সোমবার   ২০ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১   ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় সেভ দ্যা পিপল ও ইউএমআরের খাবার বিতরণ

নিউজ ডেস্ক

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:২৩ পিএম, ৪ এপ্রিল ২০২৪ বৃহস্পতিবার

সেবামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকায় কমিউনিটির পিছিয়ে পড়া মানুষের হাতে খাবার তুলে দিয়েছে চ্যারিটি অরগানাইজেশন সেভ দ্যা পিপল এবং ইউএমআর। গত ৩০ মার্চ বিনামূল্যে এই হালাল ফুড ডিস্ট্রিবিউশন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সেভ দ্যা পিপলের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ইমাম মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। পুরো আয়োজনে সহযোগিতা করেছেন কমিউনিটির জনপ্রিয় মুখ আশা হোম কেয়ারের সিইও আকাশ রহমান এবং বাংলাদেশি আমেরিকান সোসাইটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী।

খাবার বিতরণে আরো সহযোগিতা করেছে ইউএথ্রি। ভলান্টিয়ারি সাপোর্ট করেছে ইউএনএ-ইউএসএ অ্যাসোসিয়েশন কুইন্স চ্যাপ্টার এবং নিউইয়র্ক সিটি স্পিকার এনরিয়া অ্যাডামসের অফিস। অতিথিদের বক্তব্য শেষে দুস্থদের মাঝে নানা ধরনের খাবার বিতরণ করা হয়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ খাবার সংগ্রহ করেন। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ব্যবসায়ী, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট, রাজনীতিক, ইমাম, চিকিৎসক এবং সরকারি কর্মকর্তা।

মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর পরিচালনায় সভার শুরুতেই ইউএমআর-এর ডিরেক্টর মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘জন্মলগ্ন থেকেই ইউএমআর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মানবিক কাজ করে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় হাতেগোনা যে কয়েকটি সংস্থা অসহায় ফিলিস্তিনিদের সাহায্যে কাজ করছে, তার মধ্যে ইউএমআর অন্যতম। এর বাইরে বাংলাদেশেও সংস্থাটির একাধিক প্রজেক্ট আছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার অসহায় নিউইয়র্কারদের হেল্প করার জন্য ছুটে এসেছে ইউএমআর।’

বাংলাদেশ এবং নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে নানাভাবে মানুষের পাশে থাকা আকাশ রহমান খাবার বিতরণের এই চমৎকার উদ্যোগের অংশ হতে পেরে নিজের উচ্ছ্বাসের কথা জানান। তিনি বলেন,‘আমি এবং আমার প্রতিষ্ঠান সবসময়ই কমিউনিটির পাশে থাকার চেষ্টা করছি। এমন নানা সহায়তার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটি এখন মেইনস্ট্রিমে অনেক কাজ করছে। এই ফুড ডিস্ট্রিবিউশন তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর টবি এন স্টেভেস্কি। তিনি তার বক্তব্যে এমন আয়োজনের প্রশংসা করেন। প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের অবস্থান আরও সুসংহত হবে। তাদের নিজেদের মধ্যে যে ঐক্য ও পারস্পরিক সহযোগিতা রয়েছে, সেটা অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেন টবি এন স্টেভেস্কি।  

ওয়ার্ল্ড হিউম্যানিটি সার্ভিসের এডভাইজার ডাক্তার আবুল কাশেম বলেন, ‘মানুষ হিসেবে মানুষর পাশে দাঁড়ানো আমাদের রেসপন্সিবিলিটি। আমরা মনে করি, যে কোনো মানবিক কাজে এগিয়ে আসা আমাদের কর্তব্য। আর এই কর্তব্য ও দায়িত্ব একদিনের জন্য নয়, এটা একটা কন্টিনিউয়াস প্রসেস। তাছাড়া একজন মুসলমানের দায়িত্ব হলো সবসময় ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই খাবার বিতরণের এখানে এসেছি।’

জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কমিউনিটি লিডার হুমায়ুন খান বলেন, ‘রমজান আমাদেরকে অন্যের প্রতি সহমর্মী হতে শেখায়। দুস্থ মানুষের প্রতি হাত বাড়িয়ে দেওয়া শেখায়। সেই শিক্ষা থেকেই এই ফুড ডিস্ট্রিবিউশনে উপস্থিত হয়েছি।’

বাংলাদেশি আমেরিকান সোসাইটির প্রেসিডেন্ট কমিউনিটি লিডার মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা সবসময়ই এখানকার অসহায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। কোভিডের কঠিন সময়ও আমাদের তৎপরতা ছিল। শুধু খাবার নয়, তাদের যে কোনো ধরনের সহযোগিতায় আমরা সদা জাগ্রত। নিউইয়র্ক সিটিতে এখন অনেক ইমিগ্রেন্ট, অনেক লো ইনকাম পিপলের বসবাস। তাদেরকে হেল্প করতেই ইউএমআর এবং সেভ দ্য পিপলকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই চ্যারিটি কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’

খাবার বিতরণের এই অনুষ্ঠানে ইউনাইটেড ন্যাশন্স এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিস্টার আলিমাতা। তিনি জানান, জাতিসংঘের যে এসডিজি গোল, তার প্রথমেই রয়েছে নো পোবার্টি। জাতিসংঘ এই মিশন নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ইউনাইটেড নেশন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এখানে ভলান্টারি করছি সেই মিশন বাস্তবায়নের লক্ষ্য হিসেবেই। সুন্দর আয়োজনের জন্য ইউএমআর এবং সেভ দ্য পিপলের প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।
 
ইউনাইটেড ন্যাশন্স এসোসিয়েশনের আরেক প্রতিনিধি ফারিহা হাবিব বলেন, ‘ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত পৃথিবী গড়ার যে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে জাতিসংঘ, সেটা পূরণ করা একা জাতিসংঘের পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এই খাবার বিতরণও তেমনই একটি তৃণমূল পর্যায়ের প্রয়াস।’

জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের ইমাম ও খতিব মির্জা আবু জাফর বেগ বলেন, ‘রমজান মাস হলো রহমতের মাস। এই মাসের শেষ দশদিন আমাদেরকে আরও বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে। মানুষকে খাবার দেওয়া, সহযোগিতা করাটাও একটা বিরাট বড় ইবাদত। এই ইবাদতের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।’