বুধবার   ১৪ মে ২০২৫   বৈশাখ ৩০ ১৪৩২   ১৬ জ্বিলকদ ১৪৪৬

যথাযোগ্য মর্যাদায় ঈদ উদযাপিত

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:৪০ এএম, ২২ জুন ২০২৪ শনিবার

ফিলিস্তিনসহ মুসলিম বিশ্বের জন্য বিশেষ মোনাজাত

 
 
সারা বিশ্বের মতো যুক্তরাষ্ট্রেও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসব মুখর পরিবেশে পবিত্র ঈদ উল আযহা উদযাপন করেছে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ মুসলিম সম্প্রদায়। নিউউয়র্ক সহ বিভিন্ন স্টেটে গত ১৬ জুন রোববার কয়েক হাজার মসজিদ ও খোলা মাঠে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ করে নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধুষিত জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, চার্চ ম্যাকডোনাল্ড, ওজোন পার্কসহ মুসলিস কমিউনিটির মসজিদ ও কমিউনিটির উদ্যোগে বড় পরিসরে ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়। অনুকূল আবহাওয়া এবং ঈদের দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ঈদ জামাতে মানুষের ঢল নামে। মানুষের উপস্থিতি বিচেনায় একাধিক জামাতের ব্যবস্থাও রাখা হয়। ঈদ জামাতে মুসলিম বিশ্ব, বিশেষ করে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ও মানববেতর জীবন যাপন করা ফিলিস্তিনসহ বিভিন্ন দেশে নিপিড়িত মুসলমানদের জন্য দোয়া করা হয়।
ঈদের দিন আবহাওয়া ভালো থাকায় বেশির ভাগ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় খোলা মাঠে। তবে বৃষ্টির সম্ভাব্য ঝুঁকির কথা মাখায় রেখে বিকল্প হিসাবে খোলা মাঠের পাশাপাশি মসজিদে নামাজের ব্যবস্থার প্রস্তুতিও নেয়া হয়। পুলিশ ও সিটির পক্ষ থেকে ঈদ জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঈদের আগের রাত বা চাঁদ রাতেও উৎসবে মুখর হয়ে উঠে বিভিন্ন এলাকা।
ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসনকে সামনে রেখে এবার ঈদের বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়। যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেই নজরে রাখা হয়। মসজিদে ও খোলা ময়দানে ঈদ জামাতে নিরাপত্তা বিধানের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এতে নিউইয়র্কে ঈদের দিন কোন অপ্রিতিকর ঘটনাও ঘটেনি। তবে প্রতিটি মসজিদে ঈদের জামাতের আগে পরে ফিলিস্তিনের নিপিড়িত মুসলমাদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি দেয়া ও যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে আল্লাহর দরবারে তাদের জন্য চোখের পানি ফেলে দোয় করেন মুসল্লিরা। ফিলিস্তি ছাড়াও চীন, সিরিয়া, কাশ্মির, মায়ামনারসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মুসলমানদের জন্য দোয়া করা হয়। একই সঙ্গে মুসলিম উম্মার ঐক্য, ভাতৃত্ব, সংহতি ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধিও উপর জোর দেয়া হয়। নামাজের পর মুসলমানরা একে অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করেন। বিভিন্ন স্থানে নামাজের পর শিশু ও ছোট বাচ্চাদের জন্য ক্যান্ডি, খেজুর এবং মিষ্টিজাতীয় খাবারও বিতরণ করা হয়। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষ্যে ঈদের জামাতে নিউইয়র্কের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও উপস্থিত হয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
