ট্রাভেল ব্যবসায় খরা দেশে যেতে ভয়
আবু সাইম
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৪:০২ এএম, ৩ মে ২০২৫ শনিবার
ট্রাম্প প্রশাসনের ইমিগ্রেশন বিষয়ক সৃষ্ট পরিস্থিতে বেশ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নিউইয়র্কের বাংলাদেশিদের ট্রাভেল ব্যবসায়। সামার মৌসুমেই ২৪ ঘন্টাই কাজ চলে ট্রাভেল প্রতিষ্ঠানে। তবে এবার ঠিক উল্টো। অন্যান্য বারের চেয়ে এয়ার টিকিট বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে। ইমিগ্রেশন বিষয়ক সৃষ্ট আতঙ্কে অনেকেই তাদের পূর্ব নির্ধারিত বা পূর্ব পরিকল্পিত ভ্রমণ বাতিল করছেন। এমনকি নতুন করেও পরিকল্পনা নিচ্ছে না। বিশেষ করে আমেরিকান-বাংলাদেশি গ্রিনকার্ড ধারীরা ভ্রমণ এড়িয়ে চলছেন বলে জানাচ্ছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের পুরো বছরের ৫০ শতাংশ ব্যবসায় হয় মে-আগস্টের ট্রাভেল মৌসুমে। এজন্য আগে থেকেই টিকিটি বুকিং ও কেটে রাখেন যাত্রীরা। তবে এবার বুকিংও কম, বিক্রিও কম। গত বছরও কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে মৌসুমের শেষ দিকে ব্যবসায় ধস নামে। এবার মৌমুসের শুরুতেই সে অবস্থা দেখা দিয়েছে। এ মন অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে পড়বে।
সংশ্লিস্টরা বলছেন, বাংলাদেশের বেশকিছু আইনজীবি ও প্যারালিগ্যাল নিয়মিত তাদের ফেসবুকে ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত তত্য দিয়ে থাকেন। তাতে দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন বা যা যেতে উৎসাহিত করেন। বাংলাভাষা-ভাষীর হওয়ায় কমিউনিটির লোকজন তাদের কথায় ভরসা করেন। ফলে তারা নিরুপায় না হলে ভ্রমণ করছেন না।
ডিজিটাল এস্টোরিয়া ট্রাভেলসের সিইও নজরুল ইসলাম আজকালকে বলেন, ভ্রমণের বিষয়ে কমিউনিটিতে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার হচ্ছে। অনেকেই বলছেন গ্রিনকার্ড নিয়ে বাংলাদেশে গেলে আসতে সমস্যা হবে, ইউএসএতে ঢুকতে দেবে না। এসাইলামের গ্রিন কার্ড নিয়ে গেলে আর আসতে দেবে না। এসব কারণে অনেকেই ভ্রমণে উৎসাহ পাচ্ছেন না। অনেকেই আগের টিকিট বাতিল করছেন।
তিনি বলেন, আমেরকিার অর্থনৈতিক কারণেও অনেকে ভ্রমণ করছেন না। কারণ বাংলাদেশিদের অনেকেই এখানে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু ট্রাম্পের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে সেখানেও মন্দা দেখা দিয়েছে। এতে অনেক বাংলাদেশিদের লোকসান দিয়েছেন ফলে তারাও দেশে যাচ্ছে না, বা ভ্রমণ বাদ দিচ্ছেন। কিন্তু আমাদের যেসব গ্রাহক এখন ভ্রমণ করছেন তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় ইমিগ্রেশনে কোন প্রশ্নই করা হচ্ছে না। মাঝ থেকে আমাদের ব্যবসার অবস্থা খারাপ। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বিজনেস হারিয়েছে বাংলাদেশি ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা।
আমেরকিান ট্রাভেল এজেন্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আটাব)-এর সভাপতি ও কর্ণফুলী ট্রাভেলসের সিইও সেলিম হারুন আজকালকে বলেন, কিছু কিছু লোক পেপার পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় ভ্রমণ বিষয়ে মানুষকে অহেতুক ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। গ্রিনকার্ড হোল্ডারদের ভ্রমণ জটিলতার কথা বলছে। কিন্তু নিয়মিত আমাদের যাত্রী আসছে, যাচ্ছে কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে হয়তো কেউ দেশে গিয়ে দীর্ঘ সময় ছিল তাদের প্রশ্ন করা হচ্ছে এতোদিন কেন ছিল, সেসংখ্যাটাও নগন্য। এটা কিন্তু রেগুলার বিষয়, নতুন কিছু নয়। তবে এসব প্রচারণায় ট্রাভেল ইন্ডাস্ট্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এখন আমাদের সামার সিজন। বছরের ৫০ থেকে ৮০ ভাগ ব্যবসাই এসময় হয়। অনেকেউ পরিবার নিয়ে দেশে যায়। পরিবারে হতো কারো আমেরিকান পার্সপোর্ট আছে, আবার কারো হয়তো গ্রিন কার্ড আছে। এখন গ্রিনকার্ড বিষয়ক অতিরঞ্জিত প্রচারণায় পুরো পরিবারই ভ্রমণ বাতিল করছেন।
জ্যাকসন হাইটসের বাংলা ট্রাভেলসের স্বত্তাধিকারী বেলায়েত হোসেন বলেন, গ্রিন কার্ড নিয়ে গেলে সমস্যা হবে এমন প্রচারণা কেন হচ্ছে, তা যারা প্রচারণা করছেন তারাই জানেন। কোথায় লেখা আছে, গ্রিন কার্ড নিয়ে ভ্রমণ করলে সমস্যা হবে, ইমিগ্রেশনে প্রশ্ন করা হবে, এদেশে ঢুকতে দেবে না। এটা অপ-প্রচার। তবে এমন নেতিবাচক প্রচারণার কান দেয়া উচিত নয়। তবে এ কারণে তার ব্যবসায় তেমন কোন প্রভাব পড়ছে না বলেই জানান তিনি।