বাচ্চাগুলোর ড্রপ আউট : দায় কার
সাঈদ তারেক
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:০৭ এএম, ৯ আগস্ট ২০২৫ শনিবার

মন্তব্য প্রতিবেদন
নিজেরাই বলেছে শ্রেফ আনন্দ-ষ্ফুর্তি করার জন্য কক্সবাজারে যায় নাই। কিছু উটকো সাংবাদিক এর মধ্যে পিটার হাসের সাথে বৈঠকেরও একটা গোমড় ফাঁদলো। অথচ পিটার হাস এখন ওয়াশিংটনে। যদিও প্রথম বলেছিল মাসখানেকের দৌড়ঝাপে কাহিল, সমুদ্রের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে একটু এনার্জি গেইনই মূল উদ্দেশ্য, কিন্তু শো’কজ খাওয়ার পর আসল ঘটনা বের হয়ে এসেছে। নিজেরাই বলছে ব্যপারটা মান-অভিমানজনিত। মানিক মিয়ার মঞ্চে কেন উঠতে দেওয়া হলো না। বা এত টাইটে রাখার পরেও প্রফেসর সাহেব কেন নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষনা করলেন!
নেতা যত বড়ই নেতা হোক রাজনীতিতে নবীশ। অপরিনত। চুল যেমন বাতাসে পাকে না তেমনি শিক্ষা প্রজ্ঞা এবং অভিজ্ঞতা ছাড়া রাজনীতিক হওয়া যায় না- এটা ছেলেরা না বুঝলেও প্রফেসর সাহেবের বোঝা উচিত ছিল। অথচ তিনি মনে করেছিলেন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় একটা দল খাড়া করে দিলেই হয়ে গেল! সবাই বাঘা বাঘা সব জাতীয় নেতা হয়ে যাবে। জাতির নেতৃত্ব দেবে। ভোটে জিতবে। আগামী দিনে সরকারও গঠন করবে! এই যে একটা ধারনা এদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটাই কাল হয়েছে ছেলেগুলোর জন্য। হাত বাড়ালেই মুঠোমুঠো টাকা। ফোন করলে বস্তা হাজির। ওসি এসপির ঠকাঠক স্যালুট। সফরে গেলে সার্কিট হাউস ফ্রি। দামী গাড়ীর বহর। ইচ্ছামাত্র বিমানের টিকেট হাজির। বিলাশবহুল হোটেলের স্যুট রেডি। এই আয়েশী জীবন কে ছাড়তে চায়! এখন নির্বাচন হলে মাথা খারাপ হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কারন বলার অপেক্ষা রাখে না বিএনপি যদি সরকার গঠন করে এই মৌরসীপাট্টা থাকবে না। কোন সরকারই এ ধরনের মামুবাড়ির আবদার গায়ে মাখবে না।
আমি ভাবি প্রফেসর সাহেব চলে গেলে এই ছেলেগুলোর অবস্থা কি দাঁড়াবে! কি এদের ভবিষ্যৎ! কে এদেরকে দেখে রাখবে, পুলিশ প্রটেকশন দেবে, ভিআইপি প্রটোকল দেবে! শুরুটাই তো হয়েছে এতসব পাওয়া দিয়ে। কিংস পার্টি। ক্ষমতায় বসে দল। বা ক্ষমতাসীন দল। প্রফেসর সাহেবের আষ্কারায় সরকারের ঘাড়ে চেপে বসে আছে! এতদিন যা চেয়েছে তাই হয়েছে। যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই পেয়েছে। এখন যদি নির্বাচন দিয়ে প্রফেসর সাহেব সটকে পড়তে চান এরা তা মানবে কেন। বলতেই তো পারে আমাদেরকে কোথায় রেখে যাচ্ছেন! আসল অভিমানটা এ কারনেই।
বয়স কম হলেও ঘাস-বিচালি তো আর খায় না। তারা কি বুঝতে পারছে না কোথা থেকে কোথায় নেমে যাচ্ছে! ছিলো হিরো, আজ হতে চলেছে ভিলেন। আওয়ামী লীগের লোকজন পেলে কিলিয়ে ভর্তা বানাবে- সেটা তারা জানে। নির্বাচনের বিরোধীতা করে, বিএনপির নেতাদের সম্পর্কে উল্টাপাল্টা বলে সে দলটিরও বিরাগভাজন। বেয়াদপী ঔদ্ধত্ব অতিকথন বাড়াবাড়ি ঘাড়ত্যারামি- ইত্যাকার কারনে সাধারন মানুষ বিরক্ত। ক্ষমতার প্রটেকশন না পেলে কি অবস্থা হবে এই ছেলেগুলোর!
