শুক্রবার   ১৩ জুন ২০২৫   জ্যৈষ্ঠ ২৯ ১৪৩২   ১৬ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

যুক্তরাষ্ট্রের টিকা কমিটির সবাইকে বরখাস্ত করলেন কেনেডি

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৮:০১ পিএম, ১০ জুন ২০২৫ মঙ্গলবার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টিকা কমিটির ১৭ সদস্যের সবাইকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র। সোমবার (৯ জুন) টিকা নিয়ে সংশয়বাদী হিসেবে পরিচিত কেনেডি ঘোষণা দেন, এসিআইপির সব সদস্যই ‘অবসরে’ যাচ্ছেন।

এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক সম্পাদকীয়তে তিনি বলেন, অ্যাডভাইজরি কমিটি অন ইমিউনাইজেশন প্র্যাকটিসেসের (এসিআইপি) সদস্যদের ‘স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ টিকার প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ণ করেছে। আমেরিকানদের জন্য ‘সবচেয়ে নিরাপদ’ টিকা নিশ্চিত করতে চান বলে দাবি করেন কেনেডি। 

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেনেডির দীর্ঘদিনের টিকাবিরোধী মনোভাব নিয়ে সমালোচনা করে আসছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে সিনেটে তিনি বলেছিলেন, টিকা ‘সরিয়ে নিচ্ছেন না’।

জানা যায়, গত জানুয়ারিতে বহিষ্কৃত ১৭ সদস্যের মধ্যে আটজন নিয়োগ পেয়েছিলেন বাইডেন প্রশাসনের মেয়াদের শেষ মুহূর্তে। বেশিরভাগ সদস্যই বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ।

কেনেডির ভাষ্য, এই কমিটি যদি তিনি ভেঙে না দিতেন, তাহলে ২০২৮ সাল পর্যন্ত নতুন সদস্য নিয়োগ করতে পারত না ট্রাম্প প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে এই কমিটি স্বার্থের দ্বন্দ্বে জর্জরিত এবং যেকোনো টিকার অনুমোদনে নামমাত্র সিলমোহরের ভূমিকা পালন করছে।

কেনেডি দাবি করেন, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ও ওষুধ কোম্পানিগুলোই ‘জনগণের আস্থার সংকট’ সৃষ্টি করেছে, যাকে ‘ভ্রান্ত তথ্য বা বিজ্ঞানবিরোধী মনোভাবের ওপর দায় চাপিয়ে’ ব্যাখ্যা করেন অনেকে।

১৯৯০ ও ২০০০ দশকের উদাহরণ টেনে সম্পাদকীয়তে কেনেডি বলেন, এখনো চলমান এই স্বার্থের সংঘাত। 

তিনি বলেন, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য পয়সাকড়ি পেয়েছে এসিআইপির বেশিরভাগ সদস্যই, যাদের মধ্যে টিকা বিপণনকারী কোম্পানিও রয়েছে।

তবে এই পদক্ষেপ কেনেডির শপথবাক্যের সময় দেওয়া আশ্বাসের ঠিক বিপরীত। লুইজিয়ানার রিপাবলিকান সেনেটর ও চিকিৎসক বিল ক্যাসিডি বলেছেন, এসিআইপিতে কোনো পরিবর্তন না করার আশ্বাস তাকে দিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

ক্যাসিডি সোমবার এক্স পোস্টে লেখেন, এখন শঙ্কা হচ্ছে- এসিআইপি এমন লোকে ভরে যাবে, যাদের টিকা নিয়ে কোনো জ্ঞান নেই, কেবল সন্দেহ আছে। কেনেডির সঙ্গে মাত্রই কথা বলেছি আমি এবং তেমনটা যেন না হয়, সেজন্য তার সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাব।

‘স্বার্থের দ্বন্দ্ব’ থাকলে তা অনলাইনে প্রকাশ করতে হয় এসিআইপি সদস্যদের। যদি এমন দ্বন্দ্ব থাকে, তবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়।

কেনেডি লিখেছেন, এসিআইপি সদস্যরা দুর্নীতিগ্রস্ত- এ সমস্যা তেমন নয়। বেশিরভাগই জনস্বার্থে কাজ করতে চেয়েছেন- নিজেদের বোঝাপড়া অনুযায়ী। তবে সমস্যা হল- এমন শিল্পঘেঁষা উদ্দীপনা ও দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবস্থার অংশ তারা, যা কেবল শিল্পের স্বার্থ দেখে।

যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকদের সংগঠন আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ব্রুস স্কট বলেন, এই সিদ্ধান্ত ‘একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করেছে, যা অসংখ্য জীবন বাঁচিয়েছে।’

তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, হামের প্রাদুর্ভাব এবং শিশুদের টিকাদানের হার কমার মধ্যে এই পদক্ষেপ এলো। এখন এমন রোগ ছড়ানো সুযোগ পাবে, যা টিকা দিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল।

জানা যায়, বোর্ড সদস্য হিসেবে কাদের আনবেন তা কেনেডি খোলাসা করেননি। আগামী ২৫ জুন এসিআইপির সভার জন্য দিন ঠিক করা হয়েছে, যেখানে কোভিড, ফ্লু, মেনিনজাইটিস, আরএসভিসহ বিভিন্ন রোগের টিকার সুপারিশ নিয়ে ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে।