শনিবার   ২২ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩২   ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

নিউইয়র্ক সিটিতে আইস পুলিশের ক্র্যাকডাউন

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ১১:৫৫ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০২৫ শুক্রবার

মামদানির শপথের আগেই 

 

 
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সীমান্ত-নীতির প্রধান কর্মকর্তা (বর্ডার জার) টম হোম্যান বলেছেন, ফেডারেল অভিবাসন-প্রয়োগকারী দল ইতোমধ্যেই নিউইয়র্ক সিটিতে অভিযান চালাচ্ছে এবং আরও এজেন্ট মোতায়েন করা হচ্ছে। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, শহরের ‘সাংকচুয়ারি’ নীতি মোকাবিলায় প্রশাসন কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে। সহস্রাধিক অতিরিক্ত আইস পুলিশ আসছে নিউইয়র্ক সিটিতে। ১ জানুয়ারি মামদানির শপথ নেবার আগেই তাদেও মোতায়েন করা হবে। 


ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হোম্যান বলেন, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টরা “মাঠে নেমেছে” এবং রাইকার্স আইল্যান্ড জেলে প্রবেশাধিকার নিয়ে পূর্বের একটি চুক্তি সিটি কাউন্সিল বাতিল করার পর তাদের উপস্থিতি আরও বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, “আমরা নিউইয়র্ক সিটিতে আসছি, বরং আমরা এখনই সেখানে। আমরা চাই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করুক। তা না হলে আমাদের এজেন্টদের ঝুঁকিতে রেখে রাস্তায় জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হওয়া ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতেই হবে। ”
এই সতর্কবার্তা আসে এমন এক সময়ে, যখন নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানী জানান, তিনি গৃহভাড়া সংকট এবং ফেডারেল সহায়তা নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
মামদানী বলেন, নিউইয়র্কের আর্থসামাজিক সংকটে থাকা বাসিন্দাদের সহায়তার জন্য “যে কারও সঙ্গে” কথা বলার নীতি থেকেই এই উদ্যোগ। ডেমোক্র্যাটিক সমাজতন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও, যিনি একসময় সিটিকে “ট্রাম্প-প্রুফ” করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এই সুর তার তুলনায় নমনীয়। তিনি অভিবাসীদের আইনি সহায়তার জন্য ১৬৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
এদিকে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের একটি কোস্ট গার্ড স্থাপনায় অভিবাসীদের জন্য নতুন আটক কেন্দ্র খোলার বিষয়টি বিবেচনা করছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কর্মকর্তারা ফোর্ট ওয়াডসওর্থ ঘাঁটি পরিদর্শন করেছেন। বর্তমানে নিউইয়র্কে গ্রেপ্তার হওয়া অনেক অভিবাসীকে রাজ্যের বাইরে বিভিন্ন আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল গত সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাম্প যে পদক্ষেপ নিন-তা সিটিকে  আইসিই দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হোক বা ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন-সবকিছুই দেশ ও নিউইয়র্ক সিটির অর্থনীতির জন্য “বিপরীত প্রতিক্রিয়া” ডেকে আনবে। তিনি সতর্ক করেন, নিউইয়র্ক সিটি দেশের আর্থিক কেন্দ্র-এখানে অস্থিরতা তৈরি করলে তার প্রতিকূল ফল ভোগ করতে হবে। হোকুল আরও জানান, তিনি শহরের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং তারা ট্রাম্পকে সম্ভাব্য ক্ষতির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেবেন। তিনি বলেন, “আমরাই দেশের আর্থিক কেন্দ্র, আর এটি নাড়াচাড়া করলে তার ফলাফল অনিবার্য।” 
ট্রাম্প এরইমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ অভিযান পরিচালনা করবেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আইসিই মূলত লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো এবং বস্টনের মতো ডেমোক্র্যাটশাসিত শহরগুলোর ওপর নজর দিচ্ছে। নিউইয়র্কে এজেন্সির উপস্থিতি এখনো তুলনামূলকভাবে কম দৃশ্যমান।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আইসিই ও অন্যান্য ফেডারেল সংস্থা নর্থ ক্যারোলাইনাতেও অভিযান জোরদার করেছে। হোম্যানের বক্তব্যের পর মঙ্গলবার সকালে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি জানায়, শার্লট এলাকায় সপ্তাহান্ত থেকে শুরু হওয়া অভিযানে ২০৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, শপিং সেন্টার, কান্ট্রি ক্লাব, গির্জার বাইরে এবং অন্যান্য স্থানে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়েছে।র্
যালির মেয়র জ্যানেট কাওয়েল জানান, তাকে সতর্ক করা হয়েছে যে ফেডারেল অভিবাসন এজেন্টরা মঙ্গলবার থেকেই শহরে প্রবেশ করতে পারে। তবে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। কাওয়েল এক বিবৃতিতে বলেন,র্ যালি পুলিশ অভিবাসন-প্রয়োগে সহায়তা করে না এবং শহরের অপরাধের হার গত বছরের তুলনায় কমেছে। তিনি মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জরুরি প্রয়োজনে ৯১১-এ কল করতে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি জানায়, জানুয়ারির শেষ থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ৫ লাখ ৫০ হাজারের বেশি বহিষ্কার কার্যকর করা হয়েছে। আইসিইর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২১ জানুয়ারি থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অপসারণ করা হয়েছে। দুই তথ্যের অমিল নিয়ে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কোনো ব্যাখ্য দেয়নি।