৫ কর্মঘন্টা হবে নারীদের
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:১৭ এএম, ১ নভেম্বর ২০২৫ শনিবার
নিউইয়র্কে সংবর্ধনায় জামায়াত আমীর
জনগনের ভোটে ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নারীদের সম্মানার্থে তাদের কর্মক্ষেত্রে কাজের সময় বা কর্মঘন্টা ৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৫ ঘণ্টা নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির আমীর ডা: শফিকুর রহমান। এতে নারীদের প্রতি ইনসাফ ও মর্যাদা নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন তিনি।
গত ২৬ অক্টোবর নিউইয়র্কের এস্টোরিয়াস্থ এস্টোরিয়া ম্যানর হলে কোয়ালিশন অফ বাংলাদেশি আমেরিকান এসোসিয়েশন (কোবা) আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ডা. শফিকুর রহমানকে সংবর্ধানা দিতেই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জামায়াত আমীর বলেন, নারীদেরকে নবী (সা.) যুদ্ধক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিয়েছেন। যুদ্ধের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে নারীরা যদি অংশ নিতে পারেন, তাহলে দেশ ও সমাজ গঠনে কেন অংশ নিতে পারবেন না। মা-বোনেরা সন্তান লালন পালন সহ একটি সংসার গড়ে তোলেন। পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও যথেষ্ট দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। তাই ক্ষমতায় গেলে মা-বোনদের বিশেষ সম্মান হিসেবে তাদের কর্মক্ষেত্রে কাজের সময় আট ঘণ্টার বদলে ৫ ঘণ্টা করা হবে। যাতে সংসার ও কর্মস্থল সামলাতে কষ্ট না হয়। তাদের সময় কমিয়ে দেওয়া হবে, বেতন না। দেশের গার্মেন্টস শিল্পে ৭০ লাখ নারী কাজ করছেন। কখনো তাদের বলিনি তোমরা বোরখা নেকাব পরো। তারা তাদের নিজের সম্মান রক্ষায় পর্দা ব্যবহার করছে। বর্তমান সময়ে আমাদের মা-বোনেরা কর্মস্থলে গিয়ে হেনস্তার শিকার হতে হয়। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে তাদের নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষ্যে প্রবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে দেশে নির্বাচন হবে। দীর্ঘদিন পর মানুষ ভোট দিতে পারবে। প্রবাসীরাও এই প্রথম ভোটের অধিকার পাচ্ছেন। তাই সম্ভব হলে নির্বাচনে ভোট দিতে দেশে আসুন। ইতিহাসের স্বাক্ষী হোন। দেশে যেতে না পারলেও প্রবাসে থেকে ভোট দিন। যারা সৎভাবে দেশ চালাবে বলে মনে করেবেন- তাদেরকে ভোট দিয়ে দেশটাকে সুপথে পরিচালিত করার সুযোগ দেন। কথা দিচ্ছি, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে প্রবাসীদের স্বার্থ, সুরক্ষা ও সম্মান নিশ্চিত করা হবে, সংসদেও প্রবাসীদের অংশগ্রহণ থাকবে। আপনাদের অনেকে বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছেন, সেখানে বড় হয়েছেন। হয়ত পরিবেশের কারণে দেশে যেতে চান না। আপনাদের দেশে নিয়ে যেতে চাই, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করবো। মানবতার মুক্তির লড়াইয়ে আপরাদের সঙ্গে চাই। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এখন ধ্বংস। শিক্ষাব্যবস্থা এখন বোকাদের হাতে। শিক্ষাব্যবস্থা ঠিক করতে আপনাদের প্রয়োজন। আমরা মেধাবী প্রবাসীদের একটি অংশ বাংলাদেশে চাই। আপনারাই হবেন বাংলাদেশে ব্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।
ডা. শফিকুর বলেন, যদি আল্লাহর হুকুমে ক্ষমতায় যেতে পারি তাহলে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবো। আমাদের উপর যত অবিচার করা হয়েছে সেটার কোন প্রতিশোধ নিবো না। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের ক্ষমা করতে শিখিয়েছেন। তবে নবী করিম (সা.) ১০ মানবতাবিরোধীকে ক্ষমা করেননি। আমরাও মানবতাবিরোধীদের ক্ষমা করবো না। স্বৈরাচারি সরকার ছাত্রজনতার আন্দোলনে মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছিল। প্রায় ১৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, ৩৪ হাজার মানুষকে আহত করা হয়। যার মধ্যে ৩৫০ জনতে মেরুদণ্ডহীন করে দেওয়া হয়। মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ সংঘটন করা হয়েছে হাজার হাজার ক্যামেরার চোখের সামনে, স্পষ্ট দিবালোকে মানুষের সামনে। এই জঘন্য ঘটনা যারা ঘটিয়েছেন, যারা মানবতার বিরুদ্ধে ছিল, ন্যায় বিচারের মাধ্যমে তাদের শাস্তি দেয়া হবে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে সব অভিযুক্তকে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করার সুযোগ দেয় হবে। বিচারের যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের শাস্তি পেতেই হবে। বাংলাদেশের মাটিতেই মানবতাবিরোধীদের বিচার হবে।
জুলাই আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, জুলাই অভ্যূত্থানে প্রকাশ্যে হাজার হাজার ছাত্র জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে আহত হয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি যারা আহত পঙ্গু তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। কিন্তু এই সংখ্যাটা এত বেশি একটা দলের জন্য বড় কিছু করা বড়ই কঠিন। কিন্তু আমরা তাদের ছেড়ে দেইনি। যেখানেই যার পক্ষ থেকে অনুরোধ এসেছে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মুষ্টিবদ্ধ হাত নিয়ে তাদের কাছে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। যে কাজটি সরকারের করার কথা ছিল সেটি আমরা করেছি। শহীদ পরিবার নিয়ে ১২ খণ্ডের স্মরণিকা করেছি।
অন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে যারা গুম খুন এবং ২০২৪ সালে জুলাই অভ্যূত্থানে প্রকাশ্যে ছাত্র জনতাকে হত্যা করেছে ও যাদেরকে আহত করেছে, এসব অপরাধের সব বিচার না করতে পারলেও দেশের মানুষ কয়েকটি বিচার একই সরকারের সময় দেখতে চায়। যাতে পরবর্তীতে সরকার এসে বাকি বিচারকার্য যাতে চালিয়ে যেতে পারে।
জামায়াত ইসলামীর যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র ড.নাকিবুর রহমান পরিচালনায় ও আব্দুল আজিজ ভুইঁয়ার সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন ডা. জুন্নুন চৌধুরী, মুফতি জামালউদ্দিন, মাওলানা আব্দুর রহমান খান, ড. শওকত আলী, ডা. বদরুল ইসলাম, ডা. খালেকুজ্জামান. ডা. জাকির হোসেন, হাফিজ জাকের আহমেদ, আবু আহমেদ নূরুজ্জামানসহ দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ ও প্রবাসী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ। বিপুল সংখ্যক প্রবাসীরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারে মতো সফরে এসে বাফেলো ও মিশিগানে সংবর্ধিত হয়েছেন জামায়াত আমীর।
তারা কোন প্রজাতির মানুষ আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন। আদৌ তাদের মধ্যে কোনো মানবিকগুণাবলি ছিল কি না তাও আল্লাহ ভালো জানেন।
