সোমবার   ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫   ভাদ্র ১৭ ১৪৩২   ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

হোয়াইট হাউসে তোপের মুখে বাইডেন-মোদী

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ০২:২১ এএম, ২৪ জুন ২০২৩ শনিবার

হোয়াইট হাউসের সাউথলনে সংবর্ধনায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

হোয়াইট হাউসের সাউথলনে সংবর্ধনায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

তড়িঘরি করে প্রেসব্রিফিং শেষ করলেন প্রেসিডেন্ট

 
 
বিশেষ প্রতিনিধি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আলোচিত যুক্তরাষ্ট্র সফর নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস প্রশাসন এই সফর উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করে। হোয়াইট হাউসে রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজ, নৈশভোজসহ ছিল নানা চমকপ্রদ আয়োজন। মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিয়ে মোদি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু এই সফর চলাকালে ভারতের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে মার্কিন কংগ্রেসের ৭৫ জন সদস্য বিবৃতি দিয়ে ছন্দপতন ঘটান। তার পরের ঘটনায় দুই নেতা রীতিমত থতমত খেয়ে যান। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দাঁড়িয়ে ওয়াল স্ট্রীট জার্নালের এক সাংবাদিক কড়া প্রশ্ন করেন। প্রশ্নটি ছিল দুই নেতার জন্যেই বিব্রতকর। একদিকে মোদিকে অভাবনীয় সম্মান দেখাচ্ছেন বাইডেন। অপরদিকে, বাইডেনের দলের কংগ্রেসম্যানরাই ভারতের মানবাধিকার নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। সম্ভবত এমন বিব্রতকর প্রশ্নের কারণে মাত্র দুটি প্রশ্ন নিয়ে তড়িঘড়ি সংবাদ সম্মেলন শেষ করে দেন বাইডেন।
মোদির সফরে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা নিয়ে যে কৌতুহল ছিল তা পুরোপুরি মেটেনি। বাইডেন ও মোদি এশিয়ার আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাদের আলোচনায় ঠাঁই পেয়েছে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি। ফলে আলোচনায় বৃহত্তর আঙ্গিকের কথাটা তারা বলেছেন। সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশ নিয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে কিনা তেমন প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না। ফলে বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কোনও জবাব পাওয়া না গেলেও আঞ্চলিক প্রসঙ্গ আলোচনায় বাংলাদেশের বিষয়টি আলোচিত হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গুজরাট হত্যাযজ্ঞের পর নরেন্দ্র মোদিকে যুক্তরাষ্ট্র নিষিদ্ধ করেছিল। এখন আবার একই ব্যক্তিকে এমন বিপুল সম্ভাষণের কারণ কী তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। অনেকে মনে করেন, ভূ-রাজনৈতিক কারণে এই অঞ্চলে চীনের আধিপত্য মোকাবেলায় ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের খুব প্রয়োজন। তাছাড়া, ভারতের ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণী অর্থনীতির গতি সঞ্চার করার কারণও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জায়ান্ট সব কোম্পানির একটা বড় স্থান দখল করে আছেন ভারতীয়রা। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন প্রশাসনে কমলা হ্যারিসের মতো ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রভাবশালীরা আছেন। ফলে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এমন গুরুত্বপূর্ণ মিত্রকে যথেষ্ঠ সম্মান দেখাবে এটা খুবই স্বাভাবিক।
মোদির এমন জৌলুশপূর্ণ সফরকালে মার্কিন কংগ্রেসের ৭৫ জন সদস্যের বিবৃতিতে ছিল অন্তহীন বিস্ময়। যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বের মানবাধিকার ইস্যুতে সোচ্চার। তাই বলে বিশে^র বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে এমন বিবৃতি দিয়ে বিব্রত করা হবে তা কেউ ভাবেনি। কেউ কেউ মনে করেন, ভারতের বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী হার্ভাডে পড়ালেখা করার সুবাদে গোটা যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর বন্ধু-বান্ধব ছড়িয়ে আছেন। তাঁরা সম্ভবত এই বিবৃতি দেবার জন্যে উৎসাহিত করে থাকতে পারেন। ঘটনার নেপথ্যে যাই থাকুক না কেন বিষয়টা যথেষ্ট নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গ মোদি যে বাইডেনের সঙ্গে আলোচনায় তুলতে পারেন সেটা ওয়াশিংটন সম্ভবত আগেই আঁচ করতে পেরেছিল। তাই মোদির সফর শুরু হবার আগেই মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন্স পরিচালক অ্যাডমিরাল জন কিরবি বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট। দেশটির নির্বাচনকে প্রভাবিত করে এমন ব্যক্তিদের ভ্রমণ সীমিত করতে ওয়াশিংটন ভিসানীতি গ্রহণ করেছে। আর এ ব্যাপারে ভারতের অবস্থান তাদের নিজস্ব। কিরবি আরও বলেন, ওয়াশিংটন চায়, দিল্লি ঢাকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে কথা বলুক।  
এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের এক বক্তব্যকে স্পষ্ট করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারত অত্যন্ত পরিপক্ক। তাই বাইডেনের সঙ্গে কী আলোচনা করতে হবে সেটা তারা জানেন। বাংলাদেশের এ বিষয়ে ভারতকে অনুরোধ করার প্রয়োজন নেই। উল্লেখ্য, ভারতের হিন্দুস্থান টাইমসসহ কয়েকটি পত্রিকার খবর, বাংলাদেশকে চাপ না দেবার জন্য বাইডেনকে বলতে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ।