বুধবার   ২৯ অক্টোবর ২০২৫   কার্তিক ১৩ ১৪৩২   ০৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

‘গোল্ড কার্ড’ ভিসার দাম ১০ লাখ ডলার

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৩০ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শনিবার

 

   আমেরিকান নাগরিকত্ব নিয়ে ট্রাম্পের ব্যবসা
 
 
 ট্রাম্পের ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসার দাম ১০ লাখ ডলার। মিলবে যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নতুন নির্বাহী আদেশে একটি নতুন ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা প্রোগ্রাম চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। এই কর্মসূচির অধীনে উচ্চ আর্থিক সক্ষমতাসম্পন্ন বিদেশিরা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পাবেন। 
নতুন ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা প্রোগ্রামটির মূল লক্ষ্য হলো এমন ‘অসাধারণ’ এবং ‘শীর্ষ স্তরের’ মানুষদের যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা। যারা আমেরিকানদের জন্য ব্যবসা ও কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবেন। 

এই ভিসার জন্য আবেদন করতে ব্যক্তিগতভাবে একজন বিদেশিকে মার্কিন ট্রেজারিতে ১০ লাখ ডলার দিতে হবে। যদি কোনো আমেরিকান করপোরেশন কোনো কর্মীকে স্পনসর করতে চায়, তবে তাকে দিতে হবে ১০ লাখ ডলার। ধনীদের জন্য এই ‘গোল্ড কার্ড’ ভিসা মার্কিন নাগরিকত্বের পথ সুগম করবে।

মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক এই নীতি সম্পর্কে বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে কর্মসংস্থান-ভিত্তিক গ্রিন কার্ড কর্মসূচির মাধ্যমে বছরে ২ লাখ ৮১ হাজার মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে আসতেন। তারা গড়ে ৬৬ হাজার ডলার উপার্জন করতেন এবং তাদের সরকারি সহায়তা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা পাঁচ গুণ বেশি ছিল। আমরা সবচেয়ে নিম্ন স্তরের লোকদের (আয়ের দিক থেকে) নিচ্ছিলাম, যা একজন গড় আমেরিকান থেকে কম। এটি অযৌক্তিক ছিল।’

লুটনিক আরও বলেন, ‘আমরা এটা করা বন্ধ করে দেব। আমরা কেবল অসাধারণ এবং সর্বোচ্চ স্তরের ব্যক্তিদের নেব, যারা আমেরিকায় চাকরি নেওয়ার চেষ্টা করার পরিবর্তে ব্যবসা এবং কর্মসংস্থান তৈরি করবে।’ তিনি দাবি করেন, এই প্রোগ্রাম মার্কিন ট্রেজারির জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রাজস্ব আনবে।

‘গোল্ড কার্ড’ ভিসার আবেদনকারীদের জন্য একটি কঠোর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া থাকবে। যার খরচ বাবদ অতিরিক্ত ১৫ হাজার ডলার ফি দিতে হবে। এই ভিসার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, আবেদনকারী যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করেন, তবে তাকে বিশ্বব্যাপী তার উপার্জনের ওপর মার্কিন কর দিতে হবে। এই শর্তের কারণে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত অনেক আবেদনকারী আগ্রহ হারাতে পারেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এইচ-১ বি ভিসার পরিবর্তন
ট্রাম্প একই সঙ্গে আরেকটি ঘোষণা দিয়েছেন-এইচ-১বি ভিসার আবেদনের জন্য এখন ১ লাখ ডলার ফি দিতে হবে। এটি এমন একটি পদক্ষেপ, যা বিদেশি কর্মীদের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং মার্কিন কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থান সুরক্ষিত করতে সহায়তা করবে বলে দাবি ট্রাম্প প্রশাসনের। বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকের মতে, এই নতুন ফির কারণে বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলো আর বিদেশি কর্মীদের নিয়ে আসতে উৎসাহিত হবে না। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে বিদেশি কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিবর্তে আমেরিকানদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’ দক্ষ কর্মিরা প্রতিবছর মার্কিন সরকারকে দিতে হবে ১ লাখ ডলার। ৩ বছরের জন্য এইচওয়ান বি ভিসার জন্য দিতে হবে। ৩ লাখ ডলার। অনেক টেক কেম্পানী এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বহু বিদেশি দক্ষ কর্মি বছরে ১ লাখ ডলার উপার্জন করেন না। এমতাবস্থায় বিদেশি দক্ষ কর্মির আগমনে ধ্বস নামবে। আর এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে ভারত ও চীনের চাকুর প্রার্থীরা। 

ট্রাম্পের এই নতুন নীতির ফলে মার্কিন অভিবাসন ব্যবস্থা মূলত ‘যোগ্যতাভিত্তিক’ থেকে ‘সম্পদভিত্তিক’-এ রূপান্তরিত হচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন, এটি ধনী অভিবাসীদের কাছে আমেরিকার দরজা খুলে দেবে এবং শ্রমজীবী মানুষকে দূরে ঠেলে দেবে। ডেমোক্রেটিক প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা ডগ র‌্যান্ড এই নীতিকে ‘হাস্যকরভাবে বেআইনি’ বলেছেন। 

তবে, হোয়াইট হাউসের স্টাফ সেক্রেটারি উইল স্কার্ফ এই পদক্ষেপকে অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধের পাশাপাশি এমন ব্যক্তিদের জন্য নতুন পথ খুলে দেওয়ার একটি উপায় বলে অভিহিত করেছেন, যারা আমেরিকায় অবদান রাখতে পারেন।