বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪   বৈশাখ ২৫ ১৪৩১   ০১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

সর্বশেষ:
ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা দিনের বেলায় মরুভূমির চেয়েও উত্তপ্ত চাঁদ ডেঙ্গুতে একদিনে ১১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৩২৭ ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠির সত্যতা চ্যালেঞ্জ করে ২৬৭ প্রবাসী বাংলাদেশি অক্টোবরের মধ্যেই ‘আন্দোলনের ফসল’ ঘরে তুলতে চায় বিএনপি শর্তসাপেক্ষে নিউইয়র্কে মসজিদে আজানের অনুমতি বাংলাদেশ থেকে বিনা খরচে মালয়েশিয়া গেলেন ৩১ কর্মী খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর নির্দেশ জার্মানে পাঁচ বছর বাস করলেই পাওয়া যাবে নাগরিকত্ব বিএনপি-জাপা বৈঠক সিঙ্গাপুরে বাইডেন প্রশাসনকে হাসিনার কড়া বার্তা এবার হাসিনার পাশে রাশিয়া বঙ্গ সম্মেলনের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক ঘটনা স্টুডেন্ট লোন মওকুফ প্রস্তাব বাতিল বাংলাদেশিদের ওপর উপর্যুপরি হামলা যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আগে নিজ দেশে মানবাধিকার রক্ষা করা: শেখ হাসিনা তামিমের অবসর অভিযোগের তীর পাপনের দিকে নিউইয়র্কে এখন চোরের উপদ্রুব যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৭তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে হাতিরঝিলের ক্ষতি হবেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধবিরতি, পাঁচ দিনে নিহত ৩৫ যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটছে বাখমুত থেকে পিছু হটেছে সেনারা, স্বীকার করল রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণ ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সুপার সাইক্লোন হবে না, দাবি আবহাওয়া অধিদপ্তরের সুদানে যুদ্ধে সাড়ে ৪ লাখ শিশু বাস্তুচ্যুত : জাতিসংঘ পারস্য উপসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় খেলাপি ঋণে দ্বিতীয় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে সারা দেশে ভোগান্তি রুশ হামলা সামলে ফের বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে যাচ্ছে ইউক্রেন রিজার্ভ সংকট, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারের দুর্বল নীতিও দায়ী পূজার ‘জিন’ একা দেখতে পারলেই মিলবে লাখ টাকা! সিরিয়ায় আর্টিলারি হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল বাইডেন না দাঁড়ালে প্রার্থী হবেন কে নাইজেরিয়ায় ৭৪ জনকে গুলি করে হত্যা ভারতে বাড়ছে করোনা, বিধিনিষেধ জারি তিন রাজ্যে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন লুলা যে কোনো দিন খুলবে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল দেশে করোনার নতুন ধরন, সতর্কতা বিএনপির সব পদ থেকে বহিষ্কার আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করবো: মাহিয়া মাহি মর্মান্তিক, মেয়েটিকে ১২ কিলোমিটার টেনে নিয়ে গেল ঘাতক গাড়ি! স্ট্যামফোর্ড-আশাসহ ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বর্ষবরণে বায়ু-শব্দদূষণ জনস্বাস্থ্যে ধাক্কা কোনো ভুল মানুষকে পাশে রাখতে চাই না বাসস্থানের চরম সংকটে নিউইয়র্কবাসী ট্রাকসেল লাইনে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত একাকার! ছুটি ৬ মাসের বেশি হলে কুয়েতের ভিসা বাতিল ১০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত চুক্তিতে বিয়ে করে ইউরোপে পাড়ি আইফোন ১৪ প্রোর ক্যামেরায় নতুন দুই সমস্যা পায়ের কিছু অংশ কাটা হলো গায়ক আকবরের ১৫ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১০০ কোটি ডলার নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে আবার বাড়লো স্বর্ণের দাম
১১৯

আবারও দু’দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন!

