বৃহস্পতিবার   ১৫ মে ২০২৫   চৈত্র ৩১ ১৪৩২   ১৭ জ্বিলকদ ১৪৪৬

সর্বশেষ:
মার্কিন যুদ্ধবিমানের ওপর উপসাগরীয় দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে মার্কিন কংগ্রেসে বিল উত্থাপন ইরান-ইয়েমেনের কাছাকাছি পারমাণবিক বোমারু বিমান মোতায়েন কফিতে মশগুল ব্রিটেনে পলাতক সাবেক মন্ত্রীরা! নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধে বাংলাদেশের ভুল চিত্র তুলে ধরেছে ভূমিকম্পে ১৭০ প্রিয়জন হারালেন এক ইমাম ইসরায়েলি হামলায় আরও ৪২ ফিলিস্তিনি নিহত ট্রাম্প কি আসলেই তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন লিবিয়ায় অপহৃত ২৩ বাংলাদেশি উদ্ধার দুদিনে নিহত ১৩, চট্টগ্রামের জাঙ্গালিয়া যেভাবে মরণফাঁদ হয়ে উঠলো বাংলাদেশের অর্থপাচার তদন্তে ব্রিটিশ এমপিদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা ভেনিজুয়েলার তেল-গ্যাস কিনলেই শুল্কারোপের হুমকি ট্রাম্পের সাভারে চলন্ত বাসে আবার ডাকাতি, চালক ও সহকারী আটক ছুটিতে এটিএম সেবা সবসময় চালু রাখার নির্দেশ উসকানিতে প্রভাবিত না হতে বললেন সেনাপ্রধান রেড ফ্ল্যাগ সতর্কতার আওতায় ২৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ এনসিপি নেতা হান্নানের পথসভায় হামলা, আহত ‘অর্ধশতাধিক’ নির্বাচনী ট্রেনে বাংলাদেশ বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্র্রঙ্কসের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত সাবওয়ে ট্রেনে সন্তান প্রসব নিউইয়র্কে আইস পুলিশের বিশাল অফিস উদ্বোধন মেয়রের মামলা প্রত্যাহারে প্রসিকিউটরের পদত্যাগ হাসিনা নিজেই হত্যার নির্দেশদাতা জন্ম নাগরিকত্ব বাতিল আদেশ আটকে দিল আদালতে নিউইয়র্কে ডিমের ডজন ১২ ডলার নিউইয়র্কে ভালোবাসা দিবস উৎযাপন আমেরিকান বাংলাদেশী টেক কোয়ালিশন’র আত্মপ্রকাশ জামালপুর সমিতির সভাপতি সিদ্দিক ও সম্পাদক জাস্টিস শেখ হাসিনার আমলে বছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বাংলাদেশিদের অস্ত্রোপচার বাতিলে কলকাতাজুড়ে হাসপাতালে হাহাকার দি‌ল্লি যাওয়া ছাড়াই পাওয়া যাবে মে‌ক্সি‌কান ভিসা বাজার থেকে উধাও বোতলজাত সয়াবিন কেউ আপনার স্ত্রীকে ‘হট’ বললে সেটা কি ভালো লাগে, প্রশ্ন সানার পাচারের ১৭ লাখ কোটি ফেরাবে কে এবাদুলের মিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হংকং-দুবাইয়ে পাচারকারীরা বেপরোয়া ছিল শেখ পরিবারের প্রশ্রয়ে সোনার দাম দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা আবু সাঈদের মৃত্যু নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য কতটুকু সত্য? দিনে মাত্র একবেলা খাচ্ছে গাজার অনেক মানুষ পছন্দের লোক নিয়োগ দিতে বদলে দেয়া হয় মেট্রোরেলের নিয়োগবিধি যানজটের কারণে নষ্ট হচ্ছে দৈনিক ১৩৯ কোটি টাকা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নজর চার খাতে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে বড় পতন হাথুরুসিংহের অপকর্ম ধামাচাপা দেন পাপন ‘ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ আমেরিকার জন্য বিশাল হুমকি হবে’ নীরবে সরবে চাঁদাবাজি পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ ইন্টারনেট ছাড়াই গুগল ম্যাপ ব্যবহারের উপায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ বাইডেনের ভাড়া ফাঁকিবাজদের ধরতে চলছে সাঁড়াশি অভিযান সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরীকে গুলি করে মরদেহ নিয়ে গেল বিএসএফ ভিসা ফি ছাড়াই এবার পাকিস্তান যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাফি আটক সাবেক আইজিপি বেনজীরের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ব্যয়বহুল সফরে ২৬ ব্যাংক এমডি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ সাবেক সেনাপ্রধান ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা দিনের বেলায় মরুভূমির চেয়েও উত্তপ্ত চাঁদ ডেঙ্গুতে একদিনে ১১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৩২৭ ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠির সত্যতা চ্যালেঞ্জ করে ২৬৭ প্রবাসী বাংলাদেশি অক্টোবরের মধ্যেই ‘আন্দোলনের ফসল’ ঘরে তুলতে চায় বিএনপি শর্তসাপেক্ষে নিউইয়র্কে মসজিদে আজানের অনুমতি বাংলাদেশ থেকে বিনা খরচে মালয়েশিয়া গেলেন ৩১ কর্মী খেলাপি ঋণ কমাতে কঠোর নির্দেশ জার্মানে পাঁচ বছর বাস করলেই পাওয়া যাবে নাগরিকত্ব বিএনপি-জাপা বৈঠক সিঙ্গাপুরে বাইডেন প্রশাসনকে হাসিনার কড়া বার্তা এবার হাসিনার পাশে রাশিয়া বঙ্গ সম্মেলনের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক ঘটনা স্টুডেন্ট লোন মওকুফ প্রস্তাব বাতিল বাংলাদেশিদের ওপর উপর্যুপরি হামলা যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আগে নিজ দেশে মানবাধিকার রক্ষা করা: শেখ হাসিনা তামিমের অবসর অভিযোগের তীর পাপনের দিকে নিউইয়র্কে এখন চোরের উপদ্রুব যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৭তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে হাতিরঝিলের ক্ষতি হবেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধবিরতি, পাঁচ দিনে নিহত ৩৫ যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটছে বাখমুত থেকে পিছু হটেছে সেনারা, স্বীকার করল রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণ ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সুপার সাইক্লোন হবে না, দাবি আবহাওয়া অধিদপ্তরের সুদানে যুদ্ধে সাড়ে ৪ লাখ শিশু বাস্তুচ্যুত : জাতিসংঘ পারস্য উপসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় খেলাপি ঋণে দ্বিতীয় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে সারা দেশে ভোগান্তি রুশ হামলা সামলে ফের বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে যাচ্ছে ইউক্রেন রিজার্ভ সংকট, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারের দুর্বল নীতিও দায়ী পূজার ‘জিন’ একা দেখতে পারলেই মিলবে লাখ টাকা! সিরিয়ায় আর্টিলারি হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল বাইডেন না দাঁড়ালে প্রার্থী হবেন কে নাইজেরিয়ায় ৭৪ জনকে গুলি করে হত্যা ভারতে বাড়ছে করোনা, বিধিনিষেধ জারি তিন রাজ্যে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন লুলা যে কোনো দিন খুলবে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল দেশে করোনার নতুন ধরন, সতর্কতা বিএনপির সব পদ থেকে বহিষ্কার আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করবো: মাহিয়া মাহি মর্মান্তিক, মেয়েটিকে ১২ কিলোমিটার টেনে নিয়ে গেল ঘাতক গাড়ি! স্ট্যামফোর্ড-আশাসহ ৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বর্ষবরণে বায়ু-শব্দদূষণ জনস্বাস্থ্যে ধাক্কা কোনো ভুল মানুষকে পাশে রাখতে চাই না বাসস্থানের চরম সংকটে নিউইয়র্কবাসী ট্রাকসেল লাইনে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত একাকার! ছুটি ৬ মাসের বেশি হলে কুয়েতের ভিসা বাতিল ১০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত চুক্তিতে বিয়ে করে ইউরোপে পাড়ি আইফোন ১৪ প্রোর ক্যামেরায় নতুন দুই সমস্যা পায়ের কিছু অংশ কাটা হলো গায়ক আকবরের ১৫ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১০০ কোটি ডলার নারী ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে আবার বাড়লো স্বর্ণের দাম
১৮৮

