শনিবার   ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আশ্বিন ৪ ১৪৩২   ২৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

রোজারিও হত্যায় অভিযোগ প্রমাণিত

আজকাল ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৪১ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শনিবার


 
 

২০২৪ সালের ২৭ মার্চ কুইন্সের ওজন পার্কে ১৯ বছর বয়সী উইন রোজারিওর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিউইয়র্ক পুলিশের তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা সিসিআরবি এবং স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস দুই পুলিশ কর্মকর্তা স্যালভাতোর আলঙ্গি ও ম্যাথিউ সিয়ানফ্রোকোর বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে। সিসিআরবি তাদের প্রতিবেদনে অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার এবং কর্তৃত্বের অপব্যবহারসহ মোট আটটি অভিযোগ স্থির করেছে, যেখানে প্রতিটি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত। গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির সঙ্গে আচরণের যে নীতি অনুসরণ করা উচিত, তা এই দুই কর্মকর্তা মানেননি। বরং তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং নিষ্ঠুর আচরণ করেছেন’। ঘটনার সময় উইন রোজারিও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন এবং সহায়তার জন্য ৯১১-এ ফোন করেছিলেন।
ঘটনার দিন পুলিশ কর্মকর্তারা রোজারিওর বাড়িতে পৌঁছে তাকে কাঁচি নিয়ে এগোতে দেখেন। আলঙ্গি তার টেইজার ব্যবহার করেন, আর সিয়ানফ্রোকো তার বন্দুক বের করেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রোজারিওর মা, নোটান ইভা কোস্টা, কাঁচি তার ছেলে থেকে তুলে রোজারিওকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন। এরপরও কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রোজারিও আবার কাঁচি তুলে নেন এবং পুলিশ কর্মকর্তারা একাধিকবার গুলি করেন, যার ফলে রোজারিও নিহত হন। পুরো ঘটনাটি মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে ঘটেছে।

সিসিআরবির তদন্তে দেখা গেছে, রোজারিওর বাড়িতে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রবেশ এবং গুলির ঘটনা নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের নির্দেশিকা লঙ্ঘন করেছে। সিসিআরবি তাদের নিজস্ব তদন্তকারীদের সুপারিশকে অগ্রাহ্য করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। কারণ তদন্তকারীরা মূলত মনে করেছিলেন যে কর্মকর্তাদের কর্মপদ্ধতি বিভাগের প্রশিক্ষণ অনুযায়ী ছিল। বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আলঙ্গি টেইজার ব্যবহারেও নির্দেশিকা লঙ্ঘন করেছেন। এছাড়া বোর্ড অভিযোগ স্থির করেছে যে কর্মকর্তারা বাড়িতে প্রবেশ এবং পরিস্থিতি পরিচালনায় কর্তৃত্বের অপব্যবহার করেছেন।

পুলিশি তদন্তও একই সময়ে চলছিল। নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের ফোর্স ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে পৃথকভাবে অনুসন্ধান করছে। তারা গুলির ব্যাখ্যা, পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে পুলিশের আচরণ বিশ্লেষণ করছে। রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিসিয়া জেমসের অফিসও নিজস্ব তদন্ত চালাচ্ছে, যা স্বাধীনভাবে ঘটনার সব দিক পরীক্ষা করছে। এই তদন্তে পুলিশি প্রতিক্রিয়ার আইনগত ও নৈতিক দিকগুলো বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং কেন পরিস্থিতি এমন আকার নিলো তা নির্ধারণ করা হচ্ছে।

রোজারিও পরিবারের দাবি, পুলিশ কর্মকর্তারা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেননি। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ, পরিবারের সাক্ষ্য এবং অন্যান্য প্রমাণ বিশ্লেষণ করে সিসিআরবি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে কর্মকর্তারা নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের নির্দেশিকা অমান্য করেছেন। সিসিআরবির এ রায় পুলিশের অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার এবং কর্তৃত্বের অপব্যবহার সম্পর্কিত নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

রোজারিওর মা বলেন, আমার ছেলে হারানোর বেদনা সহ্য করা অসম্ভব। সিসিআরবির সিদ্ধান্ত আমাদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে যে উইনের জীবন মূল্যবান ছিল এবং আলঙ্গি ও সিয়ানফ্রোকো বিপজ্জনক। আমরা চাই, তাদের শাস্তি দেওয়া হোক এবং যেন তারা আর কাউকে ক্ষতি করতে না পারে। 

পরিবার এবং মানবাধিকার কর্মীরা মেয়র এরিক অ্যাডামসকে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। তারা শহরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এবং দাবি করেছেন, পুলিশের অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার ও কর্তৃত্বের অপব্যবহারের দায়ে কর্মকর্তাদের শাস্তি দিতে হবে। সিসিআরবির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করবেন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি কার‌্যকর হবে কি না। পুলিশ ইউনিয়নের সভাপতি প্যাট্রিক হেন্ড্রি বলেন, বোর্ড তদন্তকারীদের সুপারিশকে উপেক্ষা করেছে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে বোর্ড চরম পুলিশবিরোধী সক্রিয়তাবাদীদের প্রভাবিত হয়েছে। তবে সিসিআরবির মুখপাত্র ডাকোটা গার্ডনার বলেন, বোর্ড নিউইয়র্কবাসীর প্রতি দায়িত্বশীল এবং সব প্রমাণ পর‌্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মানবাধিকার সংগঠন ড্রাম। বিশেষ করে ড্রামের অর্গানাইজিং ডেরিক্টর কাজী ফৌজিয়া।

পরিবারের আইনজীবী লুনা দ্রৌবি বলেন, সিসিআরবির এ সিদ্ধান্ত রোজারিও হত্যার জন্য দায়ীদের দায়িত্বের দিকে একটি ধাপ এগিয়ে যাওয়া। বিচার কমিটি, যারা রোজারিও পরিবারের পক্ষ নিয়ে এসেছে, আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ শাস্তি প্রয়োগে বিলম্ব করতে পারে। কমিটির নির্বাহী পরিচালক লয়দা কোলন বলেন, আলঙ্গি ও সিয়ানফ্রোকোকে অবিলম্বে বরখাস্ত ও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

ঘটনাটি পুনরায় আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে পুলিশি সহিংসতা, মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের মোকাবিলা এবং পুলিশের আচরণ। সিসিআরবির এ রায় পরিবারের জন্য কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এসেছে, তবে পুরো শহর এবং পুলিশ বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া এখনো বাকি রয়েছে। রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসও এ ঘটনার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। উইন রোজারিওর হত্যার ঘটনা পুলিশের অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহারের প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের প্রশ্ন তুলেছে। পরিবার, আইনজীবী এবং সমর্থকরা আশা করছেন, সিসিআরবির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে এবং ভবিষ্যতে এমন নৃশংস ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।