বাংলাদেশিরা ভয়ে কোর্টে যাচ্ছেন না
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৩৪ এএম, ৭ জুন ২০২৫ শনিবার

নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের ইমিগ্রেশন কোর্ট এক সময় রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী অভিবাসিদের কাছে ছিল নিরাপদ আশ্রয়স্থল। একজন অসহায় অভিবাসি কোর্টে এসে তার আশ্রয়ের পক্ষে বিচারকের হৃদয় স্পর্শ করে নিবেদন করতে পারতেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর ইমিগ্রেশন আদালতে হাজিরা দিতে এখন অবৈধ অভিবাসিরা ভয় পান। শুনানির দিন আরও কয়েক বছর পিছিয়ে দিতে তারা বিচারকের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন। আবেদনকারীদের অনেকে আবার আদালতে আসছেন না। তারা এটর্নির মাধ্যমে আদালতে আবেদন জানাচ্ছেন। কারণ অভিবাসিদের জন্য আদালত এখন আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে অনেক আবেদনকারীর আবেদন প্রত্যাখাত হবার পরক্ষণেই ‘আইস পুলিশ’ তাদেরকে গ্রেপ্তার করছে। আদালত থেকে বের হবার পর তারা গ্রেপ্তার হতে পারেন এই আতঙ্ক এখন হাজিরা দিতে ভয় পাচ্ছেন। আদালতে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিকে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার ঘটনা তারা জানিয়েছেন।অনেকে ইমিগ্রেশন কোর্টের হেয়ারিং এ অংশ নিচ্ছেন না। এটর্ণিদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন শুনানীর তারিখ পেছাতে।
দেশজুড়ে আদালত প্রাঙ্গণে বসানো হয়েছে ‘আইস এজেন্ট’। আদালতে নিয়ম মেনে হাজির হওয়া অভিবাসীদের হাতকড়া পরিয়ে তুলে নেওয়া হচ্ছে আদালত ভবনের ভেতর থেকে। ইমিগ্র্যান্ট অধিকার কর্মীরা জানান, অনেক সময় অভিবাসন কর্তৃপক্ষের মৌখিক আবেদনে বিচারকরা মামলা শুনানি বন্ধ করে দিচ্ছেন, যেখানে নিয়ম অনুযায়ী লিখিত আবেদন জমা দেওয়া এবং আসামিকে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র পরিচালক গ্রেগরি চেন জানান, কিছু বিচারক লিখিত নোটিশ ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে মামলা খারিজ করছেন।
বিলি বোচ, আমেরিকান ফ্রেন্ডস সার্ভিস কমিটির একজন পর্যবেক্ষক জানান, পরিবারের সদস্যরা যারা স্বজনদের আইনি শুনানিতে সহযোগিতা করতে এসেছিলেন, তারা দেখেছেন কীভাবে মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্কের ছায়ায় ঢেকে যায়। শুনানি শেষে তারা খুশি ছিল, কিন্তু হঠাৎ স্বজনকে হাতকড়া পরে নিয়ে যাওয়া হয়। আইনি নিয়ম অনুযায়ী, আদালতের শুনানি উন্মুক্ত থাকার কথা, কিন্তু সম্প্রতি কিছু ক্ষেত্রে অভিবাসন অফিসাররা আদালতের কক্ষ খালি করে দিচ্ছেন। সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক ও দর্শকদের হুমকির অভিযোগও উঠেছে।
গ্রেগরি চেন বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন অনেক অভিবাসনের আইনি পথ বন্ধ করে দিয়েছে। যেমন- প্যারোল, আশ্রয় আবেদন বা পারিবারিক পুনর্মিলন। এখন এসব মাধ্যমে যারা এসেছেন, তাদেরই অপরাধী বানানো হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এই গ্রেফতার শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং করদাতাদের অর্থ এবং বিচারব্যবস্থার মর্যাদাও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সহকারী সচিব ট্রিশিয়া ম্যাকলাফলিন অভিযানের বিষয় ব্যাখ্যা করে বলেন, যাদের বৈধ দাবি থাকবে, তারা আদালতে শুনানির মাধ্যমে প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু যাদের বৈধতা প্রমাণ হবে না, তাদের দ্রুত ফেরত পাঠানো হবে।