বুধবার   ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৯ ১৪৩১   ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কে হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০১:২৯ এএম, ৩০ অক্টোবর ২০২৪ বুধবার

কমলা-ট্রাম্প ব্যবধান ১ শতাংশ, হাড্ডাহাড্ডির আভাস, ভোটের বাকি ছয় দিন


 কে হচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট? ২০১৬ সালের ফলাফলেরই কি পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে? গাজা পরিস্থিতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় গত তিন বছরে তেমন সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়নি বাইডেন-কমলা প্রশাসন। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ‘নারী নেতৃত্ব’ নিয়ে অধিকাংশ শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের অনীহা। এ কারণে সব জনমত জরিপে এগিয়ে থেকেও হিলারি ক্লিন্টন ধরাশায়ী হয়েছিলেন ট্রাম্পের কাছে। এবার কমলা হ্যারিসকেও কী একই ফলাফল দেখতে হবে- এমন জিজ্ঞাসা ক্রমে প্রবল হচ্ছে ডেমোক্র্যাট শিবিরেও। কয়েকদিন আগে এক জরিপে দেখা যায়, মাত্র ১ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে আছেন কমলা। বিশ্লেষকরা বলছেন, লড়াই হতে পারে হাড্ডাহাড্ডি।

অপরদিকে, জাতি-ধর্ম-বর্ণ বিদ্বেষমূলক বক্তব্যে রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক ভোটারদেরও বিষিয়ে তুলছেন ট্রাম্প। এর পরিণতি ৫ নভেম্বরের ব্যালট যুদ্ধে কতটা পড়বে, তার ওপরই ট্রাম্পের জয়-পরাজয় নির্ভর করবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করছেন। তবে, নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে দোদুল্যমান ৭ স্টেটের ইলেক্টোরাল কলেজের ভূমিকাই মুখ্য হবে- এটা প্রায় নিশ্চিত। পপুলাল ভোট আর ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের মারপ্যাঁচে এর আগেও অধিকতর যোগ্য ও গ্রহণযোগ্যরা হোয়াইট হাউসে অধিষ্ঠিত হতে পারেননি। আর এভাবেই মার্কিন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে যত বাহাদুরিই দেখানো হোক, সাধারণ আমেরিকানদের কাছে তা এক রহস্যের আবহেই জড়িয়ে রয়েছে। তার পরও সবাই অধির আগ্রহে রয়েছে বিশ্ব পরিস্থিতির টালমাটাল অবস্থার মধ্যে উদারচিত্তের একজন নেতা হোয়াইট হাউসে এবং শান্তি-সমৃদ্ধির পথ সুগম করতে কংগ্রেসের আসনগুলোও সুবিন্যস্ত হবে নির্বাচনি ফলাফলের মধ্য দিয়ে, এমন প্রত্যাশা নিয়ে।
নির্বাচনের বাকি ছয়দিন, এরই মধ্যে অর্থাৎ ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ডাকযোগে অথবা সশরীরে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছেন ৪ কোটি ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৫৮০ জন। আগেকার যে কোনো নির্বাচনের তুলনায় আগাম ভোটে আমেরিকানদের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। ইতোমধ্যেই প্রাপ্ত ভোটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পড়েছে টেক্সাস স্টেটে ৫৩ লাখ ৬৫ হাজার ১১০। ফ্লোরিডায় ৪৫ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৪ ভোট। ক্যালিফোর্নিয়ায় ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৬২৪ ভোট। এর পরের ক্রমিকে রয়েছে জর্জিয়ায় ২৮ লাখ ৩১ হাজার ৫১২, নর্থ ক্যারলিনায় ২৮ লাখ ২০ হাজার ২, মিশিগানে ২০ লাখ ৫৪ হাজার ৪৮২, ওহাইয়োয় ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ৩, ইলিনয়ে ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯৮, পেনসিলভেনিয়ায় ১৪ লাখ ১৪ হাজার ৮৩৯, ওয়াশিংটনে ১০ লাখ ৮০ হাজার ২০১, ইন্ডিয়ানায় ৯ লাখ ১২ হাজার ৩৩৪ ভোট। নিউইয়র্কসহ অন্য স্টেটগুলোতেও আগাম ভোট শুরু হয়েছে ২৬ অক্টোবর থেকে। এর ফলে ৫ নভেম্বর ভোট কেন্দ্রে ভিড় এড়ানো সম্ভব হবে এবং ফলাফল ঘোষণায় ততটা বিলম্ব হবে না। যদি ব্যবধান অধিক হয়। কারণ, ডাকযোগে আসা ব্যালট গণনায় ৫ নভেম্বরের পরেও কদিন লাগতে পারে। প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ে দোদুল্যমান ৭ স্টেটের সঙ্গে