আমি আগেও এক লেখায় বলেছি, একটা মস্তবড় ভুল করেছেন প্রফেসর সাহেব। তিনি একজন শিক্ষক, অভিভাবক। তার উচিত হয় নাই সম্ভাবনাময় ছেলেগুলোকে রাজনীতির প্যাকে এনে ফেলা। তরুন যুবকদেরকে ক্ষমতার সাথে সম্পৃক্ত করা। বাংলাদেশে ক্ষমতা মানে টাকার খনি। অল্প বয়সের ছেলের দল। চোখের সামনে টাকা উড়তে দেখলে কতক্ষণ হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারবে। তার ওপর পনের বছর শেখ হাসিনা লুটপাটের স্বর্গরাজ্য কায়েম করে তরুন যুব সমাজের নীতি-নৈতিকতাবোধ ধ্বংশ করে দিয়ে গেছে। আজকে যারা ২৫/৩০ বছরের যুবক জ্ঞানবুদ্ধি হওয়ার পর থেকে দেখে এসেছে সর্বত্র নীতিহীনতার চর্চা। ওরা জানে ক্ষমতার দল মানেই অবাধ লুটপাট। চাঁদাবাজী ঠ্যাকবাজী গুন্ডামি মাস্তানীর মাধ্যমে অল্প সময়ে বিত্তশালী হওয়া। আজকের এই ছেলেরাও সরকারী দল গঠন করে কেউ কেউ সেই কাজে নেমে পড়েছে। এতে অবাক হবার কিছু নাই। এটাই স্বাভাবিক।
প্রফেসর ইউনুসের উচিত ছিল বুঝিয়েশুনিয়ে ছেলেগুলোকে যার যার ক্লাশে ফেরত পাঠানো। লেখাপড়ায় উদ্বুদ্ধ করা। রাজনৈতিক দল গঠন না করে একটা অরাজনৈতিক সংগঠনে নিজেদেরকে সংঘবদ্ধ রাখতে পরামর্শ দেওয়া। ক্ষমতার বাইরে অবস্থান করে নিজেদের ভাবমূর্তি ধরে রাখা। যারা বর্তমানসহ ভবিষ্যতের যে কোন সরকারের জন্য একটা প্রেশার গ্রুুপ হিসেবে কাজ করতে পারতো। আমার বিশ্বাষ এমনটা হলে সারা দেশের মানুষের সম্মান এবং আস্থা ধরে রাখতে পারতো।
রাজনীতিতে ঢুকে, রাজনৈতিক দল গঠন করে এরা এখন একটা পক্ষ। ক্ষমতার রাজনীতিতে অন্য দলের প্রতিপক্ষ। প্রফেসর সাহেব চলে গেলে বা ক্ষমতা যখন থাকবে না টিকে থাকবে কেমন করে, সেটা তারা ভাবতেই পারে! নুর-রাশেদরা যাহোক এখনও বাতিটা জ্বালিয়ে রেখেছে, ইমরান সরকার লাপাত্তা! মাসছয়েকও যায় নাই এর মধ্যেই বিভক্তি মান-অভিমান শো’কজ, নোটিশ!
গত বছরের ৫ই অগাষ্টের পর তরুন প্রজন্মকে নিয়ে যে আশার আলো জ্বলে উঠেছিল, এক বছরের মাথায় তার অনেকটাই আজ নিষ্প্রভ। আর এর ফোকাল পয়েন্ট হচ্ছে প্রফেসর ইউনুসের গড়া ছেলেদের এই নতুন দলটা। তরুন প্রজন্ম যদি আজ ক্ষমতার চোরাবালিতে পথ হারায় তার দায় প্রফেসর সাহেব এড়াতে পারবেন না।
৭ জুলাই, ২০২৫
নিউ ইয়র্ক।