শনিবার   ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫   ভাদ্র ২৮ ১৪৩২   ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

৯/১১ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:০৩ এএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শনিবার


 
 
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে যে বর্বর ও ভয়াবহ হামলা চালানো হয়েছিল তাতে নিহতদের স্মরণ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। গতকাল ১১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার এই দিনটিকে স্মরণ করেন সকলে। ২০০১ সালের এদিনে চারটি যাত্রীবাহী জেট বিমান ছিনতাই করে সেগুলো দিয়ে আঘাত হানা হয়েছিল নিউইয়র্কের দুটি আকাশচুম্বী ভবনে। এই হামলা ছিল শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ একটি হামলা। শুধু আমেরিকানদের জন্যই নয়, গোটা বিশ্ববাসি চমকে গিয়েছিল ঘটনার ভয়াবহতায়। সারা বিশ্ববাসি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই নির্মমতা দেখে। অপরাধি গোষ্ঠি দুটি বেসামরিক বিমান বিধ্বস্ত করে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ারে।
প্রথম বিমানটি আঘাত হানে নর্থ টাওয়ারে আমেরিকার পূর্বাঞ্চলীয় সময় সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে। দ্বিতীয় বিমানটি সাউথ টাওয়ারে বিধ্বস্ত করা হয় এর অল্পক্ষণ পর, সকাল ৯টা ৩ মিনিটে। তাতে দুটি ভবনেই আগুন ধরে যায়। ভবন দুটির উপরতলায় মানুষজন আটকা পড়ে গিয়েছিল। শহরের আকাশে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। দুটি টাওয়ার ভবনই ছিল ১১০ তলা। মাত্র দুই ঘন্টার মধ্যে দুটি ভবনই বিশাল ধুলার কুন্ডলির ঝড় তুলে গুঁড়িয়ে যায়। মানুষ বাঁচার জন্য দিকবিদিক ছুটতে থাকেন। সকালেই নিউইয়র্কবাসিকে এমন নির্মম একটি ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে তা কারো জানা ছিল না। যারা সেদিন বেঁচে ফিরেছিলেন তাদের কাছে এই দিনটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শি। আরেকটি তৃতীয় বিমানটি ওয়াশিংটন ডিসির উপকণ্ঠে পেন্টাগনের সদর দপ্তরের পশ্চিম অংশে আঘাত হানে ওইদিন স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে। ছিনতাই হওয়া চতুর্থ বিমানের যাত্রীরা ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পর সেটি পেনসিলভেনিয়ায় বিধ্বস্ত হয়।
এসব ভয়াবহ হামলায় সব মিলিয়ে মারা গিয়েছিল ২,৯৭৭ জন। এই হিসাবের মধ্যে ১৯ জন ছিনতাইকারী অন্তর্ভুক্ত নেই। নিহতদের বেশিরভাগই ছিল নিউইয়র্কের বাসিন্দা। চারটি বিমানের ২৪৬ জন যাত্রী এবং ক্রুর প্রত্যেকে মারা যান। সর্বকনিষ্ঠ নিহতের বয়স ছিল দু’বছর। নাম ক্রিস্টিন লি হ্যানসন। তার বাবা মায়ের সাথে সে একটি বিমানের যাত্রী ছিল। নিহত সর্ব জ্যেষ্ঠ ব্যক্তির নাম রবার্ট নর্টন। তার বয়স ছিল ৮২। তিনি ছিলেন অন্য আরেকটি বিমানে এবং তার স্ত্রী জ্যাকুলিনের সাথে তিনি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন।
প্রথম বিমানটি যখন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আঘাত করে, তখন ভেতরে আনুমানিক ১৭ হাজার ৪০০ জন লোক ছিল। নর্থ টাওয়ারের যে অংশে বিমান আঘাত করে, তার উপরের কোন তলার মানুষই প্রাণে বাঁচেনি। তবে সাউথ টাওয়ারে যেখানে বিমান আঘাত করে, তার উপরের অংশ থেকে ১৮ জন প্রাণ নিয়ে বেরুতে পেরেছিল। হাজার হাজার মানুষ আহত হন, যারা পরে নানা ধরনের অসুস্থতার শিকার হন। যেমন দমকলকর্মীদের অনেকে বিষাক্ত বর্জ্যের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। উগ্র মতাদর্শের ইসলামপন্থী সংগঠন আল-কায়দা আফগানিস্তান থেকে এই হামলার পরিকল্পনা করেছিল বলে জানা যায়। ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বাধীন এই গোষ্ঠী মুসলিম বিশ্বে সংঘাত সৃষ্টির জন্য দায়ী করেছিল আমেরিকা এবং তার মিত্র দেশগুলোকে। প্রত্যেক দলে একজন ছিনতাইকারীর বিমানচালক হিসাবে প্রশিক্ষণ ছিল। এই ছিনতাইকারীরা তাদের পাইলটের ট্রেনিং নেন।
ওই হামলার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ আফগানিস্তান আক্রমণ করেন আল-কায়দাকে নিশ্চিহ্ন করতে এবং ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করতে। আমেরিকার নেতৃত্বাধীন এই অভিযানে যোগ দেয় আন্তর্জাতিক মিত্র জোট। যুদ্ধ শুরুর কয়েক বছর পর ২০১১ সালে মার্কিন সৈন্যরা অবশেষে ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে পায় প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানে এবং তাকে হত্যা করে। নাইন ইলেভেন হামলার অভিযুক্ত পরিকল্পনাকারী, খালিদ শেখ মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করা হয় পাকিস্তানে ২০০৩ সালে। এর পর থেকে তাকে গুয়ান্তানামো বে’র বন্দীশিবিরে আমেরিকার তত্ত্বাবধানে আটক করে রাখা হয়। এখন তিনি বিচারের অপেক্ষায় আছেন।