গ্রিন পার্টির অবস্থানেরও গুরুত্ব অপরিসীম। মুসলিম-আমেরিকান ভোটারের বড় একটি অংশ এখন প্রকাশে ঝুঁকছে গ্রিনপার্টির প্রার্থী জিল স্টাইনের প্রতি। মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া, ফ্লোরিডায় মুসলিম-আমেরিকান ভোটাররা সম্মিলিতভাবে কমলা হ্যারিসের বিকল্প হিসেবে জিল স্টাইনকে বেছে নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। গাজা, লেবানন পরিস্থিতিতে বাইডেন-কমলার ভূমিকায় ক্ষুব্ধ নতুন প্রজন্মের ভোটারের বড় একটি অংশ কমলার বিকল্প হিসেবে জিল স্টাইন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বেছে নিচ্ছেন। এর ফলে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলার বিজয়ের সম্ভাবনা ক্রমে ক্ষীণ হচ্ছে। জনমত জরিপেও এমন আশঙ্কার প্রতিফলন ঘটতে শুরু করেছে। মার্কিন সংবিধানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিটি স্টেটের নিজস্ব ভোট রয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জটিল ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থার অধীন প্রতিটি স্টেটে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেক্টর (নির্বাচক) থাকেন। ৫০ স্টেটের মধ্যে ৪৮টির জন্য নিয়ম হলো যিনি পপুলার ভোটে (সাধারণ নাগরিকদের ভোট) জিতবেন, তিনিই সে স্টেটের সব কটি ইলেক্টোরাল ভোট পাবেন; সেখানে পপুলার ভোটের ব্যবধান যত কমই হোক না কেন। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে জয়ী হওয়ার জন্য ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে ২৭০টি ভোট পেতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে দোদুল্যমান স্টেটগুলো বড় প্রভাব রাখে। এ বছর দোদুল্যমান স্টেটের সংখ্যা সাত। এগুলো হচ্ছে পেনসিলভানিয়া ১৯, জর্জিয়া ১৬, নর্থ ক্যারোলিনা ১৬, মিশিগান ১৫, আরিজোনা ১১, উইসকনসিন ১০, নেভাদা স্টেটে ৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের জটিল অঙ্কেও উভয় প্রার্থী সমানে সমান বলে প্রতিয়মান হয়েছে। আর এভাবেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন তুমুল হাড্ডাহাড্ডি হবে তা দৃশ্যমান হচ্ছে সর্বসমক্ষে। এমনি একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প একে অপরের দিকে সমালোচনার তীর ছুড়ছেন। ট্রাম্পকে ফ্যাসিস্ট বলে অভিহিত করেন কমলা। এবার ট্রাম্পও একই তীর ছুড়লেন তার দিকে। তিনি বলেন, আসল ফ্যাসিস্ট হচ্ছেন কমলা। জর্জিয়ায় সোমবার এক নির্বাচনি সমাবেশে এমন মন্তব্য করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় তিনি বলেন, তাকে নাৎসি বলা হলেও তিনি নাৎসির উল্টোদিকে রয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘নির্বাচনি প্রচারে নতুন এক কথা খুঁজে পেয়েছেন কমলা হ্যারিস। কেউ তাকে ভোট না দিলেই তিনি বলে বসেন, ওই ব্যক্তি নাৎসি।’ কিন্তু ট্রাম্পের এই দাবি পুরোপুরি সত্য নয়। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এমন কথা বলেননি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন সে কথাই বলছে। গত বুধবার পেনসিলভেনিয়ার ডেলাওয়ার কাউন্টিতে এক অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একজন ফ্যাসিস্ট বলে মন্তব্য করেন কমলা হ্যারিস। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের কাছে রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপারে জানতে চায় সিএনএন। তাকে প্রশ্ন করা হয়, ট্রাম্পকে তিনি ফ্যাসিস্ট মনে করেন কিনা। ওই প্রশ্নে হ্যারিস বলেন, ‘হ্যাঁ আমি মনে করি। আমি বিশ্বাস করি, ট্রাম্প একজন ফ্যাসিস্ট। আমি এটাও বিশ্বাস করি, যারা তাকে সবচেয়ে ভালো চেনেন, তাদেরও এ বিষয়ে বিশ্বাস করা উচিত।’ ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট। এ অবস্থায় শেষ দিকের প্রচারে এসে হ্যারিস ট্রাম্পকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অসংলগ্ন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য বলে দাবি করেছেন। এর জবাবও দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প।