শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪   বৈশাখ ১৯ ১৪৩১   ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ভয়াবহ চাপের মুখে যুক্তরাষ্ট্র

সাপ্তাহিক আজকাল

প্রকাশিত : ১২:০৭ এএম, ১৩ মে ২০২৩ শনিবার


সীমান্ত অভিমুখে ৮ লাখ অভিবাসী প্রার্থী
২৪ ঘন্টায় ২০ হাজার প্রবেশ
মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা

মনোয়ারুল ইসলাম  
 
গতকাল বৃহস্পতিবার ‘টাইটেল ৪২’-এর কার্যকারিতা শেষ হতে না হতেই যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে  আশ্রয়প্রার্থীদের ঢল নামতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই প্রায় দেড় লাখ ইমিগ্র্যান্ট প্রত্যাশী আরিজোনা ও টেক্সাস সীমান্তে অবস্থান নিয়েছে। গত বুধবার ‘টাইটেল ৪২’ এর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের দিন ২৪ ঘন্টাতেই ২০ হাজার কাগজপত্রহীন অভিবাসন প্রত্যাশী যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়েছে। বিশাল এ জনস্রােতের সামনে সীমান্তরক্ষীরা ছিল অসহায়।   
দক্ষিণ সীমান্ত জুড়ে এখন বিরাজ করছে প্রবল উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি জানিয়েছে, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো থেকে প্রায় ৮ লাখ আশ্রয়প্রার্থী আমেরিকার সীমান্ত অভিমুখে রওনা দিয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ একসাথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করলে সীমান্ত এলাকায় এক অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব হবে। সীমান্তের বর্ডার পেট্রোল অফিসাররা এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মেক্সিকোর সাথে টেক্সাসের সীমান্ত জুড়ে এখন বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা।
প্যান্ডামিকের সময় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জারি করা ‘টাইটেল ৪২’ এর কার্যকারিতা শেষ হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার ১১ মে রাত ১১টা ৫৯ মিনিটে। এই আইনে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সাথে সাথে যে কোন ব্যক্তিকে সঙ্গে সঙ্গে বহিস্কারের বিধান রাখা হয়েছিল।  ২০২০ সালে ট্রাম্প এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটা করেছিলেন। বাইডেনের আমলে গত বছর আইনটির মেয়াদ শেষ হলেও সে মেয়াদ ১১ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ১১ মে’র পরে আইনটি আর কার্যকর থাকবে না এ খবরটি মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, কলাম্বিয়া ও গুয়াতেমালাসহ দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে ফলাও করে প্রচার হয়েছে গত কয়েকদিন। এই প্রচারে নতুন আশায় বুক বেঁধে স্বপ্নের আমেরিকায় আসতে আগ্রহী লাখ লাখ মানুষ ইতোমধ্যেই মেক্সিকো হয়ে সীমান্ত অভিমুখে রওনা দিয়েছে। একজন উচ্চ পদস্থ সীমান্ত অফিসার কংগ্রেস সদস্যদের বলেছেন, ১১ মে’র পর সীমান্ত পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে পারে। প্রতিদিন ১০ হাজারের অধিক  মাইগ্রেন্ট দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের প্রতিরোধ করার মতো জনবল নেই। এমনকি তাদের আটকাতে ও নজরদারি করতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামেরও অভাব রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত স্টেট থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট জনপ্রতিনিধিরাও শংকিত।
দেশের দক্ষিণ সীমান্তে মানবিক বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা করছেন কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে। তিনি সীমান্তে ১৫ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছেন বুধবার ১০ মে।  ইমিগ্র্যান্ট বিরোধী হিসেবে পরিচিত টেক্সাসের গর্ভনর গ্রেগ এবোট সীমান্তের জনস্রােত ঠেকাতে  মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি কয়েক হাজার রিজার্ভ ফোর্স পাঠিয়েছেন সীমান্তে। হেলিকপ্টার ও সি ১৩০ মহড়া দিচ্ছে দিনরাত। এতেও রক্ষা হচ্ছে না।
এদিকে সীমান্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে বাইডেন প্রশাসন নতুন গাইড লাইন দিয়েছে। ্হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি আলেজান্দ্রো মেয়রকাস বুধবার বলেছেন, টাইটেল ৪২ তামাদি হবার সাথে সাথে ‘টাইটেল ৮’ পুনরুজ্জীবিত হবে। এ আইনের আওতায় অবৈধভাবে প্রবেশ কওে কেউ এসাইলাম চাইলে তারা অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। দ্রুত তা প্রসেস করে তাদেরকে ফেরত বা ডিপোর্ট করা হবে। শুধু তাই নয়, ডিপোর্টিরা আগামী ৫ থেকে ১০ বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষিদ্ধ থাকবেন। বাইডেন প্রশাসনের গাইড লাইনে বলা হয়েছে, এসাইলাম প্রার্থীদের আগেই আবেদন করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে হবে।  ‘সিপিবি ওয়ান অ্যাপ’ এর মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করা যাবে। এ ছাড়া দক্ষিণ আমেরিকার কলাম্বিয়া ও গুয়াতেমালায় মাইগ্রেন্ট প্রসেসিং সেন্টার চালু হয়েছে। সেখানে গিয়েও আবেদন করা যাবে। এরপর সীমান্তে ইন্টারভিউয়ের জন্য অনলাইনে এপয়েন্টমেন্ট চাইতে হবে। এপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার পর তারা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে এসাইলামের ইন্টারভিউ দিতে পারবেন।
রিপাবলিকানরা অবশ্য টাইটেল-৮’র সমালোচনা করে বলেছেন, এ সব গাইডলাইনের কথা শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু এর সাথে বাস্তবতার মিল নেই। সীমন্তে যারা প্রবেশের জন্য আসেন তাদের কাছে এসব মূল্যহীন। তাদের শতকরা ৯৫ ভাগই অবৈধভাবে প্রবেশ কওে থাকেন।