গর্ভকালীন সেবা সম্পর্কে ধারণা নেই তিস্তা চরের মায়েদের

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০ জানুয়ারি ২০১৯  

নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীর মাঝে চরই হল পূর্ব ছাতুনামা চর। এর পূর্বে সাড়ে তিন কিলোমিটার তিস্তা নদী। তিস্তা নদী পার হয়ে হাতিবান্ধা।

 

পূর্ব ছাতুনামা চরের পশ্চিমে চার কিলোমিটার তিস্তা নদী পার হয়ে ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের সোনাখুলি আশ্রয়ণ প্রকল্প। এর পূর্ব দিকে তিস্তা নদীর তিনটি শাখা নদী পার হতে হয়। এই গ্রামের বিবাহিতরা পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি কি জানেন না। এমনকি গর্ভকালীন সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্নও হন না তারা। লিখেছেন- রীতা ভৌমিক

অভাবের সংসার, নূন আনতে পানতা ফুরায়। বারো বছর বয়সে শম্পার বিয়ে দেয় বাবা-মা। শ্বশুরবাড়ির অবস্থাও ভালো না। ওর স্বামী নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতুনামা গ্রামে দরজির কাজ করে। যা রোজগার করে তাতে সংসার চলে না।

কোনোরকমে দিন পার করা আর কি! বিয়ের বছর দুয়েকের মধ্যে শম্পা গর্ভবতী হয়। কিন্তু আশপাশে কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় গর্ভবতী হওয়ার পরও গর্ভকালীন চেকআপ করাতে পারেননি।

এদিকে বন্যায় ঘর ডুবে যায়। ঘরে পরিমিত খাবার নেই। সপ্তাহে একদিন সকালে ডিম জুটত কি জুটত না। দুপুরে আলু ভর্তা ভাত, ডাল। সপ্তাহে অথবা মাসে একদিন এক টুকরা গরুর গোশত জোটাতে পারতেন কি পারতেন না। রাতে শাক দিয়ে ভাত খেতেন। গর্ভকালীন সময়ে কোনো ফল খেতে পাননি।

এ প্রসঙ্গে শম্পা বেগম বলেন, তিস্তা নদীর পাড় থেকে চার কিলোমিটার দূরে চর এলাকায় থাকি। দশ জনের যৌথ পরিবার। এখানে কোনো ডাক্তার নাই। কমিউনিটি ক্লিনিকে যাওয়ার জন্য সবসময় নৌকা পাওয়া যায় না। দশ মাসে প্রসব ব্যথা উঠে। দুই দিন প্রচণ্ড ব্যথা ছিল।

যাতায়াতের সমস্যার কারণে হাসপাতালে যাওয়া হয় না। এদিকে স্বামী বাড়িতে নাই। আমার বাপের বাড়ি লালমনিরহাটের চৌদ্দবাড়ি বেড়াতে গেছিল। প্রসব ব্যথা না কমায় শ্বশুর-শাশুড়ি গ্রামীণ ডাক্তাররে খবর দিয়া বাড়িতে নিয়া আসেন। ডাক্তার স্যালাইন দেয়, সুঁই দেয়। এরপর ব্যথা বাড়ে। সকাল আটটার দিকে আপনা-আপনি বাচ্চা বাইর হইয়া আসে। বাচ্চা আকারে বড় হয়। বাচ্চা তাকিয়েছিল কিন্তু কান্না করে নাই।

