শনিবার   ১৭ মে ২০২৫   জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩২   ১৯ জ্বিলকদ ১৪৪৬

রাজনৈতিক আঁচড় নিউইয়র্ক বইমেলায়

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৩৮ এএম, ১৭ মে ২০২৫ শনিবার


 
 
নিউইয়র্কে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা আগামী ২৩শে মে থেকে জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে (১৫৩-১০ জ্যামাইকা এভিনিউ, জ্যামাইকা) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এটি ৩৪তম বইমেলা। এবারের বইমেলার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ‘ব্লকেড’ খ্যাত আমেরিকান বন্ধু ফিলিস টেইলর। বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন সাহিত্য সমালোচক, দার্শনিক ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, রেহমান সোবহান, ড. রওনক জাহান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব.) সিতারা বেগম। এই বইমেলার শুভ উদ্বোধন করবেন কবি ও ঔপন্যাসিক সাদাত হোসাইন।
এছাড়াও, আমন্ত্রিত লেখকগণের মধ্যে থাকছেন ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার ড. আবদুন নূর, লেখক ও বিতার্কিক বিরূপাক্ষ পাল, কবি ও লেখক ড. আবেদীন কাদের, কবি শামস আল মমীন, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক মুস্তাফিজ শফি, লেখক ও সাংবাদিক সরকার কবিরুদ্দীন, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, অনুবাদক নাজমুন নেসা পিয়ারি, কবি জাফর আহমদ রাশেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামীম রেজা, কবি ও প্রাবন্ধিক বদরুজ্জামান আলমগীর, কবি জসিম মল্লিক, কথাসাহিত্যিক ফরহাদ হোসেন, কবি ও সাহিত্য সম্পাদক ফারুক আহমেদ, কবি মঈনউদ্দিন মুনশী, লেখক ও সাংবাদিক অভীক সারোয়ার রহমান, লেখক ও প্রকাশক হুমায়ূন কবীর ঢালী, বিনোদন সাংবাদিক তানভীর তারেক, শিশুসাহিত্যিক আশিক মুস্তাফা এবং কথাসাহিত্যিক পারমিতা হিম প্রমুখ।
আমন্ত্রিত প্রকাশকদের মধ্যে থাকছেন মনিরুল হক (অনন্যা), আলমগীর সিকদার লোটন (আকাশ প্রকাশন), রেদওয়ানুর রহমান জুয়েল (নালন্দা), জসিম উদ্দিন (কথাপ্রকাশ), সজল আহমেদ (কবি প্রকাশনী), দীপঙ্কর দাশ (বাতিঘর) এবং মাহবুবুল হাসান ফয়সল (ঋদ্ধি প্রকাশন)। অন্যান্য অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা সংস্থাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সময় প্রকাশন, আহমদ পাবলিশিং হাউজ, অন্বয় প্রকাশ, প্রথমা প্রকাশন, অঙ্কুর প্রকাশনী, স্টুডেন্ট ওয়েজ, কাকলী প্রকাশনী, কালের চিঠি, শব্দঘর, ঘুংঘুর, পঞ্চায়েত, ইসলাম ইন্টারন্যাশনাল পাবলিকেশন্স ও মুক্তধারা নিউ ইয়র্ক। এই সকল প্রকাশনীর স্টলে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, অনুবাদ, ভ্রমণ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের বই পাওয়া যাবে।
বইমেলাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও থাকছে লেখক-পাঠক মুখোমুখি আলোচনা, নতুন বই নিয়ে আলোচনা, স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর, কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও বিভিন্ন মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা। আমন্ত্রিত শিল্পীদের মধ্যে থাকছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, ফাহমিদা নবী, শাহ মাহবুব, কৃষ্ণা তিথি, স্বপ্নীল সজীব, মোহাম্মদ শাহীন হোসেন, কার্তিক চন্দ্র মন্ডল, উচ্ছল ব্যানার্জীসহ আরও অনেক স্বনামধন্য শিল্পী।
