উৎসবমুখর পরিবেশে প্রাণের বইমেলার সমাপ্তি
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:১৩ এএম, ৩১ মে ২০২৫ শনিবার

নিউইয়র্কসহ বিশ্বের নানা প্রান্তের বাংলা ভাষাভাষী সাহিত্যপ্রেমী, বইপ্রেমী, লেখক ও প্রকাশকের মিলনমেলার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে চার দিনের ৩৪তম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা। নিউইয়র্কের কুইন্সে জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টারে গত ২৩ থেকে ২৬ মে’র এই বই মেলায় ৩০টিরও বেশি প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহণ করে এবং তিন হাজারের বেশি নতুন ও পুরাতন বই প্রদর্শিত হয়। বরাবরের মতো এ বছরও বইমেলার আয়োজন করে নিউইয়র্ক মুক্তধারা ফাউন্ডেশন।
বই মেলায় লেখক আড্ডা, কবিতা পাঠ, আলোচনা সভা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাসহ নানা কর্মসূচি ছিল। এ আয়োজনে বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা লেখকরা উপস্থিত ছিলেন এবং পাঠকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
২৩ মে বইমেলার উদ্বোধন করেন দুই বাংলার জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন মার্কিন বন্ধু ফিলিস টেইলর। তার প্রয়াত স্বামী রিচার্ড টেইলর ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া ও বাল্টিমোর বন্দরে অস্ত্রবাহী জাহাজ অবরোধ করেছিলেন। এই মেলার প্রাণপুরুষ ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদ, রোকেয়া হায়দার ও বিশ্বজিৎ সাহার অক্লান্ত পরিশ্রমে শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে তা সফল হয়েছে।
প্রধান অতিথির ভাষণে ফিলিপ টেইলর বলেন, আমার স্বামী রিচার্ড টেইলর মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকার যুদ্ধজাহাজ ব্লক করার জন্যে নিজেকে নিবেদন করেছিলেন। এবং এই নিয়ে তিনি একটি ‘ব্লকেড’ নাম দিয়ে একটি গ্রন্থও রচনা করেছিলেন।
অনুষ্ঠানে আরো ছিলেন বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন (অব.) ডা. সিতারা বেগম। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান, ভাষাতাত্ত্বিক ও অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক রওনক জাহানসহ আরো অনেকে।
রেহমান সোবহান বলেন, যেখানে ফিলিস টেইলর উপস্থিত আছেন সেখানে থাকতে পারা খুবই আনন্দের। তাঁকে এবং তাঁর স্বামী রিচার্ডকে অন্তঃস্থল থেকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। নিউইয়র্কে আন্তর্জাতিক বইমেলা আয়োজন ভঙ্গুর এবং ক্ষীয়মান বাংলা সংস্কৃতিকে মজবুত করতে সাহায্য করবে।
গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক বলেন, বইমেলা জিনিসটা আমার কাছে অন্যরকমের। বইমেলার কথা শুনে আমি ছুটে আসি। আমার মার কথা খুব মনে হচ্ছে। তিনি বীরাঙ্গনাদের জন্যে অনেক কাজ করেছেন।
আয়োজকরা জানান, এ বছর ৩০টিরও বেশি স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা বইমেলায় অংশ নিচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক লেখক ও প্রকাশক নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন। প্রতি বছরের মতো এবারো দর্শনার্থীদের জন্য আছে নানা বইয়ের সমারোহ, সাহিত্যচর্চার পরিবেশ ও উৎসবের আমেজ।
ডা. ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম তার স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, অনেক ঘটনাই আমার জমা আছে। তার মধ্যে থেকে একটি আপনাদের কাছে তুলে ধরছি। রাত্রি বেলা হারিকেন দিয়ে আমরা অপারেশন করতাম। একদিন হলো যে দেখি হারিকেনে তেল নাই। ডাক্তার জাফারউল্লা বললেন- ডা. সিতারা আপনাকে তেল আনতে উদয়পুর যেতে হবে। ৪০ কিলোমিটার দূরে। সে এক অসাধরণ অভিজ্ঞতা।
একইভাবে ড. রওনক জাহান তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ৩৪ বছর ধরে এমন একটি অসাধারণ কাজ হচ্ছে। এর সঙ্গে যাঁরা যুক্ত হচ্ছেন তাদের সবার প্রতি অভিনন্দন। বাংলাদেশের বাইরে বাংলা বইয়ের অনুবাদ করে ইংরেজিতেও অনুবাদ করতে হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বইমেলার আহ্বায়ক ও ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রাক্তন প্রধান রোকেয়া হায়দার। ছিলেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদ, কো-চেয়ারপারসন ড. নজরুল ইসলাম ও সউদ চৌধুরী, উপদেষ্টা গোলাম ফারুক ভূঁইয়া ও সিনিয়র সদস্য ড. ওবায়দুল্লাহ মামুন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত সাহা প্রমুখ।
আরো উপস্থিত ছিলেন- অধ্যাপক ড. শামীম রেজা, লেখক ও সাংবাদিক বিরূপাক্ষ পাল, সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, লেখক ও সাংবাদিক মুস্তাফিজ শফিসহ।
এ বছর নিউইয়র্ক মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন ভারতীয় বাঙালি অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার। তিনি একাধারে ভাষাতাত্ত্বিক প-তি, সাহিত্যিক, নাট্যসমালোচক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক। গতবছর এই পুরস্কার পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। মুক্তধারা আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ড. আবদুন নূর। চিত্তরঞ্জন সাহা প্রকাশনা পুরস্কার পেয়েছে কবি প্রকাশনী।