বাড়িভাঙ্গা প্রেম ও ব্যাডমিন্টন
মনোয়ারুল ইসলাম, ঢাকা থেকে
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ১২:৩২ এএম, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ শনিবার

সন্ধ্যে ৬টা। ৪ ফেব্রুয়ারি। প্রেসক্লাবে বসে চলছিল আড্ডা। সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন, মাহবুবুল আলম, কবি হাফিজ, শাহানাজ পারভীন, শাহানাজ পলি,আব্দুল হান্নান ও মনজুরুল ইসলাম সহ পড়টা ও কাবাব দিয়ে নৈশ ভোজ শেষে চা’র জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এমন সময় মন্জু বললেন, রাস্তাঘাটে সমস্যা হবে। বঙ্গবন্ধু ভবন ভাঙ্গতে লোকজন ৩২ নম্বর যাচ্ছে। রাস্তাঘাটের ভবিষ্যৎ ট্রাফিকের কথাভেবে আড্ডা সাঙ্গ করে বের হয়ে পড়লাম। বাসা ধানমন্ডির ৬ নম্বর রোডে। ফিরে সাপ্তাহিক আজকালের কাজ শুরু। রাত ৯টা। হঠাৎ মনে হলো ৩২ নম্বরতো পাশেই। ছোট ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম কত সময় লাগবে হেঁটে যেতে। বললো ১০ মিনিট। ব্যস। ২ ভাই রওনা দিলাম স্বচােখে দেখার মানসে। পরের গলিতেই শেখ হাসিনার বাড়ি সুধাসদন। তা পেড়িয়ে ধানমন্ডি লেক ধরে পার্ক পেড়িয়ে ৩২ নম্বর অভিমুখি আমরা।লেকের পাড়ে জোড়ায় জেড়ায় কপোত কপোতিরা নিজ নিজ ধ্যানে চোখে চোখ রেখে প্রেম বিনিময় করছে। কারও মাথায় রজনীগন্ধ্যা ফুল। কেউবা এক অপরের হাত ধরে ভালাবাসা বিনিময়ে মগ্ন। কেউ প্রিয়তমার ঘাড়ে হাত এলিয়ে স্বপ্নের জাল বুনছেন। তাদের অধিকাংশের বয়স ১৬ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। লেকের পাড়ের ২টি রেষ্টুরেন্ট থেকে ভেসে রক মিউজিকের শব্দ। ভেতরে নাচ গান ও উল্লাসের দৃশ্য কিছুটা দেখাও যায় বাইরে থেকে। লেকের পাড় ঘেষে ব্যাডমিন্টন খেলার অনেকগুলো কোর্ট রয়েছে। সেখানে যুবকেরা খেলছেন নিশ্চিন্তে। ২৫ বছর পর এই লেকের ভেতর দিয়ে হাঁটতে গিয়ে পরিবর্তন ও উন্নয়ন দেখেই ভালোই লাগছিল। শত শত মানুষ জগিং করছেন। স্বাস্থ্যের প্রতি ঢাকাবাসীর বেশ সচেতনতা। দেখলাম লেক সংলগ্ন আলোক সজ্জিত রবিন্দ্র সরোবর। ১২ মিনিট পর স্বাধীনতার স্মৃতি বিজোড়িত ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে । হাজার হাজার মানুষ সেখানে দাঁড়িয়ে। অনেকে হাসিনা ও ভারত বিরোধী শ্লোগান দিচ্ছেন। প্রায় শ’ খানেক লোক বাড়ির ভেতরে বিভিন্ন ফ্লোরে ও ছাদে। অনেকের হাতে হাতুড়ি ও লাঠি। ভাবছিলাম তা দিয়ে এই বাড়ি ভাঙ্গা সম্ভব? ছাদের উপর কেউ কেউ কাগজ বা কাপড় দিয়ে আগুন ধরানোর চেষ্টা করছে। অধিকাংশ মানুষ ৩২ নম্বর সড়কের ওপর দাড়িয়ে ভিডিও করছেন। বুলডোজার আসছে বলে অনেকে মন্তব্য করছিলেন। রাস্তার পাশেই ছাত্ররা মাইক লাগিয়ে হাসিনা ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এমন দৃশ্য দেখে ভাবছিলাম, একজন মহিলার ক্ষমতালিপ্সা, এরোগেন্সি ও অহংকারের কারনে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও স্বাধীনতার স্মৃতি চিহ্নগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। পালিয়ে গিয়ে ভারতে বসে বায়বীয় উস্কানী দিয়ে অতি সাধারন কর্মি ও সর্মথকদের বিপদে ঠেলে দিচ্ছে। ছোট ভাই স্থান ত্যাগ করার জন্য তাড়া দিচ্ছিল। তার ভাষায়, এখানে থাকা নিরাপদ নয়। মব শুরু হতে পারে। প্রায় ২০ মিনিট থাকার পর রিটার্ন একই পথে। পথিমধ্যে একই দৃশ্য। খেলাধুলা, প্রেম ভালোবাসা, সাধারন মানুষের জগিং ও রেষ্টুরেন্টের হাউ ভলুউমের সঙ্গিত পরিবেশনা। ৫০, ১০০ কিংবা ১০০০ গজ দূরেই ৩২ নম্বরের বাড়িটির সামনে এতও কিছু ঘটছে কারও কোন তোয়ক্কা নেই। বিকার নেই। ভাবটি এমন কই কিছুইতো না। নেই কোন উদ্বেগ কিংবা উৎকন্ঠা। প্রেমিক প্রেমিকারা নিবেদন করছেন আবেগের ফুলছড়ি। খেলোয়াড়েরা জয়ের নেশায় মরিয়া। সবই যেন স্বাভাবিক। লেকের এক পাড়ে ধ্বংসযজ্ঞের উৎসব। অন্যপাড়ে সবকিছুরই স্বাভাবিকতা। এটাই আমার বাংলাদেশ।
বাসায় ফেরার পর রাত ১২টার দিকে জানতে পারলাম বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে ভাঙ্গা হচ্ছে। এমন সময় খুব খাছ থেকে শ্লোগান শোনা যাচ্ছিল। সকালে জানতে পারলাম রাতে ছাত্ররা ৫ নম্বর রোডস্থ সুধাসদনও জ্বালিয়ে দিয়েছে।