সোমবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩২   ০৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ডেমোক্র্যাটদের কারাদণ্ডের দাবি ট্রাম্পের

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ১২:৫৫ এএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৫ সোমবার

মার্কিন সেনাসদস্যদের বেআইনি আদেশ মানতে অস্বীকার করার আহ্বান জানিয়ে ভিডিও প্রকাশের পর ছয়জন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে ‘মৃত্যুদণ্ডযোগ্য রাষ্ট্রদ্রোহী আচরণের’ অভিযোগ এনেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

 

সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘এটা সত্যিই ভয়াবহ আর আমাদের দেশের জন্য বিপজ্জনক। তাদের কথাগুলো কোনোভাবেই আমলে নিতে দেওয়া যাবে না। বিশ্বাসঘাতকদের রাষ্ট্রদ্রোহী আচরণ!!! তাদের জেলে ঢোকাব???।’

 

এ ছয়জন আইনপ্রণেতার সবাই সামরিক বাহিনী বা গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেছেন। তারা ট্রাম্পের মন্তব্যকে বিপজ্জনক বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, এগুলো নির্বাচিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হুমকির শামিল। যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘কোনো হুমকি, ভয় বা সহিংসতার আহ্বান আমাদের সেই পবিত্র দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে পারবে না।’

 

মিশিগানের সিনেটর এলিসা স্লটকিনের শেয়ার করা ডেমোক্র্যাটদের সেই ভিডিওটিতে অংশ নিয়েছেন অ্যারিজোনার সিনেটর মার্ক কেলি এবং পেনসিলভেনিয়ার প্রতিনিধি ক্রিস ডেলুজিও, নিউ হ্যাম্পশায়ারের প্রতিনিধি ম্যাগি গুডল্যান্ডার, পেনসিলভেনিয়ার প্রতিনিধি ক্রিসি হুলাহান এবং কলোরাডোর প্রতিনিধি জেসন ক্রো। নৌবাহিনীতে দায়িত্ব পালনকারী ও সাবেক মহাকাশচারী সিনেটর কেলি বলেন, ‘আমাদের আইন স্পষ্ট। আপনি বেআইনি আদেশ মানতে অস্বীকার করতে পারেন।’

 

ভিডিওতে আইনপ্রণেতারা বলেন, ‘কেউই এমন কোনো আদেশ পালন করতে বাধ্য নন, যা আইন বা আমাদের সংবিধান লঙ্ঘন করে। এ প্রশাসন আমাদের ইউনিফর্মধারী সামরিক ও গোয়েন্দা পেশাজীবীদের আমেরিকান নাগরিকদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। আমাদের মতো আপনাদেরও এ সংবিধান রক্ষা ও পালনের শপথ রয়েছে। বর্তমানে আমাদের সংবিধানের প্রতি হুমকি শুধু বিদেশ থেকে নয়, বরং এখানেই ঘরের ভেতর থেকেও আসছে।’

 

গত বৃহস্পতিবার সকালে ট্রুথ সোশ্যালে ধারাবাহিক পোস্টের মাধ্যমে এর প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাম্প। তিনি লেখেন, ‘এটাকে বলা হয় সর্বোচ্চ স্তরের রাষ্ট্রদ্রোহী আচরণ। আমাদের দেশের এ প্রতিটি বিশ্বাসঘাতককে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত। তাদের কথাগুলো কোনোভাবেই আমলে নিতে দেওয়া যাবে না—এভাবে চলতে থাকলে আমাদের দেশ আর টিকবে না!!! উদাহরণ স্থাপন করতেই হবে।’

 

দ্বিতীয় পোস্টে তিনি লেখেন, ‘এটি সত্যিই ভয়াবহ এবং আমাদের দেশের জন্য বিপজ্জনক। তাদের কথাকে কোনোভাবেই বরদাশত করা যাবে না। বিশ্বাসঘাতকদের রাষ্ট্রদ্রোহী আচরণ!!! তাদের জেলে ঢোকাব???’

 

তৃতীয় পোস্টে তিনি লেখেন, ‘রাষ্ট্রদ্রোহী আচরণের শাস্তি মৃত্যু!’ ট্রুথ সোশ্যালে আরও একটি পোস্ট শেয়ার করেন ট্রাম্প, যেখানে লেখা ছিল, ‘ওদের ফাঁসি দাও জর্জ ওয়াশিংটন তাই করত!!’

 

ট্রাম্প কংগ্রেস সদস্যদের মৃত্যুদণ্ডের আহ্বান জানাচ্ছেন—এমন ধারণা অবশ্য বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রত্যাখ্যান করেছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট। তিনি বলেন, ‘এখানে উপস্থিত অনেকেই প্রেসিডেন্টের প্রতিক্রিয়া নিয়ে কথা বলতে চান; কিন্তু কী কারণে প্রেসিডেন্ট এভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হলেন, সে বিষয়ে নয়।’ তিনি অভিযোগ করেন, ওই ছয়জন আইনপ্রণেতা সামরিক সদস্যদের ‘বৈধ আদেশ অমান্য করতে’ উৎসাহ দিচ্ছেন।

 

ট্রাম্পের এ মন্তব্য এমন সময় এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক হামলা নিয়ে উদ্বেগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের নেতারা জানিয়েছেন, তারা ক্যাপিটল পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ট্রাম্পের পোস্টগুলোর কেন্দ্রে থাকা আইনপ্রণেতা ও তাদের পরিবারকে যথাযথ সুরক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।

 

ডেমোক্রেটিক হাউসের সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফরিজ ট্রাম্পের মন্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই কাউকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার আগেই তার সহিংস ভাষ্য প্রত্যাহার করতে হবে।

 

অন্যদিকে, রিপাবলিকান হাউসের স্পিকার মাইক জনসন ট্রাম্পকে সমর্থন করে বলেছেন, ট্রাম্প শুধু রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। একই সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের ভিডিওটিকে তিনি ‘অত্যন্ত অনুপযুক্ত’ এবং ‘খুব বিপজ্জনক’ বলে আখ্যায়িত করেন। সূত্র: বিবিসি