সোমবার   ২০ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১   ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

নিউইয়র্কের বাজারে বাংলাদেশের মিষ্টি

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০৩:৪০ এএম, ৫ আগস্ট ২০২৩ শনিবার


   
নাগরিক -
কবে থেকে নিউইয়র্কে শুরু হয়েছিল বাঙালি ধারার মিষ্টান্ন তৈরি? বাঙালি ধারার মিষ্টি মানে সেই রসনা তৃপ্ত করা রসগোল্লা, সন্দেশ, চমচম, পানতোয়া, রাজভোগ, এমনি আরো কত কি!  এ সব মিষ্টি তো একান্তভাবে শুধু বাঙালিদেরই সম্পদ। বাঙালিদের এই নিজস্ব সম্পদ, এইসব মুখরোচক মিষ্টান্ন সামগ্রী এখন অতি সহজলভ্য এই সাত সমুদ্র তের নদীর পারের দেশ আমেরিকায়, বিশেষ করে নিউইয়র্কে। শুধু সহজলভ্যই নয়, উৎকর্ষের দিক দিয়ে এসব মিষ্টি এখন নিঃসন্দেহে বেশ উন্নত মানের, বেশ মুখরোচক।
কিন্তু কবে থেকে এই বিদেশ-বিভূঁইয়ে শুরু হয়েছিল এইসব মিষ্টি তৈরি করা? সে হিসাব সঠিকভাবে পাওয়া যায় না। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাঙালি মিষ্টি তৈরি এবং মিষ্টির ব্যবসা শুরু যতদূর জানা যায় গত শতকের নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে। বাঙালি মালিকানায় প্রথম একটি মিষ্টির দোকান চালু হয় ১৯৯৩ সালে এস্টোরিয়ায়। মিষ্টির দোকান সঙ্গে রেস্টুরেন্ট। এর পর পরই জ্যাকসন হাইটসে চালু হয় আরো একটি রেস্টুরেন্ট কাম মিষ্টির দোকান। এই দোকানগুলিতে নিজস্ব কারিগর দিয়ে মিষ্টি তৈরির সূচনা ঘটে।
কিন্তু দোকান না থাকলেও নিউ ইয়র্কে বাঙালি মিষ্টি তৈরি অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। গ্রোসারিগুলিতে পাওয়া যেত বাঙালির মিষ্টি। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নয়, ঘরোয়াভাবে এ মিষ্টি বানাতেন বাংলাদেশি গৃহবধূরা। পরে তাদের অনেকেই তাদের তৈরি মিষ্টি সরবরাহ করতেন বাঙালি গ্রোসারিগুলিতে। ঘরে বসে তাদের মিষ্টি তৈরির এই উদ্যোগ কবে থেকে শুরু হয়েছিল তার সন্ধান যথার্থ পাওয়া যায় না। অনেকেই বাড়িতে মিষ্টি তৈরি করতেন নিজেদের প্রয়োজনে, বিশেষ করে অতিথি আপ্যায়নে, ঘরোয়া অনুষ্ঠানে। নিজেদের প্রয়োজনে ঘরে মিষ্টি তৈরি শুরু সত্তর-আশির দশকেই। পরে কমিউনিটিতে চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে কোন কোন গৃহবধূ মিষ্টি সরবরাহ করতে শুরু করেন গ্রোসারিগুলিতে। তাদের তৈরি এসব মিষ্টি যথেষ্ট সাড়া তুলেছিল বাজারে। তাদের মিষ্টির চাহিদা বেড়েছিল, উৎপাদন বেড়েছিল, সরবরাহও বেড়েছিল। এস্টোরিয়া নিবাসী একজন মহিলা, যিনি একদা নিউইয়র্কের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একজন  উদ্যমী সংগঠক ছিলেন, তিনি ব্যাপক ভিত্তিতে মিষ্টি তৈরি করে বিভিন্ন গ্রোসারিতে সরবরাহ করতেন। দীর্ঘ দিন ধরেই তিনি এই কাজটি করেছেন। তার হাতের মিষ্টি সবার প্রশংসা পেয়েছিল। বর্তমানে তিনি কানাডা প্রবাসী। কিন্তু কানাডা চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি মিষ্টি তৈরির কাজটি অব্যাহত রেখেছিলেন।
১৯৯৩ সালের দিকে নিউইয়র্কে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মিষ্টির উৎপাদন শুরু এবং মিষ্টির দোকান চালু হওয়ার পর মিষ্টান্নের ব্যবসা ক্রমে ক্রমে বিস্তার লাভ করে। এখন নিউইয়র্কে তো বটেই বলা অত্যুক্তি হবে না যে সারা আমেরিকা জুড়েই বাঙালি মিষ্টির ছড়াছড়ি। যেখানেই দু’ঘর বাঙালির আস্তানা সেখানেই পাওয়া যায় বাঙালির মিষ্টি। কথাটা এভাবেও বলা যায, বাঙালি যেখানেই গেছে সেখানেই সঙ্গে করে নিয়ে গেছে তাদের মিষ্টিকে।
বাঙালি সঙ্গে করে সর্বত্র  নিয়ে গেছে তাদের মিষ্টিকে কিন্তু এই প্রবাসে তৈরি সে সব মিষ্টিতে কি বাঙালি মিষ্টির আদি ও অকৃত্রিম স্বাদ পাওয়া যায়? এ নিয়ে মিষ্টিরসিকরা যথেষ্ট খুঁতখুঁতে। এখানে তৈরি চমচমে কি পাওয়া যায় পোড়োবাড়ির চমচমের স্বাদ? কিংবা কুমিল্লা মাতৃভান্ডারের  রসমালাইয়ের সেই রসনা জুড়ানো স্বাদ কি এখানকার রসমালাইতে মেলে? বগুড়ার দইয়ের বিকল্প কি হতে পেরেছে এখানকার দই? কিংবা টাঙ্গাইলের মন্ডা?
এই বিষয়টি মাথায় নিয়েই সেই আদি মিষ্টির স্বাদে এখানকার খাদ্যরসিকদের মন ভরিয়ে দিতে সচেষ্ট রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এখন নিউইয়র্কে সরাসরি আমদানি হচ্ছে বাংলাদেশের আদি ও অকৃত্রিম মিষ্টান্নগুলি। এখানকার ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা এখন রফতানি করছেন দেশের প্রসিদ্ধ সব মিষ্টি। মিষ্টিগুলিকে এমনভাবে প্রক্রিয়াজাত এবং প্যাকিং করা হচ্ছে যাতে এ পর্যন্ত আসতে তা টাটকা ও তার খাদ্যগুণ অক্ষুন্ন থাকে। এগুলি বাক্স বন্দী হয়ে বাংলাদেশ থেকে জাহাজে আমেরিকা পর্যন্ত আসতে তিন মাসের মতো সময় লাগে বলে একটি সূত্র জানিয়েছেন।
বিভিন্ন বাংলাদেশি গ্রোসারিতে এখন সরাসরি বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা মিষ্টির সমাহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গ্রোসারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এগুলি বিক্রিও হচ্ছে যথেষ্ট।