মঙ্গলবার   ০৬ মে ২০২৫   বৈশাখ ২২ ১৪৩২   ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৬

নিউইয়র্ক ছাড়ছে মানুষ

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:২২ এএম, ২৩ মার্চ ২০২৪ শনিবার

আগামী ১ দশকে জনসংখ্যা অর্ধেকে নামার আশঙ্কা

 
আগামী এক দশকে নিউইয়র্কের জনসংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের আশংকার কারণ, বিপুল সংখ্যায় নিউইয়র্কারদের এই নগরী ত্যাগ।   গত দুই বছরে ৭ লাখ নিউইয়র্কার বিভিন্ন কারণে নিউইয়র্ক স্টেট ত্যাগ করেছেন। যার বড় একটি অংশ ছেলেমেয়েদের উন্নত শিক্ষার পরিবেশের চিন্তা করে অন্য স্টেটে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
করোনার পর ২০২২ ও ২০২৩ সালে বিপুল সংখ্যক মানুষ নিউইয়র্ক ত্যাগ করেছেন। করোনার সংক্রমণে নিউইয়র্ক সিটিতে এককভাবে সবচেয়ে বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। যার সংখ্যা ছিল প্রায় ২৩ হাজার। আর করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল ২ লাখের উপরে। যা যুক্তরাষ্ট্রের অন্য যে কোন শহরের চেয়ে সর্বোচ্চ। করোনার আক্রমণে নিউইয়র্কবাসীদের মধ্যে এক ধরনের আতংক তৈরি হয়েছিল। এ কারণে করোনার পরপরই হাজার হাজার মানুষ নিউইয়র্ক ত্যাগ করে।
তবে এখনকার অবস্থা ভিন্ন। এখন সাধারণ মানুষ করোনার চেয়েও যে বিষয়টিকে ভযাবহ বলে মনে করছে তা হলো আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ও এই শহরে বসবাসের অনুপযুক্ত পরিবেশ। দিনে-রাতে বিভিন্ন নেবারহুডগুলোতে চলছে অস্ত্রের মহড়া। প্রতিদিনই ছোটবড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডাকাতি, সাবওয়ে ট্রেনের ভেতরে ও প্লাটফর্মে চলছে গুলিগোলা। ঝরছে রক্ত। পর্যটকদের প্রিয় শহর ম্যানহাটান অনিয়ন্ত্রিত মাইগ্রান্টস ও হোমলেসদের কারণে নোংরা ও দূর্গন্ধময় হয়ে উঠেছে।  সর্বশেষ পরিসংখান অনুসারে সিটিতে ২০১৯ সালের আগের তুলনায় এখন আর অর্ধেক পর্যটকও আসছে না।
নন প্রোফিট ‘থিংক ট্যাংকস’ প্যানডামিকের পর প্রথম এই ধরনের একটি আশংকাজনক তথ্য প্রকাশ করেছে। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত তাদের জরিপে দেখানো হয়েছে ৬ বছর আগের তুলনায় নগরীতে অপরাধ বেড়েছে ৫০ শতাংশেরও বেশি। শতকরা ৫৮ ভাগ মানুষ জরিপে অংশ নিয়ে বলেছেন, ২০২৮ সালের পর তারা নিউইয়র্কে থাকবেন কিনা ভেবে দেখবেন। সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠছে অবসরে যাওয়া নিউইয়র্কারদের মধ্যে। একসময় তাদের কাছে নিউইয়র্ক সিটি ছিল স্বপ্নের নগরী। হাত বাড়ালেই তারা সব কিছু পেতেন। বাসা থেকে বেরুলেই বাস, ট্রেন ও ট্যাক্সি। প্রতিটি মোড়ে মোড়ে গ্রোসারী স্টোর। এ সব কারণে বয়স্ক আমেরিকানদের কাছে নিউইয়র্ক সিটিই ছিল পয়লা নম্বরের পছন্দের। এখন তাদের চিন্তা-ভাবনার পরিবর্তন ঘটছে। রাস্তায় বেরুলেই তারা ছিনতাই এর মুখোমুখি হচ্ছেন। তাদেরকে সহায়তার পরিবর্তে স্বর্বস্ব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। পেনশনে যাবার আগ থেকেই নিউইয়র্কারদের বড় একটি অংশ ফ্লোরিডা, টেক্সাস কিংবা আরিজোনার দিকে চলে যাওয়িার পরিকল্পনা করছেন। ট্যাক্স, আইনশৃংখলা ও নগরীর পরিবেশের কথা চিন্তা করে তারা নতুন নিবাসের চিন্তা করেন।
সিবিএন প্রকাশিত জরিপে অংশ নেয়া ৬ হাজার ৬০০ জনের অর্ধেকই মনে করেন সিটি এখন কারও জন্যই নিরাপদ নয়। সেটি হোক  ট্রেন বা বাস কিংবা প্রকাশ্য দিবালোকের রাস্তা। সিটি মেয়র এরিক এডামস গত মঙ্গলবার এই জরিপ প্রসঙ্গে বলেছেন, ৮.৩ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর নানাজনের নানা মতামত থাকতে পারে। আমার ২ বছর ৩ মাসের শাসনামলে সিটির মানুষকে প্রাধান্য দিয়ে নানামুখি পরিকল্পনা গ্রহন করেছি। তিনি বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এ সিটিতে আসছেন সে হিসেবটি কেউ রাখেছেন না। বিগ আপেল আগামীতে আরও এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।