ভেংগে গেল নিউইয়র্ক বইমেলা
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০১:৩৬ এএম, ১০ মে ২০২৫ শনিবার

- বিশ্বজিৎকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক মনে করিনা: ড.নবী
- বাঙ্গালীরাইতো একে অপরের ক্ষতি করছে: রোকেয়া হায়দার
- আমাকে রাজাকারদের দোসর বলা হচ্ছে: বিশ্বজিৎ
নিউইয়র্কের জনপ্রিয় বইমেলা ভেঙ্গে গেলো। ড. ইউনূসের সরকারের পক্ষ-বিপক্ষ ইস্যু নিয়ে ব্যাপক কাদা ছোঁড়াছুড়ির এক পর্যায়ে দীর্ঘ ৩৪ বছরের বইমেলার মৃত্যু ঘটেছে। ইউনূস বিরোধী গ্রুপ পাল্টা বইমেলার আয়োজন করবে। নিউইয়র্কে তিন দশকের বইমেলার ধারাবাহিকতার দাবি জানিয়ে ড.জিয়াউদ্দীন আহমেদ, রোকেয়া হায়দার, হাসান ফেরদৌস ও বিশ্বজিৎ সাহার উদ্যোগে আগামী ২৩ থেকে ২৬ মে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে। বইমেলার উদ্যোক্তা সংগঠন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে একটি পক্ষ ‘রাজাকার’ বলে আখ্যায়িত করেছে। এবারের আয়োজনের চেয়ারম্যান ছিলেন ড. নুরুন নবী। গত বুধবার মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের এই পদ থেকে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তার নেতৃত্বেই আগামী ২৪ ও ২৫ মে ২০২৫ নিউইয়র্কে ‘বঙ্গবন্ধু বইমেলা’ অনুষ্ঠিত করার নতুন আয়োজন চলছে। তিনি এই মেলার আহবায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। একই সময়ে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হবে এই পাল্টাপাল্টি বইমেলা।
এ ব্যাপারে একুশে পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন্নবী’র দৃষ্টি আর্কষণ করলে তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার ‘আজকাল’কে বলেন, বইমেলা মুক্তিদ্ধের চেতনা থেকে সরে গেছে। জাতির পিতাকে অবমাননা, ৩২ নম্বর পুড়িয়ে দিয়ে নগ্ন উল্লাস, সাম্প্রদায়িক আক্রমণ, খুন, ধর্ষণ, মব চক্রের মাধ্যমে পরিকল্পিতগণহত্যা ইত্যাদিকে সমর্থন করে আসছিলেন ‘মুক্তধারা ফাউ-েশনে’র একটি চক্র! একাত্তরের পরাজিত শক্তির ছত্রছায়ায় এই ফাউ-েশনের একটি পক্ষের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তারা যে কোনোভাবেই এবারের বইমেলা দখলের জন্য ছিল বিশেষভাবে তৎপর। শেষ পর্যন্ত তাদের হাতেই বন্দি হতে চলেছে ৩৪ বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী বইমেলা। মুক্তধারা আয়োজিত ২০২৫ এর ৩৪তম বইমেলায় ৪০ বছর বয়সি একজন তরুণ লেখক সাদাত হোসাইনকে আনা হচ্ছে উদ্বোধক হিসেবে। সাদাত হোসাইন সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী লেখকদের প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকায় চিহ্নিত। তার কর্মকান্ডের বিভিন্ন ফুটেজ দেখেছি। তিনি জুলাই সন্ত্রাসের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন। রাজপথে মাইক হাতে নেমে দখলদার ইউনুসের গভীর ষড়যন্ত্রকে সমর্থন করেছিলেন এই তরুণ লেখক। আগস্ট থেকে এই অবৈধ সরকারের দোসর হিসেবে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। এই বইমেলার ধারাবাহিক ঐতিহ্যের সাথে চরম বরখেলাপ ঘটিয়ে একজন অখ্যাত সাম্প্রদায়িক তরুণের হাতে উদ্বোধনের দায়িত্ব দেয়াকেও ‘ম্যাটিকিউলিয়াস ডিজাইনে’র অংশ বলছেন কেউ কেউ। আমি বইমেলার চেয়ারম্যান। অথচ আমার সাথে কোন আলোচনা না করেই বইমেলার উদ্বোধক নির্বাচন করেছেন বিশ্বজিৎ। অথচ আমি লুৎফর রহমান রিটনের নাম একই সাথে রাখার প্রস্তাব করেছিলাম। তারা তা শোনেনি।
