বৃহস্পতিবার   ৩১ জুলাই ২০২৫   শ্রাবণ ১৫ ১৪৩২   ০৫ সফর ১৪৪৭

দিদারুলকে ‘বীর’ বলল নিউ ইয়র্ক পুলিশ

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:০১ এএম, ৩০ জুলাই ২০২৫ বুধবার

নিউ ইয়র্ক সিটির একটি ব্যস্ত এলাকায় ভবনে গুলি চালানোর ঘটনায় নিহত ৪ জনের মধ্যে একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন ৩৬ বছর বয়সী দিদারুল ইসলাম। হত্যার কয়েক ঘণ্টা পর ঘুমন্ত ব্রঙ্কস এলাকার রাস্তায় আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হন।

 

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। তার দুটি সন্তান ছিল এবং তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে তৃতীয় সন্তানের প্রত্যাশায় ছিলেন।

 

দিদারুলের মৃত্যুর পর এক সংবাদ সম্মেলনে নিউ ইয়র্কের পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ বলেছেন, আমরা তাকে যে কাজ করতে বলেছিলাম, তিনি সেই কাজটিই করছিলেন। তিনি নিজেকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন, সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বেঁচে আছেন - একজন বীর।

 

নিউ ইয়র্ক পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বিবৃতিতে বলেছে, কর্তব্যরত অবস্থায় মারা যাওয়া পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলামের মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমরা নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগ এবং সমগ্র নিউ ইয়র্কবাসীর শোকে শরীক। ৪৭তম প্রিসিঙ্কটের ৩৬ বছর বয়সী একজন স্বামী এবং বাবা দিদারুল নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগে সাড়ে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। তিনি তার স্ত্রী, দুই ছোট ছেলে এবং এক অনাগত শিশুকে রেখে গেছেন।

 

নিউ ইয়র্ক পুলিশ আরও বলেছে, এই ভয়াবহ ঘটনায় তিনজন নিরীহ বেসামরিক নাগরিকেরও প্রাণহানি ঘটে। আমাদের হৃদয় ক্ষতিগ্রস্ত সকল পরিবারের সঙ্গে রয়েছে। নিউ ইয়র্ক পুলিশ এই গভীর ক্ষতির সময়ে শোকাহত সকলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অফিসার দিদারুলের সেবা এবং ত্যাগ কখনো ভোলা যাবে না।

 

এদিকে ম্যানহাটন হাসপাতাল থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে শহরের মেয়র এরিক অ্যাডামস আরও বলেন, 'তিনি জীবন রক্ষা করছিলেন। তিনি নিউ ইয়র্কবাসীদের রক্ষা করছিলেন। তিনি এই শহরের আসল ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।'

 

মেয়র জানান, হামলার পর তিনি দিদারুলের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি বলেন, 'তিনি তার বাবার একমাত্র ছেলে ছিলেন। আমি আমার সন্তান জর্ডানের কথা ভাবছি...। এত বড় ক্ষতি অকল্পনীয়।'

 

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লাস ভেগাস থেকে একজন বন্দুকধারী গাড়ি চালিয়ে একটি অফিস ভবনের বাইরে গুলি চালিয়ে চারজনকে হত্যা করে এবং নিজেকেও আত্মহত্যা করে। তার উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয়। দিদারুলই প্রথম মারা যান।

 

দিদারুলের বেসমেন্টের ভাড়াটে ৪৯ বছর বয়সী শুয়েব চৌধুরী বলেছেন, তিনি পরিবারের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। 'আমি বিশ্বাস করতে পারছি না (সে মারা গেছে)...। সে খুব ছোট ছিল। আজ সকালে আমি তাকে দেখেছি...১২ ঘণ্টা পরে মারা গেল।'

 

দিদারুলের ঘনিষ্ঠ পারিবারিক বন্ধু ৩১ বছর বয়সী মারজানুল করিম বলেন, দিদারুল (নিউ ইয়র্কে) বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের তরুণদের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি একজন অভিবাসী হিসেবে এসেছিলেন, একটি স্কুলে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি পরিবারকে সাহায্য করতে এবং আরও ভালো অবস্থানে থাকতে চেয়েছিলেন।

 

মারজানুল করিম আরও বলেন, নিরাপত্তার কাজ করার সময় তিনি (দিদারুল) আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। সেই সময়, আমার মা তাকে বলেছিলেন, 'তুমি একটি স্কুলে নিরাপদ চাকরি ছেড়ে দিয়েছ...পুলিশ হওয়া বিপজ্জনক। তুমি কেন এমন করলে?' তিনি মাকে বলেছিলেন, তার পরিবারের জন্য এমন একটি উত্তরাধিকার রেখে যেতে চান, যা নিয়ে তারা গর্ব করতে পারে।