জ্যাকসন হাইটসের মোহাম্মদী সেন্টারের উদ্যোগে ঈদের পরদিন স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে এবং যারা কোরবানি দিতে পারেননি তাদের মধ্যে কোরবানির গোস্ত বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন মসজিদ ও কমিউনিটির উদ্যোগেও ঈদের দিন ও পরদিন গোস্ত বিতরণ করা হয়।
ঈদের আগের রাতে জ্যামাইকার হিলসাইড, জ্যাকসন হাইটসসহ বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশিরা দলে দলে সেখানে আসেন। ফুটপাতগুলোতে দোকান বসে। বেচাকেনা হয় বিভিন্ন পণ্য। মেহেদি লাগান অনেকেই। তবে রোজার ঈদের তুলনায় উৎসবের মাত্রা ও মানুষের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। কারণ ঈদের দিন কুরবানির জন্য প্রস্তুুতি নিতে হয়েছে। তাই মধ্য রাতের আগেই মানুষ নিজ নিজ বাসায় ফিরতে থাকেন।
জ্যামাইকা, জ্যাকসন হাইটস, কুইন্স ভিলেজ, হলিস, সাউথ জ্যামাইকা, ওজন পার্ক, রিচমন্ড হিল, পারসন্স, উডসাইড, এস্টোরিয়া, ব্রঙ্কস, ব্রুকলিন, চার্চ ম্যাকডোনাল্ড, ম্যানহাটনসহ নিউইয়র্ক সিটি ও স্টেডের বিভিন্ন এলাকার মুসলিম কমিউনিটি ও মসজিদেও উদ্যোগে ঈদের জামাতের ব্যবস্থা করা হয়। নিউইয়র্ক ছাড়াও ওয়াশিংটন ডিসি, লস অ্যাঞ্জেলেস, ফ্লোরিডা, মিশিগান, নিউজার্সি, কানেক্টিকাটসহ বিভিন্ন স্টেট ও সিটির মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায়ও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি ঈদ জামাতে মহিলাদের জন্য আলাদা জায়গার ব্যবস্থা করা হয়।
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার
প্রতি বছরের মতো এ বছরও নিউইয়র্কের সবচেয়ে ঈদ জামাতের আয়োজন করে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি)। স্থানীয় থমাস এডিসন হাইস্কুলের প্লে গ্রাউন্ডের এ জামাতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ অংশ নেয় বলে জানান আয়োজকরা।সকাল সাড়ে আটটায় অনুষ্ঠিত হওয়া কথা থাকলেও জেএমসির ঈদের জামাত হয় সকাল পৌণে ৯টায়। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা সেখানে ঈদের নাজামে অংশ নেন।  খুতবা পাঠ করেন ইমাম শামসে আলী। খুতবা শেষে তিনি মোনাজাত করেন। নামাজের জামাতে ইমামতি করেন মওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ। জামাত শেষে তিনি বিশেষ মোনাজাত করেন।
আল কুবা ইসলামিক সেন্টার অব জ্যামাইকার উদ্যোগে সাউথ জ্যামাইকার পিএস ৫০ স্কুলের মাঠে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয় সকাল আটটায়। প্রায় দুই হাজার মানুষ ঈদের জামাতে শরিক হন বলে জানান আয়োজকরা। জ্যামাইকার দারুস সালাম মসজিদে ৪টি ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়। এসব  জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা আবদুল মুকিত, হাফেজ আশরাফ আহমেদ, মাওলানা মোহাম্মদ আলী এবং হাফেজ মাওলানা মুইনুল ইসলাম। রিয়াজুল জান্নাহ ইসলামিক সেন্টার ইনক, জ্যামাইকার আমেরিকান মুসলিম সেন্টার ও জ্যামাইকার মসজিদ মিশনের উদ্যোগেও একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জ্যামাইকায় ইকনা মসজিদের উদ্যোগে সকাল সাড়ে সাতটায় ঈদের প্রথম জামাত এবং সাড়ে আটটায় দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
আল আরাফা ইসলামিক সেন্টারের উদ্যোগে ৮৮-৪৯ ১৭৯ প্লেসে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত হয় সকাল সাড়ে ছয়টায়। দ্বিতীয় জামাত সকাল আটটায় এবং তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল নয়টায়।
জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় নিউইয়র্ক ঈদগাহর উদ্যোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় পাঁচটি। সকাল ছয়টায় প্রথম জামাতের পর এক ঘণ্টা পরপর ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় হয়। ইস্ট এলমর্হাস্ট জামে মসজিদ অ্যান্ড মুসলিম সেন্টারের উদ্যোগে সকাল সাড়ে আটটায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।  এস্টোরিয়ার আল আমিন জামে মসজিদ কমিটির আয়োজনে ঈদের একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল আটটায়। এস্টোরিয়ার ৩৬ স্ট্রিটে (৩৬ ও ৩৭ এভিনিউর মাঝে) অনুষ্ঠিত একই ঈদ জামাতে নামাজে ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা লুৎফুর রহমান চৌধুরী।
ব্রুকলীন ইসলামিক সেন্টার আল ত্যেহিদ মসজিদের উদ্যোগে চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড এলাকার সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে। স্থানীয় প্রসপেক্ট পার্কের প্যারেড গ্রাউন্ডের ফিল্ড ৮-এ অনুষ্ঠিত জামাতে ইমামতি করেন ইমাম আবদুল্লাহ। একই এলকার বায়তুল জান্নাহ জামে মসজিদ অ্যান্ড মুসলিম কমিউনিটি সেন্টারের উদ্যোগে ৫৬৯ ম্যাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউতে খোলা রাস্তায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
ওজনপার্কের বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয় আল আমান মসজিদে। একই এলাকার আল ফুরকান মসজিদের উদ্যোগে মসজিদের সামনে ৭৬ অ্যান্ড গ্লেনমোর অ্যাভিনিউতে সকাল আটটায় ও নয়টায় দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ফুলতলী জামে মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল আটটায়।
নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টার অ্যান্ড জামে মসজিদের উদ্যোগে ওভাল পার্কের খোলা মাঠে সকাল সাড়ে আটটায় বিশাল ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ব্রঙ্কসে বায়তুল ইসলাম মসজিদ অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টারের উদ্যোগে ঈদের জামাত হয় সকাল সাড়ে আটটায়। ক্যাসেলহিল আইডিয়াল ইসলামিক সেন্টারের উদ্যোগে ২১০০-২১৪৬ টার্নবুল অ্যাভিনিউতে প্লে গ্রাউন্ডে সকাল আটটায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাবাজার জামে মসজিদের উদ্যোগে খোলা আকাশের নিচে ঈদের বিশাল জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ম্যানহাটানের মদিনা মসজিদের উদ্যোগে মসজিদ সংলগ্ন মাঠে  ঈদের জামাত হয় সকাল সাড়ে ৮টায়।
এ ছাড়া জ্যাকসন হাইটসে আল নূর ইসলামিক সেন্টার, আল নূর ইসলামিক সেন্টার শরিয়া বোর্ড নিউইয়র্ক, নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টার, পার্কচেস্টার জামে মসজিদ, বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টার, মোহাম্মদী সেন্টার, দারুল উলমের উদ্যোগে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে ঈদের জামাতের পর মুসল্লিরা পশু কোরবানি দেন। আগে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশে কোরবানি দিলেও সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ও প্রাবসে দুইস্থানেই কোরবানি দেন। তাছাড়া এবার স্কুল খোলা থাকায় সামারে অনেকে দেশে যেতে পারেনি। তবে বাংলাদেশের মতো বাসার কাছে কোরবানির দেয়ার ব্যবস্থা না থকায় বাংলাদেশিরা বিভিন্ন খামারে আগে থেকে অর্ডার কোরবানি দেন। বাংলাদেশি মালিকানাধীন গ্রোসারি বা সুপার মার্কেটে কোরবানির অর্ডার নেন, পরে কুরবানির গোস্ত বাসায় পৌছে দেন। কেউ কেউ ফার্মে গিয়ে নিজ হাতেও কোরবানি দেন। কুরবানির চাপ বেশি থাকায় খামার ও গ্রোসারিতে লম্বা সিরিয়ালের কারণে অনেকেই ঈদের পরদিনও কুরবানি দেন।