বিশ্বজিৎ সাহাকে কি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী হিসেবে মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. নবী বলেন, ড. ইউনূস মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করছে। বইমেলার উদ্বোধক ইউনূসের সর্মথক। বইমেলাকে ইউনূসের সর্মথকরা ঘিরে ফেলেছে। আমি বিশ্বজিৎ সাহাকে আর মুক্তিুদ্ধের পক্ষের লোক বলে মনে করি না।
আপনাদের হাতে ৩৪ বছর ধরে এই মেলা হয়ে আসছে। রাজনৈতিক কারনে তা ভেংগে ফেললেন? জবাবে ড. নবী বলেন, খারাপ লাগছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে থাকতে পারি না। ইউনূসের দোসরদের সাথে বসে বইমেলা করতে পারি না। তাই পদত্যাগ করেছি। বুধবার ৭ মে নিউইয়র্কের সাংস্কৃতিক মোর্চা 'একাত্তরের প্রহরী'র একটি সভায় 'বঙ্গবন্ধু বইমেলা' আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।। বৃহস্পতিবার কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মি ফকির ইলিয়াস প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সভায় নিউইয়র্কের লেখক-সাংবাদিক- আবৃত্তিশিল্পী-মুক্তিযোদ্ধা-সাংস্কৃতিক কর্মী-নাট্যজন-পেশাজীবি-সংগঠকসহ একটি বড় সংখ্যক অভিবাসীদের সাথে মত বিনিময়ে মিলিত হন ডঃ নুরুন নবী। ড.নবী বলেছেন, মুক্তধারা বইমেলার ঐক্য ধরে রাখার জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আমাদের দাবি ছিল একটাই, বইমেলা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমুন্নত রেখে এগিয়ে যাবে। এ সভাতেই 'বঙ্গবন্ধু বইমেলা' আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।
৩৪তম বইমেলার আহবায়ক প্রখ্যাত সাংবাদিক রোকেয়া হায়দার। ‘বইমেলা ভেংগে যাচ্ছে। ড. নবী পদত্যাগ করেছেন।’ এ ব্যপারে প্রতিক্রিয়া কি জানতে চাওয়া হয় রোকেয়া হায়দারের কাছে। তিনি আজকালকে বলেন, সকালে উঠেই জানলাম নবী ভাই পদত্যাগ করেছেন। তার সাথে অনেক বিষয়ে আমাদের দ্বিমত হচ্ছিল। বইমেলা ভেংগে দিবেন ভাবিনি। দুঃখজনক। আর বাঙ্গালীরাইতো একে অপরের ক্ষতি করছে। ফোবানাওতো ৪ ভাগে বিভক্ত। তিনি আরেকটি বইমেলা করতে চাইলে করতেই পারেন। আমরা আমাদেরটা করবো। তিনি একজন বর্ষিয়ান মানুষ। দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি নবী ভাই টেনে এনেছেন। আমরাতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে নই। মুক্তিযুদ্ধকে আমরা বুকে ধারন করি। ডা. জিয়া ভাইয়ের বাবাকে পাকিস্তানীরা হত্যা করেছে। হাসান ফেরদৌস মুক্তিযুদ্ধের ওপর একাধিক বই লিখেছেন। সউদ চৌধুরী সারাটা জীবন ৭১’র চেতনা লালন করেছেন। নবী ভাই কাদের উপর অভিমান করলেন। আমি বুঝি না।
উল্লেখ্য ড.নবীর চেয়ারম্যানের মেয়াদ ছিল ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ঐক্য ও সমঝোতায় তা বইমেলা ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সভায় নির্বাচিত হয়েছেন (২০২৫-২০২৬) ডা. জিয়া উদ্দীন আহমেদ।জ্বনাব নবী পদত্যাগ করায় ডা. জিয়া উদ্দীন আহমেদ মেলার আগেই দায়িত্ব গ্রহন করেছেন।
বইমেলার কারিগর, মূল উদ্যোক্তা এবং মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব বিশ্বজিত সাহা। বৃহস্পতিবার তার দৃষ্টি আর্কষন করলে আজকালকে বলেন, ডা. জিয়া উদ্দীন ও রোকেয়া হায়দারের নেতৃত্বেই বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। ‘আপনি ড. ইউনূসের দোসর ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধীদের সহযোগী বলে’ বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এতে আপনার প্রতিক্রিয়া? জবাবে বিশ্বজিৎ সাহা আজকালকে বলেন, গেল মাসে রেমিট্যান্স ফেয়ার চলাকালে অনেকে আমাকে হাসিনার দোসর বলে অভিহিত করলো। আজ আওয়ামী লীগের একজন বললো, আমি রাজাকার ও ইউনূসের দোসর। আমি আসলে বাংলাদেশকে ধারন করি। কারো দোসর নই। আমার কাজই প্রমান করবে আমি কি।