শুক্রবার   ১৬ মে ২০২৫   জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩২   ১৮ জ্বিলকদ ১৪৪৬

ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির কাছাকাছি যুক্তরাষ্ট্র : ট্রাম্প

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:০৫ এএম, ১৬ মে ২০২৫ শুক্রবার

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের পারমাণবিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি চুক্তির কাছাকাছি রয়েছে ওয়াশিংটন, যদিও এখনো কূটনৈতিক জটিলতা রয়ে গেছে।

ট্রাম্প বৃহস্পতিবার তার উপসাগরীয় সফরের দ্বিতীয় ধাপে কাতারে বলেন, ‘আমরা ইরানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য খুবই গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করছি।’ এরপর তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা হন।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ইরানে কোনো পারমাণবিক ধোঁয়া তৈরি করতে যাচ্ছি না।
আমার মনে হচ্ছে, আমরা হয়তো এমন একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছি, যা করতে আমাদের অন্য কোনো পদক্ষেপের প্রয়োজন হবে না।’

ইরানের নতুন কিছু মন্তব্যের ভিত্তিতে এই আশা করছেন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা হয়তো আজ ইরান সম্পর্কে খবর পড়েছেন। তারা শর্তগুলো কিছুটা মেনে নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্দিষ্টভাবে কোন মন্তব্যের কথা বলছেন, তা উল্লেখ না করলেও ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টা আলী শামখানি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি গণমাধ্যমে বলেছেন, তেহরান তার পারমাণবিক কর্মসূচিতে বিস্তৃত সীমাবদ্ধতা মেনে নিতে প্রস্তুত।

ট্রাম্প এদিন বলেন, ‘আমি চাই তারা (ইরান) সফল হোক, আমি চাই তারা একটি মহান দেশ হয়ে উঠুক। কিন্তু তাদের পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারবে না; এটিই একমাত্র শর্ত, এটি খুবই সহজ।’

ট্রাম্পের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার গতি বৃদ্ধি পেয়েছে, সর্বশেষ আলোচনাটি গত রবিবার ওমানে অনুষ্ঠিত হয়। এক মার্কিন কর্মকর্তা এক্সিওসকে নিশ্চিত করেছেন, চতুর্থ দফা আলোচনায় তেহরানকে একটি নতুন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
দুই পক্ষই কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে বললেও গুরুতর মতপার্থক্য এখনো রয়ে গেছে।

এদিকে ট্রাম্প মঙ্গলবার তেহরানকে মধ্যপ্রাচ্যের ‘সবচেয়ে বিধ্বংসী শক্তি’ বলেও আখ্যা দেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ট্রাম্পের মন্তব্যের কঠোর জবাব দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রই এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। ‘ট্রাম্প মনে করেন তিনি আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও হুমকি প্রয়োগ করে মানবাধিকার নিয়ে কথা বলতে পারবেন। সব অপরাধ ও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার জন্য তারাই (যুক্তরাষ্ট্র) দায়ী।
তিনি ইরানের ভেতরে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চান।’

তবে তেহরান থেকে চুক্তি সম্ভব হতে পারে বলে কিছু সংকেতও পাওয়া যাচ্ছে। এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শামখানি ইঙ্গিত দেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে রাজি। তার মতে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করার প্রতিশ্রুতি দিতে, উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ কমাতে ও আন্তর্জাতিক পরিদর্শন মেনে নিতে প্রস্তুত।

প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলো রয়ে গেছে
তবু বড় বাধা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চায়, ইরান সম্পূর্ণরূপে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করুক, যা ইরানি কর্মকর্তারা ‘লাল রেখা’ বলে উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইরান সমৃদ্ধকরণ স্তর কমাতে ও মজুদ হ্রাস করতে প্রস্তুত, তবে এটি ধীরে ধীরে এবং ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির সীমার নিচে নয়। ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৮ সালে সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছিল।

আলোচকরা ইরানের অতিরিক্ত ইউরেনিয়াম কোথায় স্থানান্তর করা হবে তা নিয়েও মতবিরোধে আছেন, যা আলোচনাকে আরো জটিল করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে কাতার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এতে পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার আলোচনায় গতি আসছে।

এর আগে ট্রাম্প তার আঞ্চলিক সফরের অংশ হিসেবে সৌদি আরব সফর করেন, যেখানে বুধবার তিনি সৌদি ও সিরীয় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর তিনি কাতার যান। তিনি বৃহস্পতিবার কাতারের আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে মোতায়েন মার্কিন সেনাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং পরে আবুধাবির উদ্দেশে রওনা হন।