পোশাক সংরক্ষণে আর যেন ভুল না হয়

প্রত্যেক ব্যক্তি তার সংগৃহীত পোশাকের মাত্র ২০ শতাংশ নিয়মিত পরিধান করে। পোশাক সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি প্রথমে বিবেচনায় নিতে হয়।  প্রিয় পোশাকটি নষ্ট হয়ে যাক, এটা নিশ্চয়ই আপনি চান না! তাহলে কিছু নিয়ম মেনে চলুন। যা পোশাককে সুন্দর রাখকে। শুরুতেই ভুলগুলো খুঁজে বের করা যাক। পোশাক সংরক্ষণে আমাদের দশ রকম ভুল সচরাচর হয়েই থাকে। সেগুলো কী জেনে নিন - 

১. ভুল হ্যাঙ্গার নির্বাচন
সব হ্যাঙ্গার সমান হয় না। পোশাকের ধরন অনুযায়ি হ্যাঙ্গারের আকার, আকৃতির ভিন্নতা থাকে। সুতরাং সব পোশাকের জন্য একই রকম হ্যাঙ্গার উপযুক্ত নয়। তাই, বিভিন্ন আকৃতির হ্যাঙ্গার সংগ্রহে রাখুন। যে পোশাকগুলো সচারচর ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর জন্য নির্বাচন করতে পারেন কাঠের হ্যাঙ্গার। ধাতু বা স্টিলের হ্যাঙ্গারগুলো এড়িয়ে যেতে পারেন। তার কারণ হলো এগুলো তেজস্ক্রিয়, যা অধিকাংশ পোশাকের জন্য ক্ষতিকর। ফলে, পোশাক বা কাপড়ের আকৃতি নষ্ট হতে পারে। খুব ছোট হ্যাঙ্গার পোশাকে ভাঁজ তৈরি করে আবার হ্যাঙ্গারের আকৃতি বড় হলে কলারযুক্ত পোশাকও নষ্ট হয়। 

২. উলের পোশাক ঝুলিয়ে রাখা
উলের পোশাক বা শীতের যেকোনো পোশাক সারা বছর ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। দীর্ঘদিন এগুলো অব্যবহৃত থাকে। ভুল সংরক্ষণের ফলে এই পোশাকগুলোর  ক্ষতি হতে পারে। উলের পোশাক হ্যাঙ্গারে না রাখাটাই উত্তম। 

৩. হ্যাঙ্গারে প্যান্ট ভাঁজ করে রাখা
প্যান্ট ভাঁজ করে রাখবেন না। এতে প্যান্টে ভাঁজ পড়ে যায়। ছোট বড় খাঁজ তৈরি হয় আর ছোট বড় দাগ পড়ে। এসব ঝুঁকি থেকে প্রিয় প্যান্টকে রক্ষা করতে হ্যাঙ্গারে সোজাসুজি ঝুলিয়ে দিতে পারেন।

৪. আন্ডার গার্মেন্টস ভাঁজ 
কয়েকটি ব্রা একসঙ্গে একটির ভেতর আরেকটি সংরক্ষণ করা একটি ভুল পদ্ধতি। এগুলো যে দোকান থেকে সংগ্রহ করা হয়, সেই দোকানদারের পরামর্শ নিয়ে তার নির্দেশনা অনুযায়ী সংরক্ষণ করতে পারেন। ওয়ারড্রবে সংরক্ষণ করলে ব্রা বা অন্তর্বাসের উপর অন্য কোনো পোশাক রাখবেন না।

৫. শার্ট গাদাগাদি করে রাখা
ম্যারি কন্ডো তার সর্বাধিক বিক্রিত বই ‘দ্য লাইফ চেনজিং ম্যাজিক অব টাইডায়িং আপ’-এ লিখেছিলেন, শার্টের কাপড় উল্টে নিয়ে ভাঁজ করতে হয়। তারপর সারি সারি করে উলম্ব বা খাড়াভাবে রাখতে হবে। এককথায় ফাইলবদ্ধ করার মতো করে শার্ট সংরক্ষণ করা উচিত।

৬. ভাঁজ না করেই ওয়ারড্রবে পোশাক রাখা
সুন্দরভাবে ভাঁজ করে রাখার পরিবর্তে পোশাকগুলো যদি একটির পর একটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ওয়ারড্রবে জমা করতে থাকেন, এতে পোশাক কুঁচকে যাবে। পোশাকে সৌন্দর্য নষ্ট হবার পাশাপাশি এগুলো দুর্বল হয়ে পড়বে।

৭. ৮০/২০ নিয়ম অগ্রায্য
প্রত্যেক ব্যক্তি তার সংগৃহীত পোশাকে মাত্র ২০ শতাংশ নিয়মিত পরিধান করে। এই হিসেব অনুযায়ী, নিয়মিত ব্যবহার করতে হয় এমন পোশাক ওয়ারড্রব বা আলমারির ডান দিকে সংগ্রহ করতে হবে। যাতে পোশাকগুলো সহজে হাতের কাছে পাওয়া যায়। বাকি ৮০ শতাংশ পোশাক ওয়ারড্রবের বাম দিকে সংরক্ষণ করতে পারেন।

৮. ধোয়া ছাড়া ঋতুভিত্তিক পোশাক সংরক্ষণ
প্রতিটি পোশাক শরীরের  ঘাম, বাইরের ধুলা, বালি ধোঁয়া শোষণ করে। এগুলো ধোয়া ছাড়া দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা উচিত নয়। যেমন, শীত ঋতুর শেষে, শীতের পোশাকগুলো না ধুয়ে সংরক্ষণ করা একটি ভুল সিদ্ধান্ত।

৯. ড্রাইক্লিন করা পোশাক প্লাস্টিকে ঢেকে হ্যাঙ্গারে ঝুলানো
এই ধরণের পোশাক সচারচর ব্যবহারের তালিকায় থাকে না। স্যুট, ব্লেজার, নিয়মিত পরা হয়না এমন পোশাক ড্রাই ক্লিন করা হয়। এরপর প্লাস্টিকে ঢেকে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখলে পোশাকের ফেব্রিক নষ্ট হয়ে যায়। পোশাকের ভেতর বাতাস চলাচল বন্ধ থাকায় কাপড়ে থাকা কেমিক্যাল ছড়িয়ে পড়ে। ধুলো-বালি থেকে পোশাক রক্ষা করতে জন্য যদি প্লাস্টিকে ঢেকে রাখতেই হয়, তবে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

১০. অতিমাত্রায় ক্ষ্মার দিয়ে ধুয়ে সংরক্ষণ
ঋতু পরিবর্তনের সময় অনেক পোশাক সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। এই সময় লন্ড্রি দোকানগুলো বিভিন্ন সুবিধায় প্যাকেজ দিয়ে থাকে। নিজের দুঃশ্চিন্তা না বাড়িয়ে, কোনো লন্ড্রিতে দিয়ে ধুয়ে নিতে পারেন। তবে দীর্ঘদিন পোশাক সংরক্ষণের জন্য, অতিমাত্রায় ক্ষ্মার দিয়ে পোশাক ধোয়া ঠিক নয়। আবার দীর্ঘদিন ব্যবহার করা হবে না, এমন পোশাক হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখাও ঠিক নয়। সংরক্ষিত পোশাকের পরিমাণ খুব বেশি মনে হলে, কিছু দান করে দিতে পারেন।