এছাড়াও থাকছে একুশে চেতনা পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র-এর সৌজন্যে বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘অমর একুশ’। এই প্রদর্শনীর কিউরেটরের দায়িত্বে রয়েছেন ড. ওবায়েদুল্লাহ মামুন।
এদিকে মুক্তধারার বইমেলা থেকে বেরিয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. নুরুন্নবী আয়োজন করছেন ‘বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক বইমেলা’। আগামী ২৪-২৫ মে উডহ্যাভেনস্থ জয়া হলে অনুষ্ঠিত হবে। এই মেলায় অতিথি হিসেবে থাকছেন প্রখ্যাত ছড়াকার লুৎফর রহমান লিটন। উদ্বোধন করবেন সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ ও বেলাল বেগ। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের এই পদ থেকে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তার নেতৃত্বেই আগামী ২৪ ও ২৫ মে ২০২৫ নিউইয়র্কে এই মেলার আয়োজন চলছে। তিনি এই মেলার আহবায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। এ ব্যাপারে একুশে পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন্নবী’র দৃষ্টি আর্কষণ করলে তিনি বলেছেন, বইমেলা মুক্তিদ্ধের চেতনা থেকে সরে গেছে। জাতির পিতাকে অবমাননা, ৩২ নম্বর পুড়িয়ে দিয়ে নগ্ন উল্লাস, সাম্প্রদায়িক আক্রমণ, খুন, ধর্ষণ, মব চক্রের মাধ্যমে পরিকল্পিত গণহত্যা ইত্যাদিকে সমর্থন করে আসছিলেন ‘মুক্তধারা ফাউ-েশনে’র একটি চক্র! একাত্তরের পরাজিত শক্তির ছত্রছায়ায় এই ফাউ-েশনের একটি পক্ষের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তারা যে কোনোভাবেই এবারের বইমেলা দখলের জন্য ছিল বিশেষভাবে তৎপর। শেষ পর্যন্ত তাদের হাতেই বন্দি হতে চলেছে ৩৪ বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী বইমেলা। মুক্তধারা আয়োজিত ২০২৫ এর ৩৪তম বইমেলায় ৪০ বছর বয়সি একজন তরুণ লেখক সাদাত হোসাইনকে আনা হচ্ছে উদ্বোধক হিসেবে। সাদাত হোসাইন সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী লেখকদের প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকায় চিহ্নিত। তার কর্মকান্ডের বিভিন্ন ফুটেজ দেখেছি। তিনি জুলাই সন্ত্রাসের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন। রাজপথে মাইক হাতে নেমে দখলদার ইউনুসের গভীর ষড়যন্ত্রকে সমর্থন করেছিলেন এই তরুণ লেখক। আগস্ট থেকে এই অবৈধ সরকারের দোসর হিসেবে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। এই বইমেলার ধারাবাহিক ঐতিহ্যের সাথে চরম বরখেলাপ ঘটিয়ে একজন অখ্যাত সাম্প্রদায়িক তরুণের হাতে উদ্বোধনের দায়িত্ব দেয়াকেও ‘ম্যাটিকিউলিয়াস ডিজাইনে’র অংশ বলছেন কেউ কেউ। আমি বইমেলার চেয়ারম্যান। অথচ আমার সাথে কোন আলোচনা না করেই বইমেলার উদ্বোধক নির্বাচন করেছেন বিশ্বজিৎ। অথচ আমি লুৎফর রহমান রিটনের নাম একই সাথে রাখার প্রস্তাব করেছিলাম। তারা তা শোনেনি।
রাজনৈতিক কারনে তা ভেংগে ফেললেন? জবাবে ড. নবী বলেন, খারাপ লাগছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে থাকতে পারি না। ইউনূসের দোসরদের সাথে বসে বইমেলা করতে পারি না। তাই পদত্যাগ করেছি। ৭ মে নিউইয়র্কের সাংস্কৃতিক মোর্চা 'একাত্তরের প্রহরী'র একটি সভায় 'বঙ্গবন্ধু বইমেলা' আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।