বৃহস্পতিবার   ১০ জুলাই ২০২৫   আষাঢ় ২৬ ১৪৩২   ১৪ মুহররম ১৪৪৭

আরও ৬ দেশের ওপর ৩০% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:৪৯ এএম, ১০ জুলাই ২০২৫ বৃহস্পতিবার

আরও ছয়টি দেশের ওপর ৩০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ বুধবার গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

নিজের মালিকানাধীন সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে এক পোস্টে তিনি এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ওই পোস্টে আরও কয়েকটি দেশকে বাণিজ্য নোটিশ পাঠানোর ঘোষণা দেন ট্রাম্প।

শুল্ক আরোপ করা ছয় দেশ হলো-ব্রুনাই, ফিলিপাইন, ইরাক, আলজেরিয়া, মলদোভা ও লিবিয়া।

আলজেরিয়া ৩০ শতাংশ, ব্রুনাই ২৫ শতাংশ, ইরাক ৩০ শতাংশ, লিবিয়া ৩০ শতাংশ, মলদোভা  ২৫ শতাংশ, ফিলিপাইনের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।  এই নতুন শুল্কহার এপ্রিল মাসে ঘোষিত হারগুলোর তুলনায় কিছুটা কম হলেও আগের ১০ শতাংশ সাধারণ শুল্কনীতির চেয়ে অনেক বেশি।

ট্রাম্প প্রশাসন এসব বাড়তি শুল্ককে ‘অসমতা’ ও ‘অপারস্পরিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক’-এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। চিঠিতে দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রেই পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করা হয়েছে, যাতে তারা এই শুল্ক এড়াতে পারে। একই সঙ্গে শুল্কের প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। ৩ জুলাই থেকে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তা পিছিয়ে আগামী ১ আগস্ট নির্ধারণ করেছেন।

এর আগে বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিত্র দেশ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরও ১৪ দেশের ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এসব দেশকে আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ট্রাম্পের নতুন ঘোষণা বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করবে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই এর খারাপ প্রভাব পড়বে।

শুল্ক আরোপ করা হয়েছে এমন অন্য দেশগুলো হলো– বাংলাদেশ, মিয়ানমার, লাওস, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, সার্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, কাজাখস্তান, তিউনিসিয়া ও মালয়েশিয়া।

মিয়ানমার ও লাওসের ওপর সবচেয়ে বেশি ৪০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। মিয়ানমার যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও সামুদ্রিক খাবার এবং লাওস ট্রেক্সটাইল পণ্যসহ জুতা, কাঠের আসবাব, ইলেকট্রনিক উপাদান ও অপটিক্যাল ফাইবার রপ্তানি করে। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া ৩৬ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়েছে। কম্বোডিয়া যুক্তরাষ্ট্রে টেক্সটাইল, পোশাক, জুতা ও সাইকেল এবং থাইল্যান্ড কম্পিউটার যন্ত্রাংশ, রাবার পণ্য ও রত্নপাথর রপ্তানি করে। সার্বিয়ার ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে সফটওয়্যার ও আইটি পরিষেবা এবং গাড়ির টায়ার রপ্তানি করে থাকে। 

ইন্দোনেশিয়া ৩২ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হয়েছে। দেশটি পাম অয়েল, কোকো মাখন ও সেমিকন্ডাক্টর যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের বসনিয়ার প্রধান রপ্তানি অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং দক্ষিণ আফ্রিকা প্লাটিনাম, হীরা, যানবাহন এবং গাড়ির যন্ত্রাংশ রপ্তানি করে। 

জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কাজাখস্তান, তিউনিসিয়া ও মালয়েশিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। জাপান যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি, গাড়ির যন্ত্রাংশ ও ইলেকট্রনিকস পণ্য; দক্ষিণ কোরিয়া যানবাহন, যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রনিকস পণ্য; কাজাখস্তান তেল, ইউরেনিয়াম, ফেরোঅ্যালয় ও রুপা এবং মালয়েশিয়া ইলেকট্রনিকস ও বৈদ্যুতিক পণ্য রপ্তানি করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিউনিসিয়ার প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো, প্রাণী ও উদ্ভিজ্জ চর্বি, পোশাক, ফল ও বাদাম। বাংলাদেশের ওপর শুল্ক আরোপ হয়েছে ৩৫ শতাংশ। দেশটি বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে। 

শুল্ক আরোপের চিঠিতে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই দেশগুলোর সঙ্গে তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়। তবে তা হতে হবে ন্যায্য ও সুষম বাণিজ্যের মাধ্যমে। তিনি হুমকি দিয়েছেন, কোনো দেশ প্রতিশোধমূলক পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিলে, তাদের ওপর আরও উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হবে। আর বাণিজ্য বাধা দূর করতে আলোচনা চাইলে সেই পথ খোলা আছে। সোমবার শুল্ক আরোপের সময়সীমা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, সময়সীমার ঘোষণাটি শতভাগ মানা হবে তা নয়। কেউ আলোচনা চাইলে পথ খোলা। 

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে আলোচনা করবেন। দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় বলেছে, সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তারা আলোচনায় বসবে।