রোববার   ১৮ মে ২০২৫   জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩২   ২০ জ্বিলকদ ১৪৪৬

মন্তব্য প্রতিবেদন

বন্ধ করুন আষাঢ়ি নির্বাচনের গল্প

শওকত হোসেন

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৩২ এএম, ১৭ মে ২০২৫ শনিবার



 
 
হাসিনার হাতে কতজন শহীদ হয়েছেন আর  কতজনইবা  চোখ ও অংগ হারিয়েছেন, তাদের পুরো একটা তালিকা এ সরকার এবং বিপ্লবের তথাকথিত দাবিদাররা গেল নয় মাসেও তৈরী করতে পারে নাই।  কারণ,  তারা এতদিন চাঁদাবাজী ও নিজেদের আখের গুছিয়ে ড: ইউনুসের  দ্বারা আদিষ্ট হইয়া রাজসিক কায়দায় এন পি সি নামক বহুল বিতর্কিত একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে  নির্বাচনের আগেই ক্ষমতার মসনদ নিশ্চিত করার পাঁয়তারা করছে।  আরও পাঁচ বছর,  আরও পাঁচ বছর জিকির তুলছে। এদের মুখে হাসিনার বিচার ভূতের মুখে রাম রামের মতোই শোনায়। অভিযুক্ত হাসিনা ও তার সকল রাগব বোয়ালেরা তো পালিয়েই গেছে। চুনোপুঁটিদের বিচারই শুরুই করতে পারে নাই। বিচারের নামে অযথা সময় নষ্ট করা হচ্ছে।  এ সরকার এখন  পর্যন্ত  ৮০০ শিক্ষার্থী-জনতা হত্যার তালিকা প্রকাশ করেছে। অথচ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনে ১৪০০ জনকে হত্যার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এ থেকেই বুঝা যায়, জুলাই গনহত্যা নিয়ে ইউনুস সরকারের ও তথাকথিত বিপ্লবীদের উদাসীনতা। অথচ জুলাই বিপ্লবে শহীদদের ও আহতদের পুরো তালিকা করে বিচার কাজ শুরু করলে আর সংস্কার নাটক করতে হতো না।  খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার করতে পারলেই, আগামীতে দেশে আর কোন ফ্যাসিস্ট শক্তির জন্ম হতো না। তথাকথিত সংস্কারের চেয়ে হাসিনা ও তার দোসরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলেই দেশে গনতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারতো। ভুলে গেলে চলবে না,  হাসিনাার কারচুপির ইলেকশনের চেয়ে ড:  ইউনূসের ভোট ছাড়া দীর্ঘদিন গদি আঁকড়ে থাকার অবৈধ ইেেচ্ছ জাতির গনতন্ত্রের ইতিহাসে আরও একটি কলংকজনক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।  আর খারাপ গনতন্ত্রের চেয়ে গনতন্ত্রহীনতা নিশ্চয় দেশের জন্য কোনমতেই ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না। দেশের সামগ্রিক অথনৈতিক অবস্থা কি তা বিশ্ব ব্যাংক পরিস্কারভাবে বলে দিয়েছে। আর দেশের ডুবন্ত পুঁজিবাজারের দিকে একটু তাকালেই তা বুঝতে পারবে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীরাও। সুতরাং জাতির সাথে আর ভেলকিবাজি না দেখিয়ে চাপাবাজী বন্ধ কইরা,  জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা কইরা জাতির ভবিষ্যতের অনিশ্চিয়তা দূর করা এখন সময়ের দাবি।  আর ডিসেম্বর থেকে জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের যে কথা বলা হচ্ছে তাও জাতির সাথে আরও একটি প্রতারনারই সামিল। কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসে ডিসেম্বরের পর কিংবা জানুয়ারী মাসের পর আর  কোন ইলেকশন অনুষ্ঠিত করা সম্ভব নয়। কারণ এবার ফেব্রুয়ারী মাস থেকে শুরু হয়ে যাবে মাহে রমজান, রোজার পরই রোজার ঈদ, তারপরই আবার আসবে কুরবানির ঈদ, তার পর শুরু হবে এস এস সি এবং এইচ এস সি পরীক্ষা। আর জুন জুলাই তো বর্ষাকালই।  এ সময়ের মধ্যে কোন মতেই কি ইতিহাসের সেরা নির্বাচন অনুষ্ঠান করা কি আদৌ সম্ভব? সুতরাং আষাঢ় মাসে আষাঢ়ী নির্বাচনের আষাঢ়ী গল্পটি বন্ধ করেন দয়া করে। এদেশের মানুষ বোকা না। হাসিনাও এ দেশের মানুষকে বোকা মনে করেছিল। শেখ হাসিনার সুবিধাভোগীরাও শেষ মুহূর্তেও মুখে ফেনা তুলে জিকির উঠিয়ে  স্লোগান দিয়েছিল 'শেখ হাসিনার সরকার, বার বার দরকার।' তার করুন পরিনতি কি হয়েছিল তা সারা বিশ্ব দেখেছে। সুতরাং যদি গদিতে আরও থাকতে মন চায়, আর জনগনও যদি আপনাদেরকেই চায়, তাহলে আর সমস্যাটা কোথায়?  একটা ইলেকশন দিয়ে,  কোন প্রকার ছল চাতুরীর আশ্রয় না নিয়ে জনগণের বৈধ ম্যানডেট নিয়ে মনের সাধ মেটান। অবৈধভাবে ও অগণতান্ত্রিকভাবে দীর্ঘদিন গদিতে আসীন কোন সরকারই দেশের জন্য কোনমতেই ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না।  আর দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনীকে দিয়ে আর কতদিনইবা পুলিশের কাজ করাবেন।  এটা ওনাদের কাজ না। ওনাদের কাজ দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। ওনারা যেন শিগগিরই তাদের আসল জায়গায় ফিরে যেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। আর মনে করাইয়া দিলাম,  সোসাল মিডিয়া আপনাদের পক্ষে  পাঁচ বছরের জন্য যে  জিকির তুলবার অপচেষ্টা হয়েছিল, তা কিন্তু অংকুরেই শেষ অই গেছে। মানে অইলো গিয়া এ জিকিরও  হালে পানি পায় নাই। আপনার নিজস্ব লোকজনও অনেক চেষ্টা করছিল পালে হাওয়া দিতে, তাদের কেবলই নিজস্ব কোটারি ইন্টারেস্টে। সুতরাং সাধু সাবধান।
শওকত হোসেন: সিনিয়র সাংবাদিক