নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ও বাঙালির জয়গান
আজকাল রিপোর্ট -
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৪:১৩ এএম, ৩ মে ২০২৫ শনিবার

নিউইয়র্কের রাজধানী আলবেনিতে বাংলাদেশ ও বাঙালির জয়গান নতুন মাত্রায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। উদযাপিত হলো বাংলাদেশ ডে ও বাংলা নববর্ষ । ক্যাপিটাল হিলে নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর হাউজে বাংলা নববর্ষের স্বীকৃতিস্বরূপ রেজুলেশন গ্রহণ করা হলো ২৮ এপ্রিল, ২০২৫। বাংলা নববর্ষ উদযাপনে নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট এদিন উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল, বাংলা গান ও নাচের সঙ্গে সিনেটরের নাচ ও গানের ভঙ্গিমা সত্যিই বাঙালি সংস্কৃতির জন্য ছিল অভিনব। এর আগে বিদেশিদের মধ্যে এ ধরনের মুখরিত হয়ে ওঠার দৃশ্য দেখা যায়নি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সিনেটর সেপুলভেদা সকলকে স্বাগত জানান। দুই শতাধিক বাঙালি ও আমেরিকানদের অংশগ্রহণে মিলন মেলায় পরিণত হয় বাংলা নববর্ষ উদযাপন। সিনেটর সেপুলভেদা তার বক্তব্যে নিউইয়র্ক প্রবাসী বাঙালিদের অবদান তুলে ধরে বাংলা নববর্ষকে আন্তর্জাতিক পরিম-লের অন্যতম উৎসব হিসেবে চিহ্নিত করেন। সিনেটর ফার্নান্দেজ এবং অন্যান্য সিনেটরবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বাঙালিদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন এনআরবি ওয়ার্ল্ডওয়াইডের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি বিশ্বজিত সাহা, মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ড. নজরুল ইসলাম এবং শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়। সকলেই বিশ্বায়নের যুগে বাংলা সংস্কৃতির জয়গান করেন এবং সিনেটরদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে কথা বলেন। বিশ্ববাঙালির কাছে এই উদযাপন স্মৃতিচিহ্ন হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন রথীন্দ্রনাথ রায়।
আলবেনির ক্যাপিটল হিলে এদিন বাংলাদেশ ডে উদযাপিত হয় ব্রংকস বাংলাদেশি কমিউনিটির উদ্যোগে। ব্রংকস থেকে ২টি বাসে করে শতাধিক বাংলাদেশি নিউইয়র্ক স্টেটের রাজধানী আলবেনিতে যায়। এতে নেতৃত্ব দেন আব্দুস শহীদ, শেখ মামুন,মামুন ইসলাম, সামাদ মিয়া জাকারিয়া, আব্দুল হাসিব হাসনু, আব্দুর রহিম বাদশা, সোলায়মান আলী, শামীম মিয়া, খবির উদ্দীন ও শেখ শফিক । অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশবিদ ড. নজরুল ইসলাম ও লুৎফুন নাহার লতা ।
উক্ত অনুষ্ঠানে সিনেটর ফার্নান্দেজের পৃষ্ঠপোষকতায় মধ্যাহ্ন ভোজ শেষে শুরু হয় সমাবেশ কক্ষ(এসেমব্লি চেম্বার)-এর পর্ব। সেখানে বিশ্বজিত সাহা, ড. নজরুল ইসলাম, রথীন্দ্রনাথ রায়, সংগীত পরিচালক মহিতোষ তালুকদার তাপস এবং শিল্পী লুতফুন নাহার লতার উপস্থিতিতে রেজুলেশনটি পাস করা হয়।
বিকেলে সিনেট কক্ষে পাসকৃত রেজুলেশনটি পাঠ এবং সেপুলভেদাসহ সিনেটরদের মন্তব্য ও আলোচনা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা আনন্দঘন পরিবেশ সৃজন করে। বিশেষত টাইমস স্কয়ারে নববর্ষ উদযাপন কমিটির শিল্পীবৃন্দ মহিতোষ তাপসের নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলেন। একক ফোক সংগীত পরিবেশনা করেন শাহীন হোসেন। নৃত্য পরিবেশনা করেন ভাষা সাহা। এই প্রথম বাংলা নববর্ষ আন্তর্জাতিক বিশ্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন করা হলো।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস (২৬ মার্চ) ও পয়লা বৈশাখকে (বাংলা নববর্ষ) আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট। এই ঐতিহাসিক স্বীকৃতিকে অভাবনীয় অর্জন হিসেবে দেখছেন প্রবাসীরা! তারা মনে করেন, এটি শুধু নিউইয়র্কে নয়, বরং বিশ্বব্যাপী বাঙালিদের জন্য এক গর্বের মুহূর্ত।
এনআরবি ওয়ার্ল্ডওয়াইডের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘১৪ এপ্রিলকে নিউইয়র্ক গভর্নরের পক্ষ থেকে বাংলা নববর্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এটি সারা বিশ্বের প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঐতিহাসিক অর্জন। আজ গভর্নরের অফিসে আমরা বাংলা জাগরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সাক্ষী হলাম।’
বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম বলেন, ‘বিশ্বের রাজধানী বলা হয় নিউইয়র্ককে, আর নিউইয়র্ক স্টেটের রাজধানী হলো অলবেনি। আমরা আজ এখানে বাংলাদেশি ডে উদ্যাপন করছি, এটা আমাদের জন্য সম্মানের বিষয়।’
একুশে পদকপ্রাপ্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্রনাথ বলেন, ‘পয়লা বৈশাখ কোনো ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি আমাদের জাতিসত্তার প্রকাশ। নিউইয়র্ক স্টেট কর্তৃপক্ষ আমাদের এই সংস্কৃতিকে সম্মান জানিয়ে যে স্বীকৃতি দিয়েছে, তার জন্য আমি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে দুটি দিবসকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়, যা নিউইয়র্কের প্রবাসী বাঙালি সমাজের সাংস্কৃতিক অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করল।