ইউএস ক্যাপিটল হিল ঘেরাও
ফিলিস্তিনের পক্ষে ইহুদিরা
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০২:৩৫ এএম, ২১ অক্টোবর ২০২৩ শনিবার
৩০০ বিক্ষোভকারী আটক
আজকাল রিপোর্ট -
যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদিরা ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। ক্যাপিটল হিলে যুদ্ধবিরতির দাবিতে তিনশ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে সেখান থেকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্যাপিটল পুলিশের এক মুখপাত্র।
বুধবার বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধের দাবি নিয়ে ক্যাপিটল প্রাঙ্গণের বাইরে জড়ো হন। এর মধ্যে বামপন্থি ইহুদি গ্রুপের কয়েক সদস্য ব্যানার হাতে বিভিন্ন সিকিউরিটি পয়েন্ট দিয়ে ক্যানন হাউস ভবনে ঢুকে পড়েন। ব্যানারগুলোতে লেখা ছিল, ‘ইহুদিরা বলোÑএখনই যুদ্ধ বন্ধ করুন’ বা ‘যুদ্ধবিরতি’ চাই, ‘ইহুদিরা এখনই যুদ্ধবিরতি চায়’, ‘আমাদের নামে (যুদ্ধ) নয়’ ইত্যাদি স্লোগান। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ইহুদিদের কেউ কেউ ঐতিহ্যবাহী ‘কিপ্পাহ’ টুপি পরে এসেছিলেন। তাঁরা যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েল সরকারকে চাপ দিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ব্র্যান্ডন উইলিয়ামস ইসরায়েলের পতাকা উড়িয়ে বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের প্রতি সংহতি জানান। এ বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল জিউশ ভয়েস ফর পিস নামে ইহুদিদের একটি সংগঠন।
ফিলাডেলফিয়া থেকে বিক্ষোভে অংশ নিতে এসেছিলেন ৭১ বছর বয়সী লিন্ডা হল্টজম্যান। বাইডেনের উদ্দেশে লিন্ডা বলেছেন, ‘চোখ খুলে দেখুন। যুদ্ধবিরতির জন্য অবিলম্বে উদ্যোগ নিন।’ ৩২ বছর বয়সী হান্নাহ লরেন্সের বাড়ি ভারমন্টে। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল সরকারকে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিতে সক্ষম বর্তমান বিশ্বে এমন একমাত্র ব্যক্তি হলেন বাইডেন। এ কারণে অসহায় মানুষদের জীবন বাঁচানোর জন্য বাইডেনের শক্তি প্রয়োগ করা উচিত। বিক্ষোভে অংশ নেন ক্যানন রোতুন্দা। তাঁর হাতে ছিল ব্যানার। যুদ্ধবিরোধী স্লোগান দেন তিনি। ক্যানন বলেন, বিক্ষোভ থেকে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ব্যানার খুলে ফেলছে। কয়েকজনকে হাতকড়া পরিয়েও নিয়ে যেতে দেখা যায়। পরে ইউএস ক্যাপিটল পুলিশের পক্ষ থেকে এক্স (টুইটার) বার্তায় বলা হয়, ‘আমরা বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের বিক্ষোভ থামাতে বলেছিলাম। কিন্তু তাঁরা শোনেননি। কংগ্রেস ভবনে বিক্ষোভ চালিয়ে যান তাঁরা। এরপর তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।’
পুলিশ জানায়, ক্যাপিটল প্রাঙ্গণে প্রবেশে কারও কোনো আইনি বাধা নেই। তবে সেখানে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়। সেখানে বুধবারের বিক্ষোভে বিশৃঙ্খলতার কারণেই বিক্ষোভকারীদের আটক করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওয়াশিংটন মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ভার্জিনিয়াসহ আশপাশের বিভিন্ন পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে কর্মকর্তাদের আনা হয়। হোয়াইট হাউসের বাইরেও চলতি সপ্তাহের শুরুতে এ ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। সেখান থেকে আটক করা হয় বেশ কয়েক বিক্ষোভকারীকে।
এদিকে, ক্যানন হাউস ভবনের কয়েকজন আইনপ্রণেতা ইহুদি বিক্ষোভকারীদের প্রতি নিন্দা জানান। মন্টানার রিপাবলিকান রিপ্রেজেন্টেটিভ রায়ান জিংক এক্স (টুইটার) বার্তায় বলেন, ‘আমেরিকার সংবিধান এসব আন্দোলনকারীদের নির্বুদ্ধিতার স্বাধীনতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।’
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায়। জবাবে ওই দিনই পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এ সংঘাতে দুই পক্ষের চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জেরুজালেমসহ ফিলিস্তিনের কয়েকটি জায়গায় আশ্রয়শিবিরে স্থল অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এছাড়া গাজা থেকে পালানোর সময় বেসামরিক লোকজনের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলা চালানোর খবর এসেছে। হামলা হয়েছে গাজার হাসপাতালেও। এখন পর্যন্ত দশ লাখ ফিলিস্তিনী বাস্তুহারা হয়েছে। গাজায় পানি, বিদ্যুৎসহ জরুরি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। ফলে সেখানে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।