‘কারো কাছে হাত পাতুম না, কারো দয়ায় বাঁচুম না’
নিজস্ব প্রতিবেদক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৩:৪৪ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ শনিবার

‘ভাল আছি, শান্তিতে আছি। করলে করলাম না করলে নাই। কাইলকা মেঘ আছিলো আসি নাই। আল্লায় যেমনে চালায় তেমনে চলমু কিন্তু হাত পাতুম না, মাইনসের দয়ায় বাঁচুম না’। বলছিলেন নারায়ণগঞ্জের জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক সংগ্রামী নারী কমলা।
যার আত্ম-সম্মানবোধ তার বয়সের সীমাবদ্ধতাকেও হার মানাতে বাধ্য করেছে। বয়স আনুমানিক ৭০এর বেশি। আসল নাম-মোসা. ফজিলত, নারায়ণগঞ্জের সকলের কাছে কমলা নামেই পরিচিত। কমলা চাঁদপুর মতলব থেকে পাকিস্তান আমলে স্বামী হাকিম ভুঁইয়ার সাথে ঢাকা আসেন। ঢাকা আসার কিছুদিন পর স্বামী তাকে ছেড়ে ২য় বিয়ে করেন। কমলা ছাড়াও হাকিম ভুঁইয়ার আরো নয় জন স্ত্রী ছিল। হাকিম ভুঁইয়া ২য় বিয়ে করলে অভিমানে তিনি স্বামীর সাথে আর যোগাযোগ রাখেননি।
হাকিম ভুঁইয়া এখন কোথায় আছেন জানতে চাইলে তিনি অনেকটা ঠাট্টার ছলে বলেন, আজিমপুরে। পরে বুঝিয়ে বলেন মারা গেছে। দাফন করা হয়েছে আজিমপুর কবরস্থানে। অভিমান থেকেই স্বামীকে ছেড়ে চলে আসেন নারায়ণগঞ্জ এর গলাচিপায় তার এক চাচাতো ভাইয়ের কাছে। জীবিকার জন্য কাজ নেন এক বাসায়। সেখানেও বিধীবাম। যে বাসায় কাজ করতেন হঠাৎ মারা গেলেন সেই বাসার কর্তা। তারপর দেওভোগ পাকারোডে এসে পড়েন।
বর্তমানে তিনি দেওভোগের পাকা রোড এলাকায়ই বসবাস করেন। তিনি নতুন করে শুরু করলেন আমড়া, শশা, গাজর বিক্রি। আজ প্রায় ৩৫ বছর তিনি এই ব্যবসায় আছেন। চাষাঢ়া ২নং রেলগেট সংলগ্ন বাদশা স্টোরের পাশে বসে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিক্রি করেন আমড়া, শশা, গাজর। বাদশা স্টোরের তপু জানান প্রতি বৃহস্পতিবার এখানে আসা ফকিরদের বকাঝকা করেন এই বৃদ্ধা। বলেন, ‘ওই জোয়ান বেডিরা কাম করতে পারো না? হয়রান লাগে?’
মোসা. কমলা নিজের জীবনের কথা বলতে বলতে এক সময় অনেক দুঃখ ভারাক্রান্ত কণ্ঠে জানান, জন্মেই মাকে হারিয়েছেন, বড় হয়েছেন নানী-খালাদের কাছে। বাবা জাহাজে কাজ করতেন। কোন এক ঝড়ে তার বাবা দু,পা হারায়। কথার এক পর্যায়ে তাকে যখন প্রশ্ন করা হয় আবার বিয়ে করেন নি কেন? উত্তরে এই বৃদ্ধা হেসে দিয়ে বলেন, ‘একটা বিয়া করমু সাদা কাপড় পইড়া। ওইডাই আসল বিয়া।’ দগুবাবুর বাজার থেকে রোজ নিজে গিয়ে সবজি কেনেন তিনি।
ব্যবসার বর্তমান অবস্থা কেমন এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, শীতকাল তাই বিক্রি কম।