সোমবার   ২০ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১   ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

নিউইয়র্কে বিপর্যয়ের মুখে অর্থনীতি

মনোয়ারুল ইসলাম

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৫৬ এএম, ১৩ এপ্রিল ২০২৪ শনিবার



বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে নিউইয়র্কের অর্থনীতি। একেবারে তলানিতে চলে যাচ্ছে এই অঙ্গরাজ্যের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ। এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে অত্যাধিক ট্যাক্সের চাপ, শ্রমখাতে ব্যয়, লাখ লাখ মানুষের নিউইয়র্ক ত্যাগ, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি প্রভৃতি। গত মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) ‘দি আমেরিকান লেজিসলেটিভ এক্সচেঞ্জ কাউন্সিল’-এর রিচ স্টেটস রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী করোনা পরবর্তী সময়কালে ৫০টিরও বেশি কোম্পানি তাদের করপোরেট হেড অফিস নিউইয়র্ক সিটি থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছে। এসব কোম্পানি থেকে প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয়কর পেত নিউইয়র্ক সিটি।
আমেরিকায় পারসোনাল ও করপোরেট ট্যাক্স আদায়ে নিউইয়র্কের স্থান প্রায় সর্বোচ্চ। ৫০টি স্টেটের মধ্যে প্রপার্টি ট্যাক্স আদায়ে নিউইয়র্কের অবস্থান ৪৬তম ও সেলস ট্যাক্স আদায়ে ২৪তম। রিপোর্ট অনুসারে ঘন্টাপ্রতি ন্যূনতম ১৫ ডলার বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে নিউইয়র্ক রয়েছে ৪৪তম স্থানে। সবচেয়ে বেশি প্রপার্টি ট্যাক্স আদায়ের ক্ষেত্রে নিউইয়র্কের ওপরে রয়েছে মাত্র তিনটি স্টেট-কানেকটিকাট, ভারমন্ট ও ইলিনয়। এরপরই নিউইয়র্কেও অবস্থান।  
নিউইয়র্ককে বড় ধকল পোহাতে হচ্ছে ডমিস্টিক মাইগ্রেশন নিয়ে। স্বচ্ছল, শিক্ষিত ও উচ্চ আয়ের জনগোষ্ঠী বেশি হারে নিউইয়র্ক ত্যাগ করছে। ইমিগ্রেশনের কাগজপত্র, গ্রীনকার্ড কিংবা সিটিজেনশিপ পাওয়ার পরপরই অনেক পরিবার নিউইয়র্ক সিটি এমনকি নিউইয়র্ক স্টেট ত্যাগ করছে। সন্তানদের ভালোভাবে গড়ে তোলার জন্য তারা নিউইয়র্ক সিটিকে যথোপযুক্ত মনে করেন না। এছাড়া রয়েছে জীবনযাত্রার অধিক ব্যয়ভার। কুইন্স কিংবা ব্রুকলিনে এক ফ্যামিলির একটি বাসা কিনতে মিলিয়ন ডলার গুণতে হয়। অথচ পাশের স্টেট পেনসিলভানিয়া কিংবা কানেকটিকাটে ২ লাখ ডলারের কমেই অনেক সুপ্রশস্ত এক ফ্যামেলির বাসা কেনা যায়। স্কুল, হাসপাতাল ও পরিবেশও এসব বাড়ির অনেক উন্নত। রিপোর্ট অনুসারে ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময় কালে নিউইয়র্ক স্টেট ২০ লাখ জনগোষ্ঠী হারিয়েছে। যার অধিকাংশই নিউইয়র্ক সিটির।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক স্টেটের অর্ধেক জনগোষ্ঠীই বাস করে সিটির পাঁচ বরোতে। নিউইয়র্ক ত্যাগী মানুষদের সবচেয়ে বেশি পছন্দের স্টেট হিসেবে স্থান পেয়েছে টেক্সাস ও ফ্লোরিডা। রিটায়ার্ড নিউইয়র্কারদের প্রতি ৭ জনের ৪ জনই ফ্লোরিডায় চলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে থাকেন।
এদিকে বিপুল সংখ্যক মাইগ্রান্ট প্রতিদিন নিউইয়র্কে প্রবেশ করছে। গত তিন বছরে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখের ওপর। বিশেষ করে সীমান্ত পথে আসা কাগজপত্রহীন বা অবৈধ এইসব মাইগ্রান্টরা নিউইয়র্কের জন্য আশীর্বাদ না হয়ে বোঝা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নিউইয়র্ক সিটিকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার গুণতে হচ্ছে তাদের থাকা ও ভরণপোষনের জন্য।
প্রতিবেশী স্টেট নিউজার্সির অবস্থারও অবনতি ঘটছে। জাতীয়ভাবে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তাদের অবস্থান ৪৬ নম্বরে।