মঙ্গলবার   ২১ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১   ১৩ জ্বিলকদ ১৪৪৫

অগুণিত সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসে

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ১২:৪৯ এএম, ১৬ জুলাই ২০২৩ রোববার

তসলিমা নাসরিন: উত্তর-আমেরিকার বঙ্গ-সম্মেলনে গিয়ে দেখলাম, বাংলার শাসকেরা আমাকে বিতাড়িত করলেও মৌলবাদীরা আমার বিরুদ্ধে সরব হলেও, নারীবিদ্বেষীরা আমার বিপক্ষে একজোট হলেও, বইয়ের প্রকাশকেরা এবং পত্রিকার সম্পাদকেরা আমাকে বয়কট করলেও, বুদ্ধিজীবীরা আমার ছায়া না মাড়ালেও, সুশীল জনগণ আমাকে উপেক্ষা করলেও, অসংখ্য অগুনিত সাধারণ মানুষ আমাকে ভালোবাসে। বঙ্গ সম্মেলনে দু’কদম আমার হাঁটার জো ছিলো না। ছুটে এসে কেউ না কেউ থামিয়েছেই, বলেছে আপনার হিউজ ফ্যান বা বই পড়েছি বা আপনাকে দেখার জন্য উড়ে এসেছি দূরের শহর থেকে, বা আপনার লেখা পড়ে নারীবাদী হয়েছি, বা বিপ্লবী হয়েছি বা ধর্মমুক্ত হয়েছি, বা মানুষ হয়েছি। যখন আমার পায়ে শেকল, পদে পদে প্রতিবন্ধকতা, যখন বারবার কট্টরপন্থীদের ঘৃণার সামনে পড়ছি, মৃত্যুকে দাঁতকপাটি মেলে হাসতে দেখছি, তখন সম্মেলনে জড়ো হওয়া হাজারো মানুষের  শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আর স্নেহে সিক্ত হয়েছি প্রতিদিন। এ কম পাওয়া নয়।

দুঃখ এই, ওরা কেউ জানতো না কোথায় আমি জীবনের কথা বলবো, নিজের লেখা কবিতা পড়বো। ঝলমলে উৎসবের বাইরে, বড় বড় মঞ্চ থেকে দূরে, এক অন্ধকার করিডোর পেরিয়ে একটি ছোট্ট নির্জন ঘরে যে আমার কবিতাপাঠ হচ্ছে, জানতো না। এবারের সম্মেলনে কবি-সাহিত্যিকদের স্থান ওই নির্জন ঘরেই ছিলো। অবশ্য নানা রকম বাজনা বাজিয়ে যে আবৃত্তিকারেরা কবিতা পড়েছে, তারা বড় মঞ্চ পেয়েছে, প্রচুর দর্শক পেয়েছে। নাচ, গান, আর নাটকের স্থান বড় মঞ্চে। একটি উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো, বাঙালিদের বঙ্গ-সম্মেলনে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হিন্দি গানের অনুষ্ঠান। আগেও এমন ছিলো, এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। লেখক: কথাসাহিত্যিক। ফেসবুক থেকে