শনিবার   ২২ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩২   ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

বাংলাদেশি পুলিশ অফিসার আতিক গ্রেপ্তার

হাসান মাহমুদ

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ১২:১৮ এএম, ২২ নভেম্বর ২০২৫ শনিবার


#    আইস পুলিশের পরিচয় ব্যবহারের অভিযোগ
#    রোমান্টিক সম্পর্কের প্রস্তাব
#   টক অব দ্যা বাংলাদেশি কমিউনিটি

   
 
 


‘বাংলাদেশি-আমেরিকান এনওয়াইপিডির অফিসার (সার্জেন্ট) আতিকুল ইসলামকে ফেডারেল এজেন্টরা গত মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) নিউইয়র্ক থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে। ২৯ বছর বয়স্ক সার্জেন্ট আতিক একজন দক্ষ পুলিশ অফিসার হিসেবে তার সহকর্মীদের কাছে সুপরিচিত ছিলেন। সার্জেন্ট আতিকুল ব্রুকলিনে কর্মরত থাকা অবস্থায় গত মার্চ মাসে নিউইয়র্কের কুইন্সে বসবাসকারী এক নারীর সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরিচিত হন। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে আতিকুল ইসলাম ওই নারীকে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে’র আহবান জানাবার পর আতিকুল প্রত্যাখাত হন। তারপরই আতিকুল ‘জেমস ডব্লিউ অ্যান্ডারসন’ নাম ধারণ করে ওই মহিলার কাছে নিজেকে ‘আইস’-এর ফিল্ড অফিসের একজন ডাইরেক্টর পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগী নারীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। ব্রুকলিনের ফেডারেল প্রসিকিউটরদের দায়ের করা দুই পৃষ্ঠার অভিযোগ অনুসারে, আতিকুল ইসলাম নিউইয়র্ক ফিল্ড অফিসের আইস-এর পরিচালক বলে দাবি করেছিলেন এবং মার্চ মাসে ওই ভুক্তভোগীর সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। ব্রুকলিনের আদালতে প্রসিকিউটরদের অভিযোগ,  আতিকুল ভুক্তভোগী ও তার পরিবারকে ১৫ই এপ্রিলের মধ্যে নিউইয়র্ক সিটির একটি ‘আইস’ অফিসে রিপোর্ট করার জন্য দাবি জানাতে থাকেন। এদিকে ওই নারী এনওয়াইপিডি-র অভ্যন্তরীণ বিষয়ক ব্যুরোতে আতিকুল কর্র্তৃক তাকে হয়রানির একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এনওয়াইপিডির পুলিশ কর্মকর্তা ওই অভিযোগ পেয়ে তদন্তের অংশ হিসেবে সার্জেন্ট আতিককে গোপনে অনুসরণ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা দেখতে পান তিনি ‘আইস এজেন্টে’র ছদ্মবেশ ধারণ করেন। বিষয়টি তখন পুলিশ কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে আসে। এনওয়াইপিডি অফিসাররা দ্রুত ফেডারেল পুলিশকে পরিস্থিতি জানালে আতিকুল গত ১৮ নভেম্বর গ্রেপ্তার হন।’ আতিকুলের গ্রেপ্তার সম্পর্কে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ, নিউইয়র্ক পোস্ট, পিক্স ২সহ মূলধারার গণমাধ্যম।
তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ এসোসিয়েশন (বাপা) সদস্য’। অভিযুক্ত আতিকুল ইসলামের বক্তব্য পেতে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানতে ‘বাপা’র বর্তমান প্রেসিডেন্ট এনওয়াইপিডির অফিসার ইরশাদুর সিদ্দিক-এর সঙ্গে ফোনে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘বিষয়টি এখন সম্পূর্ণ তদন্তাধিন রয়েছে। এমন একটি পর্যায়ে আমি কোন মন্তব্য দিতে পারব না। তিনি আমাদের বাপা’র একজন সদস্য। বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এর চেয়ে বেশি কিছু আমার বলার নেই।’
মূলধারার মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর মিথ্যা ব্যক্তিত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এবং মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে যে, তার কার্যকলাপের সময় তিনি দায়িত্বের বাইরে ছিলেন, আদালতে দায়ের করা নথিতে বলা হয়েছে যে, অপরাধটি কুইন্স-এ ঘটেছে। আদালতে আতিকুল ইসলাম নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তাঁর আইনজীবী  জন আরলিয়া বলেন, তাঁর মক্কেল ‘আনিত অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একেবারে অনড়। তার ব্যাজ এবং সার্ভিস অস্ত্র উভয়ই বাজেয়াপ্ত করার সময় ৩০ দিনের জন্য বেতন ছাড়াই এনওয়াইপিডি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং ফৌজদারি মামলার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বেতন স্থগিত থাকবে।’ তার আইনজীবী মঙ্গলবার আদালতে এ তথ্য জানিয়েছেন। বিচারক টারয়েন মার্কল আদেশ দেন যে, আতিকুল ইসলাম যেন ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ না করে বা তাদের বাড়ির কোনও ব্লকের মধ্যে না আসে। পরে ২৫,০০০ ডলারের বন্ডে তিনি জামিন পেয়েছেন। তাকে যে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র সমর্পণ করার নির্দেশ দেন আদালত। মঙ্গলবার আদালত থেকে বের হওয়ার সময় আতিকুল কোন প্রশ্নের উত্তর দেননি সাংবাদিকদের’। পুলিশ অফিসার আতিকুল ইসলাম তার বাবা ও ভাইয়ের সাথে ব্রুকলিনের বাড়িতে থাকেন। ২০১৮ সালে তিনি এনওয়াইপিডিতে যোগদান করেন। ২০২৩ সালে তাকে সার্ভিস এরিয়া ৩-এর সার্জেন্ট করা হয়, যা ব্রুকলিনে এনওয়াইসিএইচএ উন্নয়নের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন। এনওয়াইপিডি-র মুখপাত্রের মতে, গ্রেপ্তারের পর তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়।  এনওয়াইপিডি’র মুখপাত্র ব্র্যাড উইকস জানিয়েছেন, ‘আতিকুলকে বিনা বেতনে বিভাগ থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে’। এই ঘটনার আগে আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ ছিল না। তাকে সহকর্মীরা অত্যন্ত সজ্জন হিসেবে জানেন বলে সিনিয়র এক অফিসার জানিয়েছেন।