যুক্তরাষ্ট্রের অনাগ্রহে ভেস্তে গেল যুদ্ধবিরতি ভোট
নিউজ ডেস্ক
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ১১:০৭ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার

অবরুদ্ধ জনপদে ইসরাইলে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ বন্ধে গাজায় মানবিক কারণে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে অসংখ্য দেশ। চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসাবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভুটাভুটির কথা ছিল সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকাল ৫টায়।
তবে এদিন যুক্তরাষ্ট্র ভোটে অংশ নিতে চায়নি। ইসরাইলের অন্ধ সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ বন্ধের এই নির্লজ্জ অবস্থানেই পিছিয়ে গেল ভোট।
বারবার ব্যর্থ হয়ে যুদ্ধবিরতির দাবিতে এবার নতুন খসড়া প্রস্তাব করে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দুবাইয়ের আনা প্রস্তাবটিতে হামাস-ইসরাইলের মধ্যে শত্রুতা চিরতরে বন্ধ করে গাজায় নিরাপদ ও শর্তহীন মানবিক সহায়তার আহ্বান জানানো হয়।
পাশাপাশি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে গাজা ও পশ্চিম তীরের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়টিও প্রস্তাবে আনা হয়। তবে খসড়া এ প্রস্তাবটিতে সন্তুষ্ট হয়নি যুক্তরাষ্ট্র। অবশেষে হোয়াইট হাউজের অনাগ্রহেই ভেস্তে গেল যুদ্ধবিরতির ভোট। আগামী মঙ্গলবার পুনরায় ভোটাভুটির সম্ভাবনা রয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান, এএফপি।
এর আগেও (৮ ডিসেম্বর) নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র। অথচ শুরু থেকেই মুখে যুদ্ধবিরতির ফেনা তুলছে ওয়াশিংটন! পাশাপাশি গাজা হামলা রসদও সরবরাহ করছে ইসরাইলকে। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রে আবারও এমন শক্ত অবস্থানের পরদিনই (মঙ্গলবার) গাজায় জোরালো হামলা চালিয়েছে ইসরাইলের সেনারা।
এদিন ভোরে উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলায় ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৬৬৭ জনে। আহত ৫৫ হাজার ৫৮৬।
এদিকে যুদ্ধবিরতি বন্ধে অনীহার পরদিনই ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখার বিষয়টি আবারও নিশ্চিত করেছে ওয়াশিংটন। ইসরাইলকে পরম বন্ধু আখ্যা দিয়ে তেল আবিবকে সব ধরনের অস্ত্র সরবরাহে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ওয়াশিংটন। মঙ্গলবার দিনভর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন তেল আবিবে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
সবচেয়ে লম্বা বৈঠক হয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োআভ গ্যালান্টের সঙ্গে। সেই বৈঠকেই তিনি বলেন, ‘আপনাদের (ইসরাইল) দেশকে রক্ষার জন্য যা যা সরঞ্জাম দরকার তা আমরা পাঠাতে থাকব... যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধাস্ত্র, কৌশলগত যান এবং বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে।’ গাজায় চলমান যুদ্ধে সব ধরনের বাণিজ্যিক লেনদেন বন্ধ ছিল। জাতিসংঘের নেতৃত্বে প্রথম বাণিজ্যিক ট্রাক শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) গাজায় প্রবেশ করেছে। সোমবার যুক্তরাষ্ট্র এ খবরটি নিশ্চিত করেছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এটি গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ফিলিস্তিনি জনগণের চাহিদা পূরণের জন্য গাজায় প্রবাহিত মানবিক সহায়তা আরও বাড়ানোর জন্য আমরা ইসরাইল, মিসর এবং এই অঞ্চলের অংশীদার দেশগুলোর সরকারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাব।’
অন্যদিকে ইসরাইল গাজা হামলার বিরুদ্ধে এবার মন্তব্যে মুখ খুললেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। বলেন, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে, তবে তা কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদুলু আজানসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়। রাজধানী রোমে নিজের রাজনৈতিক দল ব্রাদার্স অব ইতালির এক কর্মসূচিতে জর্জিয়া বলেন, ‘হামাসের হামলার পর আমরা ইসরাইলের পক্ষ নিয়েছি এটা সত্যি; তবে ইসরাইলকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় থেকে নিজের আত্মরক্ষা অধিকার চর্চা করতে হবে এবং বেসামরিক লোকজনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’