বুধবার   ২৫ জুন ২০২৫   আষাঢ় ১১ ১৪৩২   ২৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

ট্রাম্পের ওপর কতটা ভরসা করা যায়

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৩২ এএম, ২৫ জুন ২০২৫ বুধবার

ইরান-ইসরায়েলের সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কা বিপজ্জনকভাবে উসকে দিয়েছিল। সেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে পরিস্থিতি আপাতত সামলে নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ জন্য তিনি সাধুবাদ প্রাপ্য। তবে যে প্রক্রিয়ায় যুদ্ধবিরতির পথে তিনি হাঁটলেন তা নিয়ে সংশয়-সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। এরপর ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে ট্রাম্পের বিভিন্ন মন্তব্য তার প্রতি আস্থার সংকটও দেখা দিয়েছে।

ইরানে ১৩ জুন অতর্কিত হামলা করে ইসরায়েল। সেই সময় বিশ^ জানত- এই হামলার পেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে। ট্রাম্প প্রথম বলেছিলেন, তারা এই হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। কিন্তু হামলাকে ‘চমৎকার’ বলে আখ্যা দেন তিনি। এরপর তেহরান বারবার সতর্ক করেছে- এই লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র যোগ দিলে পরিস্থিতি ‘নরকে’ পরিণত হবে। সেই সময় কানাডায় জি-৭ সম্মেলনে ছিলেন ট্রাম্প। সেখান থেকে তড়িঘড়ি করে ওয়াশিংটনে ফিরলেন তিনি। পথে সাংবাদিকদের বললেন- তিনি আসলে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চান না, তার থেকেও ভালো কিছু আশা করছেন। চিরতরে সংঘাতের অবসান চাইছেন। এরপরই দুই সপ্তাহের আলটিমেটাম দিলেন ট্রাম্প। বিশে^র তুখোড় সব বিশ্লেষক ধরে নিলেন, ট্রাম্প আসলে কূটনীতিক পথেই হাঁটছেন। এই জন্যই তেহরানকে দুই সপ্তাহের সময় দিয়েছেন। কিন্তু কোথায় কী! সেই কথার দুই দিনের মাথায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে বোমারু বিমান দিয়ে আঘাত করেন ট্রাম্প। সেটিও আবার মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন না নিয়েই।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ট্রাম্পের এই

পদক্ষেপকে ‘পেছন থেকে ছুরি মারার’ সঙ্গে তুলনা করলেন। তিনি বললেন, এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আর কীভাবে ভরসা করা যায়। যদিও ট্রাম্প হামলার পরই জাতির উদ্দেশে তিন মিনিটের ভাষণে বলেন- ইরানকে এখনই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে, নয়তো আরও কঠিন হামলার মুখে পড়তে হবে। অর্থাৎ কূটনীতিক পথে নয়, বরং বোমা মেরেই শান্তি স্থাপনের চিন্তা করছেন ট্রাম্প!

এরপর ট্রাম্প বলেন, ‘সরকার উৎখাতে রাজনৈতিকভাবে সঠিক শব্দ নয় কিন্তু ইরান যদি মহান হতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এখনই সরকার পরিবর্তন (রেজিম চেঞ্জ) নয় কেন।’ এর আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কথা তিনি বলেন, ‘সহজ টার্গেট’ কিন্তু এখনই তাকে হত্যা নয়। এই কথা নেতানিয়াহুর কথারই প্রতিধ্বনি মাত্র। নেতানিয়াহু বলেছিলেন, খামেনিকে হত্যা করলে উত্তেজনা শেষ হবে। এমন বেশ কিছু নৈতিকতাবিবর্জিত মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টও।

ইরানে মার্কিন হামলার পরদিন কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা করে ইরান। এরপরই সুর বদলান ট্রাম্প। তড়িঘড়ি করে কাতারের আমিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণার মধ্যেও ইসরায়েলের দিকে পক্ষপাত করেছেন তিনি। পরবর্তীতে ইরানের ‘রেজিম চেইঞ্জ’ নিয়েও সুর বদলান তিনি। গতকাল তিনি বলেন, ইরানে সরকার উৎখাতে আগ্রহ নেই। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি হলে আরও অস্থিরতা দেখা দেবে।

দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প তার কথায় স্থির থাকতে পারছেন না। একবার এক কথা বলছেন, পরবতীতে আবার উল্টো পথে চলছেন। এর আগে বাণিজ্য যুদ্ধেও আমরা তাই দেখেছি। এমনকি চীনের সঙ্গে আলোচনা না করেও তিনি বলেছেন, আলোচনা হয়েছে। এমন একটি রাষ্ট্রপ্রধানের ওপর বিশ^ আসলেই কতটা ভরসা করতে পারে?