রোববার   ২৪ আগস্ট ২০২৫   ভাদ্র ৯ ১৪৩২   ২৯ সফর ১৪৪৭

মার্কিন কংগ্রেসে টিকটক নিষিদ্ধের বিল পাস

আজকাল রিপোর্ট -

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:২১ এএম, ২৩ মার্চ ২০২৪ শনিবার

চীনা মালিকানা থাকবে না

 
 
চার বছরের আলোচনা আর উদ্বেগের পর ১৩ মার্চ কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ৩৫২-৬৫ ভোটে টিকটক নিষিদ্ধ সংক্রান্ত একটি বিল পাস হলো। এটি সিনেটের অনুমোদন পেলেই তাতে স্বাক্ষর করবেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন-ইতিমধ্যেই সে নিশ্চয়তা তিনি দিয়েছেন। উল্লেখ্য, এটি আইনে পরিণত হলে ৬ মাসের মধ্যে বেইজিংভিত্তিক চীনা কোম্পানী বাইটড্যান্সকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোন কোম্পানীর কাছে বিক্রি করতে হবে, যেটির মালিকানায় চায়নিজরা থাকবে না। এরও আগে যুক্তরাষ্ট্রের সব স্টোর থেকে টিকটকের অ্যাপ সরিয়ে ফেলতে হবে।
চীনা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তারা ব্যবহারকারির গোপন তথ্য চীনা সরকারের কাছে বিক্রি করছে। কিছু কিছু গোয়েন্দা সংস্থার উদ্বেগ যে, অ্যাপটি সরকারি ডিভাইসে ডাউনলোড করার কারণে স্পর্শকাতর তথ্য অন্যের হাতে চলে যেতে পারে। এমন ধারণায় গত বছর বাইডেন এক আদেশে হোয়াইট হাউস, কংগ্রেসসহ ফেডারেল প্রশাসনের সকল কম্প্যুটার/ফোন ফোন থেকে টিকটক-কে ডিলিট করতে বলেছেন। এরও আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে টিকটক নিষিদ্ধের আহবান জানিয়েছিলেন। যদিও সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অভিপ্রায়ে ট্রাম্প এখন টিকটক নিষিদ্ধের বিরোধিতা করছেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে টিকটক বলছে, তারা এই অ্যাপ ব্যবহারকারীদের তথ্য কখনোই অন্য কাউকে দেয় না। টিকটক আরও বলছে, ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারে তারা অন্যান্য সোশাল মিডিয়া কোম্পানির মতো একইভাবে কাজ করে। এর আগে এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি উল্লেখ করে অ্যাপটিতে অ্যাকসেস সীমিত করার জন্য আমেরিকান কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের দাবি, টিকটকের মালিক বাইটড্যান্সের সঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সম্পর্ক রয়েছে। তবে বাইটড্যান্স এবং টিকটক এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
জানা গেছে, ১৭০ মিলিয়ন আমেরিকান প্রতি মাসে টিকটক ব্যবহার করছে অর্থাৎ অর্ধেক জনগোষ্ঠির কাছে এটি জীবন-ধারণের এবং সমসাময়িক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার অন্যতম একটি অবলম্বনে পরিণত হয়েছে। এই অ্যাপ ব্যবহার করে ৭০ লাখের অধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-আমেরিকান জীবিকা নির্বাহ করছে। এসব ব্যবসায় গতবছর ১৪.৭ বিলিয়ন ডলারের অবদান রেখেছে টিকটক। অভ্যন্তরঢু জাতীয় উৎপাদনে অবদান রেখেছে ২৪.২ বিলিয়ন ডলারের। অক্সফোর্ড ইকনোমি নামক একটি ফাইন্যান্সিয়াল কন্সালটেন্সি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুযায়ী টিকটকের মাধ্যমে ২ লাখ ২৪ হাজার আমেরিকানের কর্মসংস্থান হয়েছে। নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ইলিনয় এবং ফ্লোরিডা স্টেট সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে টিকটক প্রচলনে।
এদিকে, ক্যাপিটল হিলে বিলটি পাশের সময়ে বাইরে বেশ কিছু আমেরিকান উদ্যোক্তা ও টিকটকে কনটেন্ট ব্যবহারের ব্যবসা করে জীবন-যাপনরত তরুণ-তরুণী বিক্ষোভ করেছেন। টিকটক নিষিদ্ধের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। রাজনৈতিক কারণে এমন একটি চমৎকার অ্যাপ নিয়ে লঙ্কাকান্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, টিকটকের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। সেটি নিষিদ্ধের মাধ্যমে আমেরিকার এগিয়ে চলার গতিকে থামিয়ে দেয়া হবে-তা বলার অপেক্ষা রাখে না। টিকটককে টিক করে অথবা পরিচালনা করার কোড এবং অ্যালগরিদম কে লিখে সেটি চিহ্নিত করার পরিবর্তে পুরো প্ল্যাটফরমকে নিষিদ্ধ করার মধ্যে যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারিগণের মধ্যে মন্টানা থেকে আসা আর্টিস্ট এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিথার ডিরক্কো বলেন, অন্য যে কোন সোস্যাল মিডিয়া থেকে টিকটক ক্ষতির পরিবর্তে লাভবানই বেশি করছে।
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে বিল পাশের সংবাদ জেনেই টিকটকের চীফ এক্সিকিউটিভ শো জি চিউ এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ব্যাপারটি খুবই হতাশার, বিব্রতকর, এবং এই অ্যাপ ব্যবহারকারিদেরকে বিলটির বিরুদ্ধে সরব হতে উৎসাহিত করবে। গত কয়েক বছর ধরেই আমরা আমেরিকান ব্যবহারকারিগণের ড্যাটা নিরাপদে সংরক্ষণ এবং আমাদের প্ল্যাটফরমকে বাইরের কারোর হস্তক্ষেপ মুক্ত রাখতে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছি। এবং আমরা অঙ্গিকারাবদ্ধ যে, এই পন্থা অব্যাহত রাখবো। এমনি অবস্থায় বিলটি যদি আইনে পরিণত হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধের আশংকা থাকবে। এর ফলে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের আয় থেকে বঞ্চিত হবেন আমেরিকার কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
বিলের প্রস্তাব অনুয়ায়ী ৬ মাসের মধ্যে টিকটক মার্কিন কোন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি কখনোই সম্ভব হবে না। এটা বাস্তবসম্মত নয়। এমন মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার এবং বাক-স্বাধীনতা বিষয়ক এটর্নী নোরা বেনাভিডেজ। তিনি বলেন, এমন পদক্ষেপের পরিণতি কখনো শুভ হতে পারে না।
সর্বশেষ সংবাদে জানা গেছে, প্রতিনিধি পরিষদে উভয় দলের ভোটে বিলটি পাশ হলেও ইউএস সিনেটে তা পাশের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।