বৃহস্পতিবার   ২৮ আগস্ট ২০২৫   ভাদ্র ১২ ১৪৩২   ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

বাইডেন-শি বৈঠক

৬ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে চীনা প্রেসিডেন্ট

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:২১ এএম, ১৮ নভেম্বর ২০২৩ শনিবার



আজকাল রিপোর্ট
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে বৈঠক হওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকের ফলাফল নিয়ে প্রত্যাশা কমই রাখার চেষ্টা করেছিলেন। তারপরও বুধবার ওই বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমঝোতা হয়।
বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, এবারে আমাদের মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমার ধারণা যেগুলো খুবই গঠনমূলক এবং ফলপ্রসূ ছিল। তিনি আরও বলেন, কিছু ক্ষেত্রে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দুটি বড় দেশের জন্য একে অপরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের এই পৃথিবী দুটি দেশের সফল হওয়ার জন্যই যথেষ্ট বড়।
জলবায়ু ইস্যুতে ঐকমত্য: বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী এই দুই দেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আরও পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করার বিষয়ে তারা কোন প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তারা মিথেন নির্গমন কমিয়ে আনার ব্যাপারে একে অপরকে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মিথেন হল এক ধরনের শক্তিশালী গ্রিনহাউজ গ্যাস।
দেশ দুটি ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে তিনগুণ বাড়ানোর বৈশ্বিক প্রচেষ্টার প্রতিও সমর্থন জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে এই মাসের শেষের দিকে দুবাইতে যে জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৮ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেই সম্মেলনের আগে এটি এক ধরনের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
ফেন্টানাইল পাচার রোধ: দুই পক্ষ বলেছে যে তারা মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একে অপরকে সাহায্য করবে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র অবৈধ ফেন্টানাইলের জোয়ার রোধ করার জন্য রাসায়নিক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। এই উপাদানটি অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণের ফলে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা অনেক বেড়ে গিয়েছে। গত বছর প্রায় ৭৫ হাজার মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর পেছনে কারণ ছিল এই শক্তিশালী সিনথেটিক ওপিওড বা কৃত্রিম ওপিওড।
কৃত্রিম ওপিওড হল এমন পদার্থ যা পরীক্ষাগারে সংশ্লেষিত হয় এবং যেটি মস্তিষ্কের সেই একই অংশে প্রভাব ফেলে যেমনটা কিনা প্রাকৃতিক ওপিওড যেমন, মরফিন, কোডাইন করে থাকে। এগুলো মূলত বেদনানাশক বা ব্যথা উপশমে কাজ করে।
চীনা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র এই ওষুধেই উৎপাদন করে না বরং ওষুধগুলো তৈরি করার জন্য যেসব রাসায়নিকের প্রয়োজন হয় সেগুলোর উৎসও এই কোম্পানিগুলো।
ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশনের আন্তর্জাতিক সংগঠিত অপরাধ বিশেষজ্ঞ ভান্ডা ফেলবাব-ব্রাউন বলেছেন যে চুক্তিটি মূলত ‘এক ধরনের কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিবৃতি’, তবে এর প্রকৃত প্রভাব কেমন হবে সেটি নিয়ে এখনও প্রশ্ন থেকে গিয়েছে।
সামরিক যোগাযোগ পুনস্থাপন: দুই দেশ একে অপরের সঙ্গে সামরিক যোগাযোগ পুনরায় শুরু করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেÑএটি এমন একটি পদক্ষেপ যা আমেরিকানদের প্রত্যাশার তালিকার উপরের দিকে ছিল। গত বছর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের তৎকালীন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফর করার পর চীন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
চলতি বছরের শুরুর দিকে একটি সন্দেহভাজন চীনা গুপ্তচর বেলুন উত্তর আমেরিকার আকাশ জুড়ে ভেসে বেড়াতে দেখা যায়। পরে যুক্তরাষ্ট্র সেগুলো গুলি করে আটলান্টিক মহাসাগরে নামিয়ে আনে। ওই ঘটনার পর থেকে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপ-সহকারী সচিব মিক মুলরয় বলেছেন, স্নায়ু যুদ্ধের সময়, যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন সবসময় পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর সাথে সামরিক যোগাযোগ বজায় রেখেছিল। যাতে পারমাণবিক শক্তিগুলোর মধ্যে যুদ্ধের কারণ হতে পারে এমন যেকোনো দুর্ঘটনা বা ভুল বোঝাবুঝি এড়ানো যায়। এটি এখন চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেও হওয়া দরকার।  
আলোচনা চলবে: দুই দেশের চুক্তির বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট থাকলেও, এটি নিছক একটি বৈঠক ছিল। এবং বাইডেন ও শি করমর্দন করেছেনÑএকে একটি ইতিবাচক লক্ষণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দুই প্রেসিডেন্টের একে অপরের সাথে কথা বলতে পারাই এক ধরনের কূটনৈতিক অর্জন। যদি তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে সম্মত হতে পারে, তবে এটি একাই একটি সাফল্য হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।
বৈঠক শুরু হওয়ার সাথে সাথে বাইডেন শিকে বলেছিলেন: আমি আমাদের কথার মূল্য দিই কারণ আমি মনে করি আমরা নেতা হিসেবে পরস্পরকে স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি, কোন ভুল ধারণা বা ভুল বোঝাবুঝি ছাড়াই। চীনা নেতা এতে সম্মত হন। তিনি বলেন, সংঘাত ও সংঘর্ষ উভয় পক্ষের জন্যই অসহনীয় পরিণতি বয়ে আনে।
দুই দেশ এখনও অনেক বিষয়ে দুই মেরুতে রয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে অসম্মতি জানাতে সম্মত হওয়াও একটি শুরু। তবে কিছু পর্যবেক্ষক এ ব্যাপারে অত্যধিক আশাবাদী না হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
প্রসঙ্গত, ছয় বছর আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পা রেখেছিলেন।