ঢাকা অফিস

প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০২৪  

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন রিপোর্ট

 

বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০২৩ সালের পরিস্থিতি নিয়ে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উল্লেখ করা হয়েছে।
মার্কিন প্রতিবেদনে বলা হয়, উল্লেখযোগ্য মানবাধিকার-সংক্রান্ত যেসব বিষয় নিয়ে গ্রহণযোগ্য খবর রয়েছে, সেগুলো হলো-বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডসহ বিধিবহির্ভূত হত্যা; গুম; নির্যাতন বা নিষ্ঠুরতা, অমানবিক বা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা সরকারের তরফে সাজা; কঠোর ও জীবনের জন্য হুমকি এমন কারাগার পরিস্থিতি; নির্বিচার গ্রেপ্তার ও আটক, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর সমস্যা, রাজনৈতিক বন্দী বা আটক; ভিনদেশে থাকা নাগরিকদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন; মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় স্বেচ্ছাচারমূলক বা বেআইনি হস্তক্ষেপ; কারও অপরাধের অভিযোগে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সাজা দেওয়া; মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় গুরুতর বাধা সৃষ্টি, যার মধ্যে রয়েছে সাংবাদিকদের হুমকি-ভয়ভীতি দেখানো, সাংবাদিকদের অন্যায্যভাবে গ্রেপ্তার বা বিচারের সম্মুখীন করা, বিধিনিষেধ এবং মতপ্রকাশ সীমিত করতে ফৌজদারি মানহানিকর আইনের প্রয়োগ বা প্রয়োগের হুমকি; ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতায় গুরুতর বাধার সৃষ্টি; শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ ও সংগঠন করার অধিকারে হস্তক্ষেপ, এর মধ্যে রয়েছে সংগঠন, অর্থায়ন বা বেসরকারি ও নাগরিক সংগঠনগুলো পরিচালনায় অতিরিক্ত বিধিনিষেধ সংক্রান্ত আইন; চলাচলের স্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা; সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে জনগণের সুযোগ না থাকা; রাজনীতিতে অংশগ্রহণে গুরুতর ও অযৌক্তিক প্রতিবন্ধকতা; সরকারি খাতে গুরুতর দুর্নীতি; দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কর্মকান্ডে সরকারের পক্ষ থেকে গুরুতর বিধিনিষেধ বা হয়রানি; লিঙ্গভিত্তিক ব্যাপক সহিংসতা, এর মধ্যে রয়েছে পারিবারিক ও ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, যৌন নির্যাতন, কর্মক্ষেত্রে নির্যাতন, শিশু-বাল্যবিবাহ, জোরপূর্বক বিয়ে এবং এমন সহিংসতার অন্যান্য ধরন; জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকিসহ বিভিন্ন অপরাধ; স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন ও কর্মীদের সংগঠনের স্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য বিধিনিষেধ এবং শিশুশ্রমের নিকৃষ্ট ধরনের উপস্থিতি।
এছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন ঘটনায় ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি দেওয়ার অনেক খবর রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন-এমন কর্মকর্তা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত ও শাস্তির ক্ষেত্রে সরকার গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকান্ড:
সরকার বা সরকারের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বেআইনি হত্যাকান্ডের খবর রয়েছে। তবে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সংঘটিত মোট হত্যাকান্ড নিয়ে কখনো আনুষ্ঠানিক কোনো পরিসংখ্যান দেয়নি কিংবা এসব ঘটনা তদন্তে কোনো স্বচ্ছ পদক্ষেপ নেয়নি। হাতে গোনা পরিচিত কয়েকটি ঘটনায় সরকার অভিযোগ এনেছে এবং যাঁরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তাঁদের সাধারণভাবে প্রশাসনিক সাজা দিয়েছে।
বছরজুড়ে কথিত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, মাদক ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিছু অভিযানে সন্দেহজনক ব্যক্তি নিহত হওয়া ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে।
বিগত বছরের তুলনায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড কমেছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আটজনের কথিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হওয়া বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর কথা বলেছে। আরেকটি মানবাধিকার সংগঠন একই সময়ে ১২ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন বলে খবর দিয়েছে।
২০২২ সালে শাহিন মিয়া ও মোহাম্মদ রাজু নামের দুই ব্যক্তিকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার অভিযোগ ওঠা র‌্যাব সদস্যদের জবাবদিহি করানোর কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
গুম ও অপহরণ:
সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ বা তাদের পক্ষে গুম করার খবর রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যমের খবরে গুম এবং অপহরণের ঘটনা অব্যাহত ছিল বলে জানানো হয়। অভিযোগ উঠেছে, এসব ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটিয়েছেন।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩২ ব্যক্তি জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়েছেন বলে স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংস্থার খবরে বলা হয়েছে। এসব ঘটনা প্রতিরোধ, তদন্ত বা দোষী ব্যক্তিদের সাজা দেওয়ায় সামান্যই চেষ্টা করেছে সরকার।
নাগরিক সংগঠনগুলো বলেছে, জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের বেশির ভাগ বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী এবং ভিন্নমতাবলম্বী।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা তাঁদের ফিরিয়ে দিতে ও এসব ঘটনায় জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিচার করতে সরকারের কাছে বছরজুড়ে দাবি জানিয়ে এসেছেন।
নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুরতা, অমানবিক বা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা সাজা:
দেশের সংবিধান ও আইনে নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুরতা, অমানবিক বা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা সাজা নিষিদ্ধ হলেও স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এমন চর্চায় জড়িত ছিলেন।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, নির্যাতনের অনেক ঘটনা সংঘটিত হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে। কিছু ভুক্তভোগী টর্চার ও কাস্টডিয়াল (প্রিভেনশন) অ্যাক্টে অভিযোগ দায়েরের পর তাঁদের হয়রানি ও হুমকি দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর প্রতিশোধের মুখে পড়ার আশঙ্কায় কেউ কেউ অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন।
একাধিক সংস্থার ভাষ্যমতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কথিত সন্ত্রাসী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য আদায়ে নির্যাতনের আশ্রয় নেন। সংস্থাগুলোর আরও দাবি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ব্যাপক ও নিয়মিত নির্যাতনের ঘটনায় যুক্ত ছিলেন। এতে মাঝে-মধ্যে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে দায়মুক্তির বিষয়টি এক বড় ধরনের সমস্যা। অপরাধ ও দুর্নীতির রাজনীতিকরণ এবং স্বাধীন জবাবদিহি ব্যবস্থার অভাব এ দায়মুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নির্যাতনের উল্লেখযোগ্য ঘটনায় পুলিশের অভ্যন্তরীণ তদন্ত করার কথা। কিন্তু নাগরিক সমাজের সংগঠনের অভিযোগ, তাদের তদন্তের পদ্ধতি নিরপেক্ষ নয়।
কারাগার ও আটককেন্দ্রগুলোর অবস্থা খারাপ এবং একই সঙ্গে জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা, এগুলো বন্দী দিয়ে ঠাসা, নেই যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা। এছাড়া সেখানে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
মানবাধিকার সংগঠন আসকের হিসাবে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৭ বন্দী কারাগারে মারা গেছেন। তাঁদের মধ্যে ৪২ জন ছিলেন বিচারাধীন ও ৩৫ জন অভিযুক্ত। স্থানীয় অপর একটি মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, একই সময়ে ৯৪ জন কারাগারে মারা গেছেন।
নির্বিচারে গ্রেপ্তার বা আটক:
সংবিধানে বাছবিচারহীন গ্রেপ্তার বা আটকের ঘটনা নিষিদ্ধ। কিন্তু কোনো ব্যক্তিকে নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য হুমকি বলে মনে হলে বা তিনি গুরুতর কোনো অপরাধে জড়িত বলে কর্তৃপক্ষের কাছে বিবেচিত হলে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ বা কোনো পরোয়ানা ছাড়াই কর্তৃপক্ষকে তাঁকে গ্রেপ্তার বা আটকের অনুমতি দিয়েছে আইন। কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যেই আটক ব্যক্তিদের অবস্থান ও অবস্থা সম্পর্কে পরিবার বা আইনজীবীকে কিছু না জানিয়ে বা গ্রেপ্তার করার বিষয় স্বীকার না করে কয়েক দিন তাঁদের আটকে রাখে।
আবার জামিনের ব্যবস্থা কার্যকর থাকার পরও পুলিশ নিয়মিতভাবে জামিন পাওয়া ব্যক্তিদের ভিন্ন অভিযোগে আবার গ্রেপ্তার করে থাকে; যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রথমেই আদালতে হাজির করা ছাড়া নতুন অভিযোগে আবারও গ্রেপ্তার না করতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা রয়েছে।
অনেক সময় রাজনৈতিক বিক্ষোভ-সমাবেশ বা বক্তৃতার কারণে বা কথিত সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রতিরোধের অংশ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বিচারে গ্রেপ্তার করার ঘটনা ঘটেছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া, কখনোবা অন্য সন্দেহভাজনদের সম্পর্কে তথ্য আদায় করতে আটকে রাখা হয়েছে এই ব্যক্তিদের। মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিশানা বানাতে পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়েছে এবং বিরোধী রাজনীতিকদের দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করেছে সরকার।
