শামীম ওসমানের হুশিয়ারী, বৃহত্তর সমাবেশ করার ঘোষনা
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১২:৪০ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ রোববার
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, দলের মধ্যে অভ্যন্তরীন কোন্দল সৃষ্টিকারীদের কোন ছাড় দেবো না। অন্য দিক দিয়ে লাইন কইরা কেউ নেতা হইতে চাইলে পারবেন না। এই হাতের ফাঁক দিয়ে বের হইয়া কেউ নেতা হইতে পারবেন না। একসাথে চলবো, একসাথে বাঁচবো, একসাথে মরবো।
২ মার্চ শহরের ডিআইটি এলাকায় বৃহত্তর সমাবেশ করা হবে। যারা আমাদের দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বলেন তাদের আঙ্গুল দাবিয়ে দিতে চাই ওই দিনের সমাবেশে। তাদের জানিয়ে দিতে চাই, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের ছিলো, আছে। তারাই আওয়ামী লীগ করবে যারা সাচ্চা আওয়ামী লীগার।
দিনের বেলা বিএনপি রাতের বেলা জামাত করে না তারাই আওয়ামী লীগ করবে। তাদের হাতেই আওয়ামী লীগ তুলে দেবো। নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীদের রাজপথে দখলে রাখার ক্ষমতা পূর্বেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। আমরা কারোর উপর ভরসা করে আওয়ামীলীগ করে না। আমরা কেবল শেখ হাসিনার নির্দেশেই চলি।
শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ফতুল্লার নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল (নম) পার্কে নেতাকর্মীদের সাথে নির্বাচন পরবর্তী এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের উদ্দেশ্যে শামীম ওসমান এ কর্মীসভার আহবান করেন। এতে আওয়ামীলীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের জেলা, থানা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহন করেন।
এ সময় ২ মার্চের জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিনত করতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে প্রস্তুতি নেয়ার আহবানও জানান শামীম ওসমান।
মতবিনিময় সভায় শামীম ওসমান মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে বলেন, সুশাসনের মূল ভিত্তি হচ্ছে মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ইভটিজিংমুক্ত একটি সমাজ ব্যবস্থা। প্রশাসনের পাশাপাশি এটা আমাদেরও বড় দায়িত্ব। দলের কোন বড় নেতা-কর্মীও যদি মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির সাথে জড়িত থাকে তাহলে এর দায়-দায়িত্ব আমরা নেব না। আমরা অচিরেই জনগণকে সাথে নিয়ে এর বিরুদ্ধে মাঠে নামব।
সাত খুনের ঘটনার কথা উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জ বারবার কলংকিত হয়েছে। আমরা লজ্জিত হয়েছি। অন্য মানুষরা এখানে এসে ঘটনা ঘটিয়েছে। রক্ষক ভক্ষক হয়েছে। রক্ষক ভক্ষক হয়ে নিজের পকেট ভরবেন আর দায় দায়িত্ব শেখ হাসিনার কর্মীরা নেবে, তা হতে দেয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু লোক চেষ্টা করবে দ্বন্দ সৃষ্টি করার জন্য। অভিযোগ থাকলে আমাকে বলবেন। অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব কেউ করবেন না। দলের সমস্যা দলের সিনিয়র নেতারাই সমাধান করবে, বাইরের কেউ এসে সমাধান করবে না।
যদি কেউ মনে করেন, শেখ হাসিনার সরকারকে আমরা ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়েছি, তাহলে তাদের বলবো, আপনারা এই কথা মনে কইরেন না। অন্তত নারায়ণগঞ্জে যেন এই কথা কেউ মনে না করেন।
সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে আমাদেরকেই মাঠে নামতে হবে। তাই আমরা অচিরেই মাঠে নামবো। আমি প্রতিটা ঘরে ঘরে আবার যাবো। আমরা পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নম্বরের তালিকা জনগণের ঘরে ঘরে গিয়ে দিয়ে আসবো। যাতে কেউ আশেপাশে কোন দুর্নীতি দেখলে তারা প্রশাসনকে দ্রুত জানাতে পারে।
নিজের ব্যক্তিগত অবস্থান প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, বিগত সময়ে আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাহাবুবুল আলম হানিফ ভাইয়ের সামনে আমাকে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির পদসহ মন্ত্রিত্ব নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমি মন্ত্রীত্ব নেই নি।
