মঙ্গলবার   ১২ আগস্ট ২০২৫   শ্রাবণ ২৮ ১৪৩২   ১৭ সফর ১৪৪৭

ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ঘোষণা ট্রাম্পের

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৪৮ এএম, ১২ আগস্ট ২০২৫ মঙ্গলবার

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার রাজধানী ওয়াশিংটনে সহিংস অপরাধ দমন করতে সামরিক বাহিনী ও ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় দেওয়া ‘আইন ও শৃঙ্খলার প্রেসিডেন্ট’ হওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণের অংশ হিসেবে তিনি এ পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

 

রিপাবলিকান নেতা জানান, তিনি শহরের মেট্রোপলিটন পুলিশকে ফেডারেল সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনবেন এবং পাশাপাশি ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীর রাস্তায় নামাবেন।

 

ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত এ শহর সম্পর্কে রিপাবলিকান রাজনীতিকরা অভিযোগ করছেন, এটি অপরাধে ভরপুর, গৃহহীনতায় জর্জরিত ও আর্থিকভাবে অব্যবস্থাপনার শিকার, যদিও সহিংস অপরাধের হার কমেছে।

 

ট্রাম্প এদিন বলেন, ‘আজ (ওয়াশিংটন) ডিসিতে মুক্তির দিন এবং আমরা আমাদের রাজধানী ফিরিয়ে নেব।’

 

২০২১ সালে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনায় জড়িত প্রায় এক হাজার ৬০০ জনকে সম্পূর্ণ ক্ষমা প্রদান করা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় পুলিশ ও প্রসিকিউটররা যথেষ্ট কঠোর নন।

 

তিনি আরো জানান, সাত লাখ জনসংখ্যার এই শহরে ৮০০ জন ডিসি ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করা হবে, ‘প্রয়োজনে আরো বেশি’।

 

হোয়াইট হাউসে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাইরে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী জড়ো হন।

৬২ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত এলিজাবেথ ক্রিচলি ‘ডিসি স্বাধীনতার কথা বলে, ফ্যাসিবাদ নয়’ লেখা একটি প্ল্যাকার্ড হাতে বলেন, ‘এখানে ন্যাশনাল গার্ডের কোনো প্রয়োজন নেই। সবই দেখানোর জন্য। এটা নিছক এক বিশাল নাটক।’

 

এদিন হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের পাশে থাকা মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যের মধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথও ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘অন্য বিশেষায়িত’ ন্যাশনাল গার্ড ইউনিটও মোতায়েন করা যেতে পারে। তার মতে, ‘তারা শক্তিশালী হবে, কঠোর হবে এবং আইন প্রয়োগকারী অংশীদারদের সঙ্গে দাঁড়াবে।’

 

নতুন এই পদ্ধতি ট্রাম্পের অভিবাসননীতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, যেখানে ব্যাপক বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে কার্যত দক্ষিণ সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়েছে এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সক্রিয় দায়িত্বে থাকা সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

 

নিউইয়র্ক, শিকাগো, এরপর?

প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের জানান, তিনি এই নীতি অন্যান্য শহরেও চালু করার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি বিশেষভাবে নিউইয়র্ক ও শিকাগোর কথা উল্লেখ করেন।

 

৫০টি অঙ্গরাজ্যের বিপরীতে ওয়াশিংটন ফেডারেল সরকারের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের অধীনে পরিচালিত হয়, যা এর স্বায়ত্তশাসন সীমিত করে এবং কংগ্রেসকে স্থানীয় বিষয়গুলোতে অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ দেয়।

 

বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকে হোম রুল অ্যাক্ট বাসিন্দাদের মেয়র ও সিটি কাউন্সিল নির্বাচনের সুযোগ দিয়েছে, যদিও শহরের বাজেট এখনো কংগ্রেস নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে ওয়াশিংটন পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সহিংস অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যদিও তা মহামারি পরবর্তী উল্লম্ফনের পরের সময়।

 

ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলনের আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, তিনি গৃহহীন শিবিরগুলো নিয়েও পদক্ষেপ নিতে চান। এর আগে গত মাসে স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় গৃহহীনদের গ্রেপ্তার সহজ করা হয়। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, এসব ব্যক্তিকে ‘থাকার জায়গা’ দেওয়া হবে, তবে ‘রাজধানী থেকে অনেক দূরে’। ট্রাম্প আরো বলেন, অপরাধীদের কারাগারে পাঠানো হবে এবং সব কিছুই ‘খুব দ্রুত’ ঘটবে।

 

ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সির এক সাবেক কর্মী গাড়ি ছিনতাইয়ের চেষ্টার সময় মার খাওয়ার পর ফেডারেল আইন প্রয়োগকারীরা ইতিমধ্যে তাদের উপস্থিতি বাড়িয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমার প্রশাসন এফবিআই, এটিএফ, ডিইএ, পার্ক পুলিশ, ইউএস মার্শাল সার্ভিস, সিক্রেট সার্ভিস ও ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি থেকে ৫০০ ফেডারেল এজেন্টকে ডিসিতে পাঠিয়েছে। আপনারা জানেন, অনেক দেশের এ ধরনের কিছু নেই…তারা ডজনখানেক গ্রেপ্তার করেছে।’

 

গ্যালাপের গত অক্টোবরের এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে অপরাধ বেড়েছে বলে ৬৪ শতাংশ মার্কিন মনে করেন, যদিও এফবিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশব্যাপী সহিংস অপরাধের হার অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে সর্বনিম্ন। অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি বলেন, ‘আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই—ডিসিতে অপরাধের অবসান ঘটছে এবং আজই তা শেষ হচ্ছে।’