আমার শরীরের অবস্থাও ভালো না। এই অবস্থায় ঘাড়ে কইর‌্যা বাচ্চারে নিয়া চার মাইল হাঁইট্যা নদীর পাড়ে পৌঁছাই। সবসময় নৌকা পাওয়া যায় না। চার ঘণ্টা পর নৌকা পাই। নদী পাড় হইয়া প্রথমে সাইকেল, পরে ভ্যানে চইড়্যা চৌদ্দ কিলোমিটার দূরে জলঢাকা হাসপাতালে যাই। জলঢাকায় বাচ্চার চিকিৎসা না হওয়ায় সেখান থিক্যা পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে রংপুর শিশু হাসপাতালে যাই।

জনপ্রতি মাইক্রো ভাড়া কইর‌্যা সেইখানে পৌঁছাইতে পৌঁছাইতে রাত আটটা বাইজ্যা যায়। ডাক্তার পরীক্ষা কইর‌্যা বলে বাচ্চা জন্মের পর নিঃশ্বাস নিতে পারে নাই। এই বাচ্চা বাঁচবে না। বাচ্চাকে আর বাঁচাতে পারিনি। আমার কোল খালি করে চইল্যা গেল।

নয় মাসের গর্ভবতী নীলফামারীর ডিমলা থানার পূর্ব ছাতুনামা গ্রামের আরেক গৃহবধূ নূরজাহান বেগম। বার বছরের ছেলে, দশ বছরের মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে ঘর তুলে থাকেন। চারদিকে পানি আর পানি। মাঝখানে ছোট্ট চর। এরই মধ্যে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে তারা জীবন কাটাচ্ছেন। নদীভাঙনে ঘরবাড়ি সর্বস্ব হারিয়েছেন তিনি।

অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে তার। বারো বছর বয়সেই প্রথম গর্ভবতী হয়। তৃতীয়বারের মতো গর্ভবতী হয়েছেন নূরজাহান। দু’বার গর্ভবতী হলেও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হননি তিনি। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কেও ধারণা নেই তার।

এবার গর্ভবতী হলেও প্রথম দিকে চিকিৎসক দিয়ে কোনো চেকআপ করাননি। কিন্তু নয় মাসে পড়তেই পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। তাই এবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

এ প্রসঙ্গে নূরজাহান বেগম (২৪) বলেন, চার কিলোমিটার হাঁটা পথ। তল প্যাটে ব্যথা নিয়া চার কিলোমিটার হাঁইট্যা নদীর পাড়ে যাই। এরপর নৌকায় তিস্তা নদী পার হই। এরপর ভ্যানে চইড়্যা জলঢাকা যাই।

ঐখানকার একটা ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাই। কম্পিউটারে দেখতে পাই আমার বাচ্চা উল্টা হইয়া আছে। ডাক্তাররে ৪৫০ টাকা দিতে হয়। ডাক্তার আমারে দেইখ্যা কোনো ওষুধ দেয় নাই।

এই গ্রামেরই আরেক গৃহবধূ মোসাস্মৎ সাজেদা আক্তার। তার তিন সন্তান। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ের বয়স নয় আর মেজ মেয়ের সাড়ে তিন বছর, তৃতীয় ছেলের বয়স চার মাস। যাতায়াতের সমস্যার কারণে এই গ্রামের গৃহবধূরা পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করেন না। তিন সন্তানের জন্মের সময় কোনো চেকআপও করাননি তিনি। কিন্তু তৃতীয় সন্তানের জন্মের সময় প্রসবকালীন সমস্যা দেখা দেয়।

