর ব্যবহারকারীদের কাছে একে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য এর থেকে যেন অভূতপূর্ব ফলাফল আসে সে ক্ষমতা তৈরি করা একান্ত প্রয়োজন। অবশ্যই একে নৈতিকভাবে আপত্তিকর বিষয় শনাক্ত করতে হবে। কিন্তু চ্যাটজিপিটির প্রোগ্রামাররা ও অন্যান্য মেশিং লার্নিংয়ের বিস্ময়কর প্রোগ্রামগুলো এই ভারসাম্য অর্জন করতে হিমশিম খাচ্ছে এবং সামনেও খাবে।

২০১৬ সালে মাইক্রোসফটের টে চ্যাটবট (চ্যাটজিপিটির আদি ভার্সন) নারীবিদ্বেষী ও বর্ণবাদী উপাদান দিয়ে ইন্টারনেট ছেয়ে ফেলে। অনলাইন ট্রলের মাধ্যমে এর তথ্য ভাণ্ডার ভরিয়ে তোলা হয়েছিল। কীভাবে ভবিষ্যতে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে? নৈতিক মূল্যবোধ আলাদা করার অক্ষমতার কারণে প্রোগ্রামারা চ্যাটজিপিটিকে সরিয়ে নিয়েছিলেন।

সব অত্যাধুনিক চিন্তা ও ভাষার জন্যই একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে তা হলো, নৈতিক উদাসীনতা মূঢ়তা থেকে জন্ম নেয়। চ্যাটজিপিটি কুম্ভীলকবৃত্তি, ঔদাসীন্য, বিভ্রান্তির মতো বাজে বিষয়ের চর্চা করে। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য নিয়ে আলোচ্য বিষয়কে সাররূপ দেয়। এটি কোনো বিষয়ে কোনো অবস্থান নিতে পারে না। পরিপূর্ণভাবে অজ্ঞ না হলেও বুদ্ধিমত্তার অভাব নিয়ে এটি শুধু ‘নির্দেশনা অনুসরণ করে’-এর নির্মাতাদের ঘাড়ে সব দায়িত্ব চাপায়।

সংক্ষেপে বলতে গেলে চ্যাটজিপিটি ও এর অনুগামী প্রোগ্রামগুলো নিয়মান্ত্রিকভাবেই সৃজনশীলতার সঙ্গে বাধ্যবাধকতার ভারসাম্য তৈরি করতে অক্ষম। তারা হয় অতিরিক্ত তথ্য উৎপাদন করে (সত্য এবং মিথ্যা উভয়ই) অথবা (কোনো সিদ্ধান্তের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ না হয়ে এবং ফলাফল সম্পর্কে ঔদাসিন্য দেখিয়ে) অতি কম তথ্য দেয়। প্রোগ্রামগুলো এমন নীতিহীনতা, অপবিজ্ঞান ও ভাষাতাত্ত্বিক অযোগ্যতার পরেও যখন জনপ্রিয়তা পায়, তা দেখে আমরা শুধু হাসতে বা কাঁদতে পারি।

নোয়াম চমস্কি: ইউনভার্সিটি অব আরিজোয়ানায় ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক। তিনি ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ইমেরিটাস অধ্যাপক।

ইয়ান রবার্টস: ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজের ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক।

জেফারি ওয়াটমুল: একজন দার্শনিক এবং ওশানইটে (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট কোম্পানি) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিভাগের পরিচালক।

নিউইয়র্ক টাইমস থেকে ভাষান্তর
(কালবেলা )

সাপ্তাহিক আজকাল
সাপ্তাহিক আজকাল
এই বিভাগের আরো খবর