যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কোনো বৈরী সম্পর্ক নেই
সাপ্তাহিক আজকাল
প্রকাশিত : ০৪:১৮ এএম, ১০ জুন ২০২৩ শনিবার

রাষ্ট্রদূত বললেন, গুজবে কান দেবেন না
আজকাল রিপোর্ট
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বৈরি সম্পর্ক নেই। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও স্বাভাবিক সম্পর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। বুধবার নিউইয়র্ক কনস্যুলেটে আয়োজিত বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সংক্রান্ত এক সেমিনারে একথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ নিয়ে কোনো গুজবে কান না দিতে প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত।
মোহাম্মদ ইমরান বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ‘হোস্টাইল রিলেশন’ নেই। ক্ষণস্থায়ী কিছু সমস্যার তৈরি হয়েছে। এগুলোর সমাধান হয়ে যাবে। সহসাই তাদের সাথে আমরা বসবো। তাদের সাথে আমাদের বন্ধুত্বটি অবশ্যই স্থায়ী হবে। গত বুধবার ৭ জুন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক সেমিনার’ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, দু’দেশের মধ্যে হোস্টাইল রিলেশন বিরাজ করছে। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, যারাই সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দেবেন তাদের ও তাদের আত্মীয়স্বজনকে মার্কিন ভিসা দেয়া হবে না। এমতাবস্থায় বিনিয়োগের আহবান কতটুকু ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দু’দেশের মধ্যে কোন হোস্টাইল রিলেশন নেই।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইউএস রিলেশন নিয়ে প্রশ্ন করায় অযাচিতভাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মাসুদুল হাসান। তিনি বলেন, বিনিয়োগ সংক্রান্ত সেমিনারে রাজনৈতকি প্রশ্ন করা যাবে না। তার এই বক্তব্যে উপস্থিত সাংবাদিক ও এমনকি রাষ্ট্রদূতও বিব্রত হন। রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান মাইক হাতে নিয়ে দ্রুত পরিস্থিতি সামলে নেন। এই কূটনীতিক বলেন, অর্থনীতি ও রাজনীতি যেকোন প্রশ্নই করা যাবে। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা সকল প্রশ্নের জবাব দেব।
রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বন্ধু। তারা সাজেশন দিচ্ছেন। আইন কানুনের মধ্যে তাদের পরামর্শ গ্রহণে সরকাার নিশ্চয়ই পদক্ষেপ নেবেন। বিনিয়োগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। এতে বাংলাদেশে কোন বিনিয়োগে বাধা হবার কথা নয়।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক এই সেমিনারে রাষ্ট্রদূত জনাব মোহাম্মদ ইমরান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার মেহেদী হাসান, জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ইকোনমিক মিনিস্টার জনাব মোঃ মাহমুদুল হাসান, কনসাল জেনালে ড. মনিরুল ইসলাম, দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার সাজ্জাদ হোসেন সবুজ, কনস্যুলেটের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) ইসরাত হোসেন, কমিউনিটি একটিভিস্ট ড.সুফিয়ান খোন্দকার, ডা.মাসুদুল হাসান, রুহুল আমীন সিদ্দিকী, রথীন্দ্রনাথ রায়, শহীদ হাসান, হিরু ভূঁইয়া, মহিউদ্দীন দেওয়ান, আব্দুর রহিম বাদশা ও ওয়ার্ল্ড ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস এর শামসুদ্দিন বশীর।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত ইমরান বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বহুমাত্রিকতা ও গভীরতা উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে সকলকে নিয়ে কাজ করাার আশাবাদ পূনঃব্যক্ত করেন। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যাপারে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রেমিট্যান্সের গুরুত্ব বর্ণনা করে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করার ব্যাপারে একচেঞ্জ হাউসগুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহবান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার মেহেদী হাসান। তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার বিরাজমান অর্থনৈতিক সম্পর্কের উপর আলোকপাত করেন। তিনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করেন, যার মধ্যে রয়েছে তৈরী পোষাক ছাড়াও কৃষিপণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, ঔষধ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি, অটোমোবাইল, সুনীল অর্থনীতি, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানী ও পর্যটন খাত। প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিনিয়োগে নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশীদের বেশী বেশী করে বিনিয়োগের আহবান জানান। সোনালী এক্সচেঞ্জের সিইও দেবশ্রী মিত্র তাঁর বক্তব্যে প্রচলিত বিনিয়োগের পাশাপাশি স্টক ও বন্ডে বিনিয়োগের সুবিধাসমূহের উপর প্রবাসীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে সরকারী প্রণোদনার সুবিধা গ্রহণ করে তিনি সকলকে বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণের আহবান জানান।
কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম তাঁর সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশকে অপার সম্ভাবনার দেশ হিসেবে উল্লেখ করে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ ও নিয়ামকসমূহের বর্ণনা করেন। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য বিবৃত করে ২০৪১ রূপকল্প অর্জন ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বাস্তবায়নে সকলকে আরো কার্যকর ও অর্থবহ অবদান রাখার জন্য তিনি আবেদন জানান।