কারন শেখ হাসিনার মন্ত্রীসভায় থাকার যোগ্যতা আমার হয়নি বলে আমি মনে করি। তাই আমার কাছে মন্ত্রীত্ব বড় নয়, জনগণের পাশে থাকাই আমার কাছে বড় ব্যাপার। আমি মন্ত্রী হিসেবে নয়, আমার নেত্রী শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবেই থাকতে চাই।
আমি দূরে যেতে চাই না। আমি আমার নারায়ণগঞ্জেই থাকতে চাই। চাওয়া-পাওয়ার আশা করি না। তাই আমি কাউকে ট্যাক্স টোকেন দিয়ে রাজনীতি করবো না।
তিনি বলেন, মানুষ যেভাবে আমাদের বিজয়ী করেছে তাই আমাদের দায়িত্ব এখন দশগুণ বেড়ে গেছে। মানুষ উন্নয়ন চায় কিন্তু উন্নয়ন বেসিক না। মানুষ মূলত চায় সুশাসন।
সুশাসনের মূল ভিত্তি হচ্ছে মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি মুক্ত একটি সমাজ ব্যবস্থা। এই সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রশাসন একটা অংশ কিন্তু সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে আওয়ামীলীগকেই। অন্য কেউ এটা করবে না।
শামীম ওসমান বলেন, আপনি যত ত্যাগী নেতাই হোন না কেন, যত বড় নেতাই হোন না কেন আপনি মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির সাথে থাকলে তার দায় দায়িত্ব আমরা নেবো না। বর্তমান সমাজে ঘুষ একটি মারাত্বক ব্যাধিতে পরিনত হয়েছে। সমাজকে ঘুষমুক্ত করার দায়িত্ব আমাদের এবং আমরা এটা করব।
সে যে-ই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের সরকারি আমলাদের হুঁশিয়ার করে শামীম ওসমান বলেন, কেউ যদি মনে করেন তারা জনগণের সেবক না, জনগণের শাসক-সেটা অন্য জায়গায় চিন্তা করবেন। পরিস্কার বলতে চাই, নারায়ণগঞ্জে না। অন্যখানে গিয়ে করেন। আমাদের নারায়ণগঞ্জকে আমরাই সুন্দর করব।
শামীম ওসমান এসময় আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরে বলেন, ডিএনডি প্রকল্পকে ঢাকার চেয়েও আধুনিক এবং হাতিরঝিলের চেয়েও সুন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
এছাড়া রাস্তা-ঘাটের উন্নয়নসহ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামে একটি আন্তর্জাতিকমানের বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ রেহানার নামে একটি আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ, শেখ রাসেলের নামে একটি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এবং শেখ হাসিনার নামে একটি আইটি হাইটেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব করার কথাও জানান তিনি।
কিছু পাওয়ার জন্য এবং ভোগের জন্য রাজনীতি করি না মন্তব্য করে সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন, খাওয়ার জন্য যেহেতু রাজনীতি করি না, ভোগের জন্য রাজনীতি করি না তাই নারায়ণগঞ্জে কাউকে টেক্স দিয়ে রাজনীতি করবো না। যা বলবো নেতৃত্ব দিয়েই করবো। যা করবো নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য করবো। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য করবো।
ত্যাগী নেতাকর্মীদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের পাশে আমাদের দাঁড়ানো উচিৎ সবার আগে। তাদের পাশে দাঁড়ানোটা আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আপনারা তাদের চিহ্নিত করুন, আমি আবারও বসবো। আপনাদের কথা শুনবো। আমি আপনাদের পাশে থাকবো।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফুল্লাহ বাদল, সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া, জেলা আদালতের পিপি ও আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াজেদ আলী খোকন, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি চন্দন শীল, যুগ্ম সম্পাদক শাহ্ নিজাম, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু ভূইয়া, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. জুয়েল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম রাফেল প্রধান, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, সাধারণ সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দু প্রমুখ।
