শনিবার   ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ২১ ১৪৩২   ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

আশ্রয়প্রার্থী অনেক বাংলাদেশি ফিরে যাচ্ছেন

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:২৯ এএম, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ শনিবার


#    যুক্তরাষ্ট্রে এসাইলাম আবেদন স্থগিত
#   ৩০ দেশের নাগরিকদের ভিসা নয়
#    বেনিফিট বাতিল
#   ইমিগ্রেশন কোর্টে গেলেই গ্রেফতার

 
 
এসাইলাম আবেদন গ্রহন স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পেন্ডিআবেদন ফাইলে চিরুণী বাছাই হচ্ছে। ফাইলের প্রতিটি ঘটনা ও তথ্য খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় এসাইলাম আবেদনগুলো নাকচ হচ্ছে দ্রুতগতিতে। ইমিগ্রেশন কোর্টে হেয়ারিং এর জন্য গেলেও আবেদনকারীদের ইমিগ্রেশন পুলিশ (আইস পুলিশ) গ্রেফতার করছে। ভয়ে অনেকে কোর্টে যাচ্ছেন না। ইতোমধ্যেই এসাইলাম আবেদনকারী অনেক বাংলাদেশি স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেছেন। গত ৩ মাসে ১৫ থেকে ২০ জন প্রবাসী বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেন। তাদের সকলেরই এসাইলাম আবেদন ইমিগ্রেশন কোর্টে পেন্ডিং ছিল। নতুন করে এসাইলাম আবেদন স্থগিত ও পেন্ডিং আবেদনগুলো কঠোরভাবে খতিয়ে দেখার ঘোষণায় অভিবাসীদে মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের চিন্তাভাবনা করছেন। আবার অনেকে ট্রাম্প জমানার শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান। ২০২৮ সালে নতুন প্রেসিডেন্ট আসার পর সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছেন। আইস পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে এসাইলাম আবেদনকারীদের অধিকাংশই কোর্টে যাচ্ছেন না। এটর্নির মাধ্যমে হেয়ারিং এর তারিখ পরিবর্তন করছেন। বার বার তারিখ পরিবর্তনে এটর্নিরাও দু’হাতে কামিয়ে নিচ্ছেন। 

এদিকে ৩০টি দেশের নাগরিকরা আমেরিকার ভিসা পাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এসব দেশের নাগরিকদেও এসাইলাম, গ্রীণ কার্ড ও নাগরিকত্ব আবেদন প্রক্রিয়াও স্থগিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএসসিআইএস। ট্রাম্প্ এরমধ্যে ১৯টি দেশের নাম ঘোষণা করেছেন। আরও ১১টি দেশের নাম সহসাই ঘোষণা করা হবে।  ওয়াশিংটন ডিসিতে গুলিবর্ষণে দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্য আহত হওয়ার ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে এসাইলাম আবেদন প্রক্রিয়া থমকে গেছে। মার্কিন সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস ঘোষণা করেছে, এসাইলামের জমে থাকা পুরনো আবেদনগুলো সর্বোচ্চ মানের নিরাপত্তা মূল্যায়ন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো নতুন আবেদন গ্রহন হবে না। 
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম বলেছেন, নতুন মানদণ্ডে ব্যাকলগ নিষ্পত্তি হলেই এসাইলাম আবার শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, ন্যাশনাল গার্ডে গুলিবর্ষণের সন্দেহভাজন আফগান নাগরিক লাখানওয়াল যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরই উগ্রপন্থার প্রভাবে পড়েছেন-এমনটাই তদন্তকারীদের প্রাথমিক ধারণা। এনবিসি নিউজ জানিয়েছে, তিনি বাইডেন প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকেন, পরে ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে তার আশ্রয় অনুমোদিত হয়। আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর হয়ে কাজ করার কারণে তিনি আগেই বিস্তৃত যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন-এই তথ্যও প্রতিবেদনে এসেছে। এখন তাকে ফার্স্ট-ডিগ্রি হত্যার অভিযোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
যুদ্ধের আগুন, ধর্মীয় নিপীড়ন ও রাজনৈতিক অত্যাচার থেকে বাঁচতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন হাজার হাজার আশ্রয়প্রার্থী। তাদের জন্য স্থগিতাদেশ শুধু সময়ক্ষেপণ নয়-এটি জড়িয়ে আছে ভয়, অনিশ্চয়তা এবং প্রত্যাখ্যানের সম্ভাবনা।
বাংলাদেশসহ বহু দেশ থেকে যারা প্রাণের ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র তাদের কাছে একটি আশার নাম ছিল। আজ সেই আশাই স্থগিতাদেশের ছায়ায় ঢেকে গেছে। তাদের অস্থির অপেক্ষা প্রতিদিন বাড়াচ্ছে আতঙ্ক। কোথায় তাদের জায়গা। 

এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার বলেছেন, আইনগত সুযোগ পেলে তিনি কিছু মার্কিন নাগরিকের নাগরিকত্ব “অবশ্যই” বাতিল করবেন। ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের ওপর সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী হামলার পর তাঁর প্রশাসন অভিবাসন দমনমূলক পদক্ষেপ আরও জোরদার করেছে। ট্রাম্পের দাবি কিছু অপরাধী বাইডেন প্রশাসনের শিথিলতার সুযোগে নাগরিকত্ব পেয়েছে। যদি তাঁর হাতে ক্ষমতা থাকত তাহলে তিনি প্রয়োজন মনে করলে তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করতেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সোমালিয়া থেকে আসা মানুষের ব্যাপারেও কঠোর মন্তব্য করেন এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য নতুন এসাইলাম আবেদন বন্ধ রাখার ইঙ্গিত দেন।থ্যাংকসগিভিং-এ প্রকাশিত দীর্ঘ পোস্টে তিনি ঘোষণা দেন, অ-নাগরিকদের সব ফেডারেল সুবিধা বন্ধ করবেন, দেশের শান্তি ব্যাহত করে এমন নেচারালাইজড নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিল করবেন এবং অযোগ্য বিদেশিদের দেশ থেকে বের করে দেবেন।
২০২২ সালের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ৪৬.২ মিলিয়ন অভিবাসীর মধ্যে ২৪.৫ মিলিয়ন নেচারালাইজড নাগরিক। অর্থাৎ মোট অভিবাসীর অর্ধেকের বেশি এখন মার্কিন নাগরিক। গত দশকে ৭.৯ মিলিয়নের বেশি অভিবাসী নাগরিকত্ব পেয়েছে। সাধারণত কেউ নাগরিকত্ব পেতে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে অন্তত পাঁচ বছর থাকতে হয় এবং গড়ে এই সময় দাঁড়ায় ৭.৫ বছর। ন্যাশনাল গার্ড হত্যাকাণ্ডের পর ১৯টি দেশের নাগরিকদের দেওয়া গ্রিন কার্ড পুনরায় যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া আশ্রয় আবেদন আপাতত স্থগিত রয়েছে। যাচাইয়ের নীতিমালা কীভাবে প্রয়োগ হবে তা এখনো পুরোপুরি জানানো হয়নি, তবে অতিরিক্ত নথিপত্র, কঠোর জিজ্ঞাসাবাদ বা কারও স্ট্যাটাস বদলের মতো সিদ্ধান্ত আসতে পারে।ট্রাম্প বলেছেন, “থার্ড ওয়ার্ল্ড” দেশগুলো থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে থামিয়ে দেবেন। কোন কোন দেশকে তিনি “থার্ড ওয়ার্ল্ড” বলছেন তা স্পষ্ট না করলেও, মোট উনিশটি “উচ্চ ঝুঁকির” দেশকে অভিবাসন, গ্রীন কার্ড এবং সব ধরনের ফাইল পর্যালোচনার আওতায় আনা হয়েছে। আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনের নাগরিকদের ওপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলার নাগরিকরা আংশিক বিধিনিষেধের মধ্যে পড়বেন।