শনিবার   ২৫ অক্টোবর ২০২৫   কার্তিক ১০ ১৪৩২   ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

আবারো ক্ষমা চাইল জামায়াত

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:২২ এএম, ২৫ অক্টোবর ২০২৫ শনিবার

নিউইয়র্কে জামায়াত আমীরের সংবাদ সম্মেলন
 

 

 
অতীত কর্মকান্ডের মধ্যে কোন ভুল থাকলে তার জন্য সংগঠন ও ব্যক্তি হিসেবে আবারো ক্ষমা চেয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘শুধু একাত্তর নয়, ১৯৪৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর দ্বারা কেউ যদি কোনো কষ্ট পান, কারও যদি কোনো ক্ষতি হয়ে থাকে, সবার কাছে ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষে নিঃশর্তে ক্ষমা চাই। আপনারা ক্ষমা করে দেবেন।’
আমীর ডা. শফিকুর রহমানের যুক্তরাষ্ট্র সফর উপলক্ষ্যে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। নিউইয়র্কে ওয়ার্ল্ডস ফেয়ার মেরিনায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিউইয়র্কে অবস্থানরত বাংলাদেশি সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। জামায়াতের যুক্তরাষ্ট্র মুখপাত্র নকিবুর রহমানসহ আয়োজক সংগঠন কোয়ালিশন অব বাংলাদেশী আমেরিকান এসোসিয়েশনের (কোবা) শীর্ষ নেতারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় একাত্তরে দলটির ভূমিকা নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা কমপক্ষে তিনবার চেয়েছি। গোলাম আযম চেয়েছেন, মতিউর রহমান নিজামী চেয়েছেন, আমিও চেয়েছি। কিছুদিন আগে এটিএম আজহারুল ইসলাম যখন কারামুক্ত হলেন তখন আমি বলেছি, শুধু একাত্তর নয়, ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে জামায়াতের দ্বারা কারও যদি ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে নিঃশর্ত ক্ষমা চাই। আজকের দিন পর্যন্ত আমরা ভুল করিনি এ কথা বলবো কীভাবে? জামায়াতের মানুষের দ্বারা পরিচালিত একটি রাজনৈতিক সংগঠন। এ সংগঠনের ১০০টির মধ্যে ৯৯টি সিদ্ধান্ত সঠিক, একটি তো বেঠিক হতে পারে। সেই বেঠিক সিদ্ধান্তের কারণে জাতির তো কোনো ক্ষতি হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমার মাফ চাইতে অসুবিধা কোথায়। এখন মাফ চাওয়ার পরে বলে, এই ভাষায় চাইলে হবে না, ওই ভাষায় চাইতে হবে। বিনা শর্তে মাফ চাইলাম, কোনো শর্ত দিলাম না, তারপর আর বাকি থাকে কোথায়?’
জুলাই সনদ সাক্ষর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি লাগবে। তাহলে জনগনের অধিকার আদায় হবে। জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে। একই দিন জাতীয় ও জুলাই সনদের নির্বাচন হলে বুমেরাং হতে পারে। আগে গণভোট পরে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। তবে, নির্বাচন ফেব্রুয়ারি মাসেই হবে ইনশাআল্লাহ।
জুলাই সনদ নিয়ে নতুন দল এনসিপি জামায়াতের বিরুদ্ধে বক্তব্য নিয়ে তিনি বলেন, ওরা ছোট মানুষ ওরা রাজনীতি শিখছে। আন্দোলনে তাদের অনেক ভূমিকা ও অবদান আছে। তারা ছোট ভাই-বোন, অভিমান করে কিছু বললেও তাদের উপর কঠোর হওয়া উচিত হবে না। অভিজ্ঞতা এবং বয়সের কারণে তাদেরকে সুযোগ দেয়া উচিত। রাজনীতি করলে সমালোচনা সহ্য করতে হবে।
পিআর নিয়ে তিনি বলেন, পিআর নিয়ে জনমত তৈরি করছে জাতায়াত। জনগণ যদি চায় তাহলে হবে। ২৭টি উন্নত দেশসহ বিশ্বের ৯১টি দেশে পিআর পদ্ধতি চালু রয়েছে। ক্ষমতার ভারসাম্যে রক্ষায় এটা গুরুত্বপূর্ণ। পিআরের ক্ষেত্রে এক দেশের সাথে অন্য দেশের ভিন্নতা আছে। পিআরের কোন পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে জামায়াতের দাবি রয়েছে। যৌক্তিক প্রমাণিত হওয়ার পরও যদি মেনে না নেয়া হয় তাহলে জামায়াত নির্বাচনে যাবে কিনা তা চিন্তা করবে।