বিরোধীদলীয় সদস্যদের নির্বিচার গ্রেপ্তার করা অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। গত আগস্টে মানবাধিকার সংস্থা এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি) ও সিভিকাস মনিটর গণমাধ্যমের খবর উদ্ধৃত করে এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, গত জুলাইয়ের শেষে এক বিক্ষোভকে সামনে রেখে পুলিশ বিএনপির আট শতাধিক নেতাকে কারাগারে পাঠিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিবৃতিতে গ্রেপ্তার ওই ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের ঘটনা দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে তা স্বীকার করা হয়নি। বরং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে অনেক বিচ্ছিন্ন ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রকাশিত মানবাধিকার সংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ অংশ সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন এ কথা বলেন। এ বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরতে বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সেহেলী সাবরীন বলেন, ২০২৩ সালের যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন নোট করেছে বাংলাদেশ। আমরা যতই আকাক্সক্ষা করি না কেন, বিশ্বের কোথাও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিখুঁত নয়। কারণ একটি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকে।
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে, তবে যেসবের আরও উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে সেগুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে কাজ করে যাচ্ছে।’
মুখপাত্র বলেন, ‘সরকারের প্রচেষ্টার ফলে নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিশুদের অধিকার, বয়স্ক ব্যক্তিদের অধিকার, শ্রমিকদের অধিকার, অভিযোগ নিষ্পত্তি, ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক সমাবেশ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সরকারের এত অর্জন সত্ত্বেও দুঃখের বিষয় মার্কিন প্রতিবেদনে সরকারের অনেক উন্নতি ও অর্জন স্বীকার করা হয়নি। এছাড়া কিছু বিচ্ছিন্ন এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হয়েছে। প্রতিবেদনে স্পষ্ট যে, এটি পৃথক রিপোর্ট করা বা অভিযুক্ত ঘটনার রেফারেন্স দিয়ে পরিপূর্ণ নয়।’
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘এটাও স্পষ্ট যে, প্রতিবেদনে বেশিরভাগ স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি বেনামি সংস্থা থেকে অনুমাননির্ভর তথ্য নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে। সে কারণে প্রতিবেদনে সহজাত এবং পক্ষপাতদুষ্ট বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়েছে।’
মার্কিন প্রতিবেদনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘খালেদা জিয়া গৃহবন্দি নন।’
মুখপাত্র বলেন, ‘প্রতিবেদনে কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে এটি সঠিক নয়। প্রতিবেদনে বিএনপি এবং এর রাজনৈতিক মিত্রদের দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা ও ভাঙচুর তুলে ধরা হয়নি। তাদের সহিংসতা প্রায়ই সাধারণ মানুষের জীবনকে ব্যাহত করে এবং সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি করে। এতকিছুর পরও বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো অত্যন্ত সংযম প্রদর্শন করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে।’
তিনি বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, মানবাধিকার এবং শ্রম অধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক সংলাপ থাকা সত্ত্বেও প্রতিবেদনে এই বিষয়ে রাষ্ট্র-সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়িয়ে বারবার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। অনুরূপ শ্রম অধিকারসংক্রান্ত বিষয়গুলো বিশেষ করে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন এবং ক্রিয়াকলাপের বিষয়ে প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি কেস উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো নিয়ে একাধিক দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’
সেহেলী সাবরীন বলেন, ‘প্রতিবেদনটি স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং কিছু সংবিধিবদ্ধ সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি মূল্যবান রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রশংসা করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সামগ্রিক প্রতিবেদনটি নোট করেছে এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার ব্যবস্থা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সব নাগরিকের মানবাধিকারের সম্পূর্ণ উপভোগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি বজায় রাখার জন্য যে কোনো পরিস্থিতিতে জড়িত থাকার জন্য উন্মুখ।’

 

সাপ্তাহিক আজকাল
সাপ্তাহিক আজকাল
এই বিভাগের আরো খবর