এ প্রসঙ্গে মোসাস্মৎ সাজেদা আক্তার (২৬) বলেন, নিজের জায়গা জমি নেই। স্বামী অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে। তিনবেলা খাবারই জোটে না। রুটি খাইয়াই বেশি থাকতাম। তিনবেলা ভাত জোটে না।

শাক দিয়া একবেলা কয়টা ভাত খামু তাও পারতাম না। শাক খাইলে পেট ব্যথা করত। মাছ-মাংস-ডিম তো চোখেই দেখি নাই। খাওনই জোটে না ডাক্তার দেখানোর সামর্থ্য কই? নয় মাসে প্রচণ্ড কোমর ব্যথা করে। আমার জাকে কোমর ব্যথার কথা জানাই। ব্যথায় জ্ঞান হারাই। দুই দিন এভাবেই পইড়্যাছিলাম। ডাক্তারের কাছে আমারে নিয়া যাবে টাকা নাই।

ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়ন থেকে ডাক্তাররে ফোন করা হয়। কিন্তু ওই ডাক্তার কিছুতেই আসতে রাজি হয় না। অনেক অনুনয়-বিনয় করে তাকে আনা হয়। দু’দিন পর তিনি এসে আমাকে স্যালাইন দিলে বাচ্চা হয় কিন্তু ফুল পড়ে না। জ্ঞান ফিরে।

ডাক্তার বলেন, ‘আমার দ্বারা সম্ভব না। রংপুর হাসপাতালে নিয়া যান।’ মেম্বররে ফোন করলে মেম্বর বলেন, ‘কান্ধে কইর‌্যা রোগী নিয়া আসো।’ এই অবস্থায় মেম্বর ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা রিনা বেগমকে ফোন করেন। তিনি পূর্ব ছাতুনামা চরে আসতে রাজি হন না। অবস্থা খারাপের দিকে গেলে তাকে আনতে লোক পাঠানো হয়।

এতেও রাজি হন না। ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমানের সুপারিশে তিনি রাজি হন আসতে। তিনি হাত দিয়ে ফুল বের করেন। কিন্তু পাঁচ হাজার টাকার নিচে তিনি নেবেন না। ঘরে টাকা নেই। আমার জা অনেক কষ্টে শতকরা বিশ টাকা হারে সুদে তিন হাজার টাকা আইন্যা তাকে দেন।

পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা রিনা বেগম সম্পর্কে একই কথা বললেন মোসাস্মৎ সাজেদা আক্তারের জা পারভীন আক্তার। তার মতে, ডাক্তার এলেও বাচ্চা হওয়ার পর ফুল পড়ে না। ডাক্তার চইল্যা যায়। আমি বাচ্চার নাড়ি কাইট্যা বন্ধন কইর‌্যা বাচ্চা কোলে নেই।

দুই দিন হইয়া যায় আমার জায়ের ফুল বাইর হয় না। অজ্ঞান হইয়া পইড়া রইছে। অনেক তদবির কইর‌্যা পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা রিনা বেগমরে ডাইক্যা আনি। তিনি রাত সাড়ে নয়টা নাগাদ তার স্বামীর সঙ্গে হুন্ডায় চইড়্যা আসেন। হাত দিয়া ফুল বাইর কইর‌্যা আনেন। আমার জায়ের জীবন বাঁচে।

কিন্তু ফুল বাইর কইর‌্যা দেয়া বাবদ পাঁচ হাজার টাকা চায়। ঘরে টাকা নাই। এ নিয়া তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। পরদিন তিন হাজার টাকা দেয়ায় রাজি হইলে রাত সাড়ে দশটার দিকে তিনি ফিরা যান। পরদিন সুদে তিন হাজার টাকা আইন্যা তারে দেই।

এ ব্যাপারে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা রিনা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

এ প্রসঙ্গে ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা রিনা বেগম প্রথমে পূর্ব ছাতুনামা চরে যেতে রাজি হন না।

ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান ফোন করে অনুরোধ করলে তিনি তার স্বামী লেবুকে নিয়ে রাত সাড়ে নয়টা নাগাদ মোটরসাইকেলে প্রসূতির বাড়িতে যান। চৈত্র মাস হওয়ায় নদীতে পানি ছিল না।

সেখানে যাওয়ার আগে তিনি আমাকে একটা প্রেসক্রিপশন করে দেন। আমি প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী লোক মারফত ওষুধ পাঠিয়ে দিই। পরে টাকা নেয়ার ঘটনাটি জানতে পারি।

ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বললেন অন্য কথা, তিনি রিনা বেগমের টাকা নেয়ার তথ্য সম্পর্কে অবগত নন। তবে এ বছরের জুন মাসের শেষদিকে রেজুলেশন পাস করিয়েছেন পূর্ব ছাতুনামা চরে প্রতি মাসে গর্ভবতী মায়েদের জন্য ক্যাম্প করবেন।

ডিমলার জলঢাকার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান পাটোয়ারীর মতে, নীলফামারীর জলঢাকা, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর, নীলফামারী সদর, ডোমার এই উপজেলাগুলোতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গর্ভবতীদের প্রসব সেবা দেয়া হয়।

পূর্ব ছাতুনামা চর একটি দুর্গত এলাকা। এখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই শোচনীয়। এই এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দম্পতির সংখ্যা গণনা করেছি। এ বছরের জুলাই মাসে ৩ এর খ ইউনিটে মোট দম্পতি ৮৩১ জন। পূর্ব ছাতুনামা চরে সক্ষম দম্পতি ১৪৭ জন।

পূর্ব ছাতুনামা চর ও আরেকটি চরে গর্ভবতী ৪২ জন। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনার কর্মকর্তারা এলাকার কিশোরী, বিবাহিতা ও গর্ভবতীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে পারেন।

স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এক মাস পরপর সচেতনতামূলক ক্যাম্পিং করা যেতে পারে। এরকম দুর্গত এলাকাগুলোতে স্যাটেলাইট কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি করতে হবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পরিচালক মোহাম্মদ শরীফ এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের দেশে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা যারা আছেন, তাদের অনেকেই দায়িত্বের সঙ্গে কাজ করছেন। তবে প্রসব সেবা প্রদানের পর রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। জবাবদিহিতায় আনতে হবে। এ ধরনের ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ব্যবস্থা নিই।

যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। মনিটরিং সুপারভিশন ঠিকভাবে করলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। এসব সমস্যা নিরসনে সেনসেরেটর মিটিং করছি প্রত্যেক উপজেলাতে।

এক বছরে ৯২টি উপজেলাতে সেনসেরেটর মিটিং হয়েছে। এই মিটিংগুলোতে স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মহিলা মেম্বার, উপজেলার পরিবার পরিকল্পনার কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, ইউএনও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন। সেখানে তিনটি কথা বলা হয়েছে- এক. বাড়িতে প্রসব না করিয়ে হাসপাতালে প্রসব করানো, দুই. ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে প্রসব করানো এবং তিন. বাল্যবিয়ে রোধ করা। আমাদের আরেকটা সমস্যা ছিল, কর্মী সংকট। অনেকদিন পর্যন্ত নিয়োগ ছিল না। শতকরা ৪০ ভাগ পদ শূন্য ছিল।

আগামী মাস তিনেকের মধ্যে নিয়োগ হলে সমস্যাগুলো দূর হবে। মাতৃস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছি, আমার অপারেশনে দুর্গত এলাকায় গর্ভবতীদের হাসপাতালে আনা-নেয়ার জন্য মাথাপিছু এক হাজার টাকা ধরা হয়েছে। আশা করি গর্ভবতী মায়েরা হাসপাতালমুখী হবেন।

সাপ্তাহিক আজকাল
সাপ্তাহিক আজকাল
এই বিভাগের আরো খবর