বুধবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আশ্বিন ১ ১৪৩২   ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শেখ হাসিনা একজন ছোটখাটো হিটলার: মাহমুদুর রহমান

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৩৮ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বুধবার

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ‘নিজ দেশে কমিউনিস্ট ও ইহুদিদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিলেন হিটলার। কয়েক মিলিয়ন জার্মান নাগরিককে হত্যা করা হয়েছিল। তখন গোটা বিশ্ব বলেছিল, আর যেন এমন দানবের আগমন না ঘটে। নেভার এগেইন বলার উদ্দেশ্যই ছিল এ ধরনের গণহত্যা কখনো যেন আর না হয়। সেই প্রেক্ষাপট থেকেই বলেছি শেখ হাসিনাও একজন ছোটখাটো হিটলার ছিলেন।’

 

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

 

এদিন জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দেওয়া জবানবন্দিতেও জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাতে এমন বর্ণনা তুলে ধরেছেন এই সাক্ষী।

 

ব্রিফিংয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, হিটলারের মতো শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু মানসিকতায় তাকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। কেননা মানুষ হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলার কথা হিটলারও কোনোদিন বলেননি। কাজেই মানসিক দিক থেকে হিটলারকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন হাসিনা। তাই আমিও বাংলাদেশে 'নেভার এগেইন' বলতে চাই। শুধু হাসিনা বা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ নয়, আর কোনো ফ্যাসিস্ট শাসক যেন এ দেশে কখনো না আসে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের যাত্রা যেন গণতন্ত্রের দিকে হয়।

 

পরবর্তী সরকারগুলোকে সতর্ক করে তিনি বলেন, আমি পরবর্তী সরকারগুলোকে সতর্ক করে বলেছি, শেখ হাসিনার কাছ থেকে শিক্ষা নেবেন। তাদের দুষ্কর্ম থেকে শিক্ষা নেবেন। যেভাবে তারা রাষ্ট্রকে ধ্বংসের পাশাপাশি দুর্নীতি করেছে, তা থেকে পরবর্তী সরকারের শিক্ষা নেওয়া উচিত। যারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে আসবেন তারা যেন শেখ হাসিনার মতো গণবিচ্ছিন্ন হয়ে আবার জুলুমের পথ বেছে না নেয়।

 

জবানবন্দিতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স ম্যান’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দেন মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, সারাবিশ্বে সাড়া ফেলা ওই প্রতিবেদনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের দুর্নীতি আর মানবতাবিরোধী অপরাধের বর্ণনা রয়েছে। কোনো ফ্যাসিস্ট রেজিম কিংবা অটোক্রেটিক রেজিম গণতান্ত্রিক উপায়ে অপসারিত করা সম্ভব হয়নি বলে আমরা পৃথিবীর ইতিহাস থেকে জানতে পেরেছি। মধ্যপ্রাচ্যে মিশর-তিউনিশিয়ায় গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতন দেখেছি। বাংলাদেশেও ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ইতালি-জার্মানিতে ফ্যাসিস্ট শাসক মুসোলিনি ও হিটলারের পতন হয়েছিল।

 

তিনি বলেন, জার্মানিতে সেই সময় ইহুদি জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো গণহত্যা নিয়ে সারাবিশ্বে আওয়াজ উঠেছিল ‘নেভার এগেইন’। অর্থাৎ আর যেন কখনো হিটলারের মতো নিষ্ঠুর ফ্যাসিস্ট শাসকের আগমন না ঘটে। বাংলাদেশেও শেখ হাসিনার ১৫ বছরের চরম দুর্নীতিপরায়ণ ও মানবতাবিরোধী শাসন হয়েছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের প্রত্যাশা হলো আর যেন কখনো আমাদের দেশে এমন ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রত্যাবর্তন না ঘটে। কেননা জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সন্তান হারিয়ে শোক নিয়ে বেঁচে আছেন অন্তত ১৪০০ শহীদের মা-বাবা। এসব শহীদ পরিবার একটি ন্যায়বিচার দেখার অপেক্ষায় রয়েছে। এর সঙ্গে আরও প্রায় ২০ হাজার আহত জুলাই-যোদ্ধা চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন। আহতরাও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের 'কমান্ড রেসপনসিবিলিটিতে' থাকা ব্যক্তিদের বিচার দেখতে চান। এই আসামিদের মধ্যে যারা সরাসরি হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন এবং যারা হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতা বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেননি তারা সবাই কমান্ড রেসপনসিবিলিটির আওতাভুক্ত।

 

এই সাক্ষী আরও বলেন, আমি গত ১৬ বছর ধরে এই ফ্যাসিবাদের উত্থান, বিকাশ ও পতন প্রত্যক্ষ করেছি। এই বিষয়ে অনবরত লেখালেখির পাশাপাশি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্য দিয়ে জনগণকে অবহিত করার চেষ্টা করেছি। জুলাই গণহত্যার পর এই ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠিত হওয়ায় রাষ্ট্রের একজন বর্ষীয়ান নাগরিক হিসেবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করা নিজের কর্তব্য মনে করেছি। সেই সহযোগিতার অংশ হিসেবে আমি ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিচ্ছি। আমি চাই অপরাধীরা যেন সাজা পান, যেন ন্যায়বিচারের মাধ্যমে শহীদ ও আহত জুলাই-যোদ্ধা পরিবারের শোক কিছুটা হলেও লাঘব হয়। এ ছাড়া, ফ্যাসিস্ট শাসনের বিষয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা গেলে ভবিষ্যতের সরকারগুলোও সতর্ক হবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। কেননা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেভাবে বলা হয়েছিল নেভার এগেইন, বাংলাদেশেও এই বিচারের মাধ্যমে নিশ্চিত হোক যেন গত ১৫ বছরের দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তি আর না হয়।

 

এদিন বেলা পৌনে ১২টা থেকে মাহমুদুর রহমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। অবশিষ্ট সাক্ষ্যের পর তাকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তবে জেরা শেষ না হওয়ায় আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি করেন ট্রাইব্যুনাল।

 

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর সাইমুম রেজা তালুকদার, আব্দুস সাত্তার পালোয়ান, সহিদুল ইসলামসহ অন্যরা।