প্রবাসীদের কাছে চাওয়া বিষয়ে জামায়াত আমীর বলেন, আপনাদের শুধু অর্থ দেশে পাঠালেই হবে না। দেশ গঠনে আপনাদের ভুমিকা রাখতে হবে। আপনাদের অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে চাই। কারণ আপনারা বিশ্ব সভ্যতাকে দেখেন। সে ভিত্তিকে আপনাদের পরামর্শ দেশের কাজে আসবে। বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো প্রবাসিদের জন্য তেমন কাজ করে না। এটি দুঃখজনক। প্রবাসে যারা আছেন, একসাথে বসতে হবে। জাতির স্বার্থে এক সাথে কাজ করতে হবে। আমাদের নিয়ে আরো সমালোচনা করতে হবে। তবে তা যেনো জাতি গঠনে ভূমিকা রাখে। প্রবাসিদের ভোটাধিকার আমরাই প্রথম দাবি জানিয়েছি। আপনারা রেমিট্যান্স যোদ্ধা। ভোটাধিকার পেলে সব দাবিই বাস্তবায়ন হবে। সবাই ভোট দিলেই আপনারা গুরুত্ব পাবেন। নাগরিকত্ব থাকলেই তার ভোটাধিকার থাকতে হবে।
সরকারে এলে জাতায়াত কি করবে, কেমন দেশ হবে, এমন প্রশ্বের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, আল্লাহ যদি জামায়াতকে দায়িত্ব দেন তাহলে সবার আগে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করবো। এটি আসলে কোন ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা নয়। কাজের সাথে শিক্ষার সম্পর্ক থাকবে। ক্ষমতায় গেলে দূর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করবো। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবো। দুর্নীতি সাথে কোন আপোষ নয়। দুনিয়ায় সবার সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক থাকবে। এসব নির্মুল করতে গেলে আমাদের হিমালয়ের সমান বাধা পেরুতে হবে। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ বাংলাদেশই হবে। যেখানে দল-ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্তি থাকবে না। বৈষম্য থাকবে না, প্রত্যেক নাগরিক পাবে সমান অধিকার ।
ভারতের সাথে বাংলাদেশ করা চুক্তি বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু ভারত নয় বিশ্বের অনেক দেশের সাথেই বাংলাদেশের চুক্তি হয়েছে। চুক্তি হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে, সমতার ভিত্তিতে, সম্মানের ভিত্তিতে। তবে, চাইলে কোন চুক্তি সহজে বাতিল করা যায় না। তাই কোন দেশ বিরোধী চুক্তি থাকলে তা নিয়ে পর্যালোচান করে বের করা হবে। তার সমাধান নিয়ে ঐ দেশের সাথে চিঠি আদানপ্রদান এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে।

 
 
 
 
 
 

বিএনপি বা অন্য কারো সঙ্গে নির্বাচনি জোট নিয়ে তিনি বলেন, ভিন্ন দুটি রাজনৈতিক দল। মতাদর্শ ভিন্ন। তাই অনেক ক্ষেত্রে মতের মিল থাকে, পার্থক্যও থাকে। কিন্তু জামায়াত সব পক্ষকেই সম্মান করে, এমনকি যিনি সমালোচনা করেন তাকেও। তবে বিএনপির সঙ্গে নয়, ইসলামি দলগুলোর সাথে আমাদের নির্বাচনি জোট হতে পারে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সেনা অফিসারদের আটক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আইনের শাসন চাই। অপরাধী যত বড়ই হউক না কেন তিনি আইনের উর্ধ্বে নন। তার পরিচয় তিনি অপরাধী। কতিপয় সেনা অফিসার এরজন্য দায়ী গোটা বাহিনী কোনভাবেই দায়ী হতে পারে না। তবে যে কেউ অপরাধ করলে তার স্বচ্ছ  ও ন্যায় সঙ্গত বিচার হোক। যেখানে ভিকটিম পাবে তাদের ন্যায় বিচার।