শনিবার   ০২ আগস্ট ২০২৫   শ্রাবণ ১৮ ১৪৩২   ০৭ সফর ১৪৪৭

বাংলাদেশি দিদারকে অশ্রসিক্ত বিদায়

আজকাল রিপোর্ট

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:০১ এএম, ২ আগস্ট ২০২৫ শনিবার


নিউইয়র্কে বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম (৩৬) দায়িত্ব পালনকালে বেপরোয়া এক সন্ত্রাসি শ্যান তামুরার (২৭) গুলিতে গত সোমবার নির্মমভাবে নিহত হন। এই নির্মমতার পর নিউইয়র্ক পুলিশ এনওয়াইপিডিতে শোকে মুহ্যমান হয়ে যান হাজার হাজার পুলিশ কর্মকর্তা। সহকর্মীকে হারিয়ে তাদের কান্নায় চারপাশে শোকার্ত মানুষও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। এমন নির্মমতায় সোমবার থেকে শোকে কাতর ছিল হাজার হাজার মানুষ। পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম এই শহরের মানুষের নিরাপত্তা সুরক্ষা দিতে বীরের বেশে জীবন উৎসর্গ করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার হাজার হাজার মানুষের শ্রদ্ধা, ভালবাসা আর অশ্রুসিক্ত শেষ বিদায়ের মধ্য দিয়ে দিদারুল ইসলামের নামাজে জানাজা বোঙ্কসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজার আগে নিহত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামের সম্মানে ডিটেকটিভ ফার্স্ট গ্রেড পদোন্নতি দিয়ে তাঁকে দাফন করা হয়। গত সোমবারের এই ঘটনার পর সিটি মেয়র এরিক এডামস থেকে শুরু করে পুলিশ কমিশনার জেসিকা সারাহ টিসচ এবং তার সহকর্মীরা ব্রোঙ্কস-এ নিহত পুলিশ কর্মকর্তার পরিবারের কাছে ছুটে যান। মূল ধারার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও দিদারুলের পরিবারের পাশে দাঁড়ান। নিহত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রী ও ছোট ছোট দুই ছেলে রেখে গেছেন।
লাস ভেগাসের একটি ক্যাসিনোতে নিরাপত্তার দায়িত্বে কাজ করতো ঘাতক তামুরা। ওই ক্যাসিনোর সুপারের কাছ থেকে ১৪০০ ডলারে কেনা রাইফেলটি নিয়ে সে নিউইয়র্কে আসে হত্যাযজ্ঞের উদ্দেশ্যে। ম্যানহাটনের পার্ক অ্যাভিনিউতে প্রকাশ্যে রাইফেলটি নিয়ে  হেঁটে বহুতল ভবনটিতে ঢুকে। পরে বন্দুকধারীর গুলিতে পুলিশ কর্মকর্তাসহ চারজন নিহত হন। ভবনটির ৩৩তলায় ওই বন্দুকধারী নিজেই আত্মঘাতী গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 
গাড়ীতে করে অস্ত্রসহ সারাদেশ সে ঘুরে বেড়িয়েছে। কোথাও তাকে থামতে হয়নি। এমনকি নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে বিশাল অস্ত্রটি নিয়ে হেঁটে ২ ব্লক পার হলে পুলিশ, কোন ডিটেকটিভ বা সাধারণ মানুষ  কেউ তাকে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করেনি বা পুলিশকে কেউ ফোনও করেনি। বীরদর্পে  সে বহুতল ভবনে ঢুকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে নিরপরাধ মানুষদের। বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ কর্মকর্তা  দিদারুল ইসলাম (৩৬) নিহত হবার পর নিউইয়র্ক থেকে একটি ডিটেকটিভ টিম এখন লাস ভেগাসে তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।
কি ঘটেছিল নিউইয়র্কে তা নিয়ে মানুষ ছিলেন আতঙ্কে। গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টার কিছু আগে পুলিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবাইকে পার্ক অ্যাভিনিউ এবং ইস্ট ৫১তম স্ট্রিট এলাকা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানায়। কিছুক্ষণ পর মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, ‘নিউইয়র্কবাসী, ম্যানহাটনের মিডটাউনে একটি গুলির ঘটনা চলছে। আশপাশে থাকলে সতর্ক থাকুন এবং পার্ক অ্যাভিনিউয়ের কাছাকাছি থাকলে বাইরে বের হবেন না।’
এফবিআইয়ের নিউইয়র্ক ফিল্ড অফিস জানিয়েছে, তারা ঘটনাস্থলে সহায়তা দিচ্ছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউয়ের ওই ভবনে ন্যাশনাল ফুটবল লিগ (এনএফএল), ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম ব্ল্যাকস্টোন এবং জেপি মরগান চেজের করপোরেট অফিস রয়েছে। এনএফএল কর্মীদের সতর্ক করে জানানো হয়, ‘বাইরে কেউ বের হবেন না। নিজের অবস্থান সুরক্ষিত রাখুন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আপনার তলা ক্লিয়ার না করা পর্যন্ত সাবধানে থাকুন। ফোন সাইলেন্ট করে দিন।’
হামলার সময় ভবন থেকে অগণিত সাধারণ মানুষদের হাত উপরে তুলে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। আশপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও জরুরি বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি জানান, সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্ক একটি কমান্ড পোস্ট স্থাপন করেছে এবং এফবিআই ঘটনাস্থলে রয়েছে। হাউস মাইনরিটি লিডার হাকিম জেফরিজ পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এনওয়াইপিডির জন্য প্রার্থনা করছি। এই কঠিন সময়ে ঈশ্বর যেন আমাদের শহরের উপর দৃষ্টি রাখেন।’
পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামের মৃত্যুতে বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ সারা পৃথিবীতে তোলপাড় হয়ে যায়। নিউইয়র্কের সাধারণ মানুষ সন্ত্রাসিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে আহবান জানান।