তারুণ্যের জোয়ারে ভাসছেন মামদানি
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ১২:৫৮ এএম, ১ নভেম্বর ২০২৫ শনিবার
নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি সমর্থকদের ভালোবাসার অপ্রতিরোধ্য জোয়ারে ভাসছেন। কমিউনিটিতে তাঁর বিজয়ের পদধ্বনি। আগামী ৪ নভেম্বর, মঙ্গলবার চার বছর মেয়াদে ১১১তম মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচিত হলে নতুন মেয়র মামদানি আগামী ৩১ ডিসেম্বর তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমোকে সমর্থন জানিয়েছেন বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস। মামদানি মুসলমান প্রার্থী হবার কারণে নিউইয়র্কের ইতিহাসে এবারই প্রথম ঐতিহাসিক এক মেরুকরণ ঘটতে যাচ্ছে বলে বিশ্লেষকগণ মনে করেন। নিউইয়র্কের বিভিন্ন ধর্মীয় জাতি গোষ্ঠি, কমিউনিটির মানুষ মামদানিকে সমর্থন দিয়েছেন দৃঢ়তার সাথে। বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যবসায়ি, কমিউনিটির লিডার, এক্সিভিস্টগণ মামদানির পক্ষে সমর্থন দিয়ে চলেছেন শুরু থেকে। নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হকুল, মূলধারায় প্রভাবশালি বর্ষিয়ান রাজনীতিক সিনেটর বার্ণি সেন্ডারস, কংগ্রেসওম্যান ওকাসিয়া কর্তেজ উদারভাবে মামদানির পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। হাজার হাজার তরুণ তরুণি মামদানির জন্য অবিরাম কাজ করছেন। তারুণ্যের জোয়ারে মামদানি আগামী ৪ নভেম্বর নতুন এক ধারার সূচনা করতে যাচ্ছেন বলে তাঁর ভোটাররা আশাবাদি।
ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী প্রাইমারীর পরই নির্ধারিত হয়ে যায় যে কে পরবর্তী মেয়র নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। সে হিসেবে ৪ নভেম্বর মেয়র হিসেবে জোহরান মামদানি বিজয়ের পথে। সর্বশেষ প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে যে, মামদানি ক্যুমোর চেয়ে ১০ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। জরিপে বলা হয়েছে, মামদানিকে সমর্থন করেছেন ৪৩% ভোটার, অন্যদিকে ক্যুমো সমর্থন পেয়েছেন ৩৩% এবং রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়া পেয়েছেন ১৪% ভোটারের সমর্থন।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী এবং প্রথম মুসলিম প্রার্থী জোহরান মামদানি এখন ভোটারদের আবেগের স্থানে অবস্থান করছেন। তিনি গত জুনে দলীয় প্রাইমারিতে হেভিওয়েট প্রার্থী নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর এন্ড্রু ক্যুমোকে ধরাশায়ী করে নিজের জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক শক্তির জাগরণ প্রকাশ করেন।
নিউইয়র্ক সিটি বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রযুক্তি, শিক্ষা, পর্যটন, ফ্যাশন, ক্রীড়া ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির কেন্দ্রস্থল মামদানির মেয়র নির্বাচন এবার বৈচিত্রতাও পেয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে মামদানি তার মতামতকে তুলে ধরেছেন।
নিউইয়র্ক সিটির নির্বাহী কার্যক্রম পরিচালিত হয় একজন মেয়র, মেয়র কর্তৃক মনোনীত কয়েকজন ডেপুটি মেয়র, সিটি কাউন্সিলম্যান, অসংখ্য বিভাগ, বোর্ড ও কমিশন সমন্বয়ে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ছাড়া মেয়র অনির্বাচিত কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও বরখাস্ত করার ক্ষমতা রাখেন। তিনি সিটির বার্ষিক বাজেট প্রণয়নের তদারকি করেন, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় আকারের মিউনিসিপাল বাজেট। ২০২৩ সালে সিটি বাজেটের পরিমাণ ছিল ১০০.৯ বিলিয়ন ডলার।
সাবেক গভর্নর ও মেয়র প্রার্থী ক্যুমোর দাবি, মামদানি ইহুদি সম্প্রদায়কে ভীত করেছে, কারণ তিনি ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা’ স্লোগানটি নিন্দা করতে দেরি করেছিলেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে সন্ত্রাসী হামলার পর ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান ও ইসরায়েলকে ‘ইহুদি রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি না দেয়ার জন্য মামদানির সমালোচনা করেন তারা। স্লিওয়ার পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, মামদানি ইসলামোফোবিয়ার অভিযোগগুলো রাজনৈতিক স্বার্থে ‘অস্ত্র হিসেবে’ ব্যবহার করছেন। অ্যাডামস প্রশাসন এ বিষয়ে অবশ্য কোনো মন্তব্য করেনি। মামদানির বিজয়ের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কের সাধারণ নগরবাসি নতুন এক দিগন্তের দেখা পাবেন বলে তাঁর প্রচারণা কমিটির পক্ষ থেকে বারবার তা জানানো হয়েছে।
