ভোটের মাঠে শামীম, বিএনপি নেতার বাড়িতে ধর্ণা দিচ্ছেন কাসেমী
নিজস্ব প্রতিবেদক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৩:৫৪ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই নৌকার স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের নির্বাচনী এলাকা। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী শামীম ওসমানের পক্ষে দিন-রাত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তারা নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের কাছে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে মাঠে রয়েছেন শামীম ওসমানের সহধর্মিণী সালমা ওসমান লিপি।
তিনি প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনী এলাকার কোথাও না কোথাও গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করছেন। এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ম্যানেজ করতেই দিন পার করছেন। নেতাদের বাড়ি বাড়ি দৌড়ঝাঁপ করেও তাদের মাঠে নামাতে পারছেন না। নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেও তার সঙ্গে এই আসনে সংশ্লিষ্ট বিএনপির কোনো শীর্ষ নেতাকে তার সঙ্গে অথবা আলাদা ভাবে ধানের শীষের জন্য ভোট চাইতে দেখা যায়নি।
ফলে হতাশা দানা বাঁধতে শুরু করেছে বিএনপি শিবিরে। যদিও শুরু থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে মুফতি কাসেমী পছন্দের প্রার্থী তালিকায় স্থান পাননি। শেষ সময়ে দলীয় নেতাকর্মীদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসেবে তাকে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনটাই মনে করছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
দলীয় সূত্রমতে, অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই এই আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পেয়ে যান। কিন্তু মনোনয়ন পেলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা কাসেমীর থেকে বিমুখ রয়েছেন। কারণ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. শাহ আলম, সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। কিন্তু ২৭শে নভেম্বর বিএনপি শাহ আলম ও মামুন মাহমুদকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেয়।
তবে সবাই ধরে নিয়েছিল শেষ পর্যন্ত শাহ আলমই এখানে বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন। এদিকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে গিয়াস উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকায় নাটকীয়ভাবে এখানে ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন দেয়া হয় মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে। এতে মুষড়ে পড়ে বিএনপির দুই প্রার্থী শাহ আলম ও মামুন মাহমুদ এবং তাদের সমর্থকরা। অন্যদিকে শেষ পর্যন্ত গিয়াস উদ্দিন সাহস করেন নি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার। তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।
ওদিকে বিএনপির সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে মনোনয়ন পাবার পরেও ৮ দিন কোনো প্রচারণা চালান নি মুফতি মনির হোসাইন। বরং তিনি নির্বাচনী পোস্টার ছাপিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেন। যদিও পরবর্তীতে চাপে পড়ে ওই পোস্টার বাতিল করে নতুন করে পোস্টার ছাপিয়ে নিয়ে আসেন। কিন্তু তাতেও বিএনপির নেতাকর্মীদের মন গলেনি। তাই ১৫ই ডিসেম্বর মুফতি কাসেমী ছুটে যান বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা তৈমূর আলমের বাসায়।
সেখানে গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেন। তৈমূর আলম তাকে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু গত ৪ দিনেও তৈমূর বা তার অনুসারী কোনো নেতাকর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি কাসেমীর পক্ষে ভোট চাইতে। এরপর ১৮ই ডিসেম্বর কাসেমী ছুটে যান সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে। সেখানে তাদের মধ্যে আলোচনা হলেও গিয়াস উদ্দিনকে কাসেমীর সঙ্গে বা পক্ষে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। যদিও ১৭ই ডিসেম্বর গিয়াস উদ্দিনের দুই ছেলেকে শামীম ওসমানের স্ত্রী সালমা ওসমান লিপির সঙ্গে প্রকাশ্যে গণসংযোগে দেখা গেছে। এর আগে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে কাসেমী নগরীর চাষাঢ়ায় বিজয় স্তম্ভে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে যান। সেখানে একই সময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বিজয় স্তম্ভে উপস্থিত থাকলেও তাদের মধ্যে কোনো কথা হয়নি। যেন কেউ কাউকে চিনেন না। ফলে নেতাদের ম্যানেজ করতেই কাসেমীর সময় পার হচ্ছে। অন্যদিকে শীর্ষ নেতাদের বাড়ি বাড়ি তার দৌড়ঝাঁপ আপাতত কোনো